সংস্কারের নামে অযথা সময়ক্ষেপণ চায় না বিএনপি: প্রিন্স

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪০ পিএম

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, এ সরকারের ছয় মাস চলে গেছে, কিন্তু দৃশ্যত কোনো কিছুই হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্য অসহনীয়ভাবে বেড়ে যাচ্ছে, চারদিকে চাঁদাবাজি, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই হচ্ছে। খুন রাহাজানি বেড়ে যাচ্ছে। এগুলো কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, খুন এসব প্রশাসনকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
তিনি বলেন, সরকারকে বার্তা দিতে চাই, ধীরে ধীরে ছয় মাস পার হয়ে গেছে। আমরা এই সময় কোনো কথা বলি নাই। আমরা বলেছিলাম যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিন। তিন মাসের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়া যায় কিন্তু আমরা তা বলি নাই। এখন আমাদের দাবি চলতি বছরের ডিসেম্বর মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। বিএনপি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায়। সংস্কারের নামে আর অযথা সময়ক্ষেপণ চায় না বিএনপি।
সোমবার বিকালে নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় পুরাতন কালেক্টরাল প্রাঙ্গণে এক সমাবেশে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এসব কথা বলেন।
ডেভিল হান্ট প্রসঙ্গে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শয়তানকে ধরার যে এই অপারেশন ডেভিল হান্ট, তা এত দিন পরে কেন? আমাদের প্রশ্ন কেন ৮ আগস্ট এই সরকার কায়েমের পর থেকে এই ডেভিল হার্ট হলো না? কেন ওবায়দুল কাদেরকে ধরা হলো না? কে তাকেসহ অন্যান্য শয়তানদের পালিয়ে যেতে দেওয়া হলো? কেন সন্ত্রাসী গডফাদার, দুর্নীতিবাজ লুটেরাদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে দেওয়া হলো? এখনো যারা প্রশাসনে আওয়ামী দোসর রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না?
ভারত প্রসঙ্গে এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন ভারতকে যা দিয়েছি ভারত তা চিরদিন মনে রাখবে। আর এখন এর প্রতিফলন দেখছি। ভারতের নেতাদের মুখে শুনেছি ‘হাসিনাজী ভারতকে যা দিয়েছেন, ভারত চিরদিন নাকি হাসিনাকে মনে রাখবে! খুব ভালো কথা। তাদের প্রেম হাসিনার সঙ্গে, বাংলাদেশের সঙ্গে না। ভারত এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। ভারতে উচিত হাসিনাকে ফিরিয়ে দিয়ে বন্ধুত্ব বজায় রাখা।
তিনি বলেন, একটি জরিপে উঠে এসেছে ভারতের ৫৫ শতাংশ মানুষ চায় হাসিনার বিচার হোক। তাকে বাংলাদেশের কাছে ফিরিয়ে দিতে চায়। তিনি যে গণহত্যাকারী তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। জাতিসংঘের একটি দল যে তদন্ত করতে এসেছিল সেখানেও উঠে এসেছে শেখ হাসিনা গণহত্যাকারী।
আমেরিকায় প্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সম্বন্ধে বিএনপির এই নেতা বলেন, সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমেরিকা গিয়েছিলেন। তাদের দেশের লোকেরা তাকে স্বাগত জানাবে এটাই স্বাভাবিক; কিন্তু ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউজের সামনে শেখ হাসিনার পোষ্যপুত্ররা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ব্যানার নিয়ে ‘ওয়েল কাম মোদিজী’ বলছেন। আমার তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করে আপনারা কী বাংলাদেশের নাগরিক? না ভারতে নাগরিক? আজকে বাংলাদেশে তাদের নাগরিকত্ব এ জন্য চলে যাওয়া উচিত।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় রাখা, বাজার সিন্ডিকেট ভাঙা, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রা পথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করা, রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা অপচক্রান্তের মোকাবেলাসহ বিভিন্ন দাবিতে জেলা বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে।
এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বিশিষ্ট অর্থোপেডিকস চিকিৎসক মো. আনোয়ারুল হক। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম হিলালী।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছাড়া বক্তব্য দেন- জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ, সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এটিএম আবদুল বারী, সদস্য আরিফা জেসমিন, সদস্য অধ্যক্ষ রাবেয়া আলী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আশরাফ উদ্দিন খান, অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান খান, জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মাহফুজুল হক, তাজেজুল ইসলাম ফারাস সুজাত, এসএম মনিরুজ্জামান দুদু, জেলা মহিলা দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট রোখসানা কানিজ চৌধুরী পলমলসহ বিএনপির ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।
এদিকে বেলা ১২টা থেকে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ৯টা থেকে জেলার ১০টি উপজেলার বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের প্রচুর সংখ্যক নেতাকর্মী খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নির্ধারিত স্থানে জড়ো হন। একপর্যায়ে সমাবেশ স্থল ধারণক্ষমতার বাইরে চলে যায়।
বেলা সোয়া ১২টা থেকে অনুষ্ঠান শুরু হলে দেখা যায় হাজার হাজার নেতাকর্মী জায়গা না পেয়ে অনুষ্ঠানস্থল লাগোয়া প্রধান সড়কে অবস্থান নিতে। মানুষের চাপে একপর্যায়ে ছোটবাজার এলাকা থেকে মোক্তারপাড়া পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে পর্যন্ত রাস্তায় যানবাহন চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। ট্রাফিক বিকল্প রাস্তা হিসেবে শহিদ মিনারের পেছন দিয়ে ডিসি বাংলো হয়ে মোক্তারপাড়া মাঠ দিয়ে ব্যবস্থা করে। এতে তীব্র যানজটসহ পথচারীদের কিছুটা বেগ পোহাতে হয়। ঘণ্টা চারেক পর সমাবেশ শেষ হলে অবশ্য যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির একজন পদবিধারী নেতা বলেন, রাস্তায় কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় আমরা দুঃখিত। সমাবেশটি মোক্তারপাড়া মাঠে করা গেলে ভালো হতো। এত নেতাকর্মীর সমাগম হবে তা আমরা বুঝতে পারিনি। ভবিষ্যতে এমন সমাবেশ করা হলে তা মাথায় রাখা হবে।