মির্জা আব্বাস
চিহ্নিত ডেভিলদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বিশেষ একটি রাজনৈতিক দল

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:০৭ পিএম

ছবি: যুগান্তর
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলছেন, আজকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন দু-একটি রাজনৈতিক দল ও দুএকজন রাজনৈতিক ব্যক্তি। যারা ৫ আগস্টের আগে তৎকালীন খুনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছিল, আপনাকে ছাড়া বাংলাদেশ চলবে না, আপনাকে আমরা চাই। কবিতার ভাষায় বলেছিল, জীবনেও চাই, মরনেও চাই, অনেক অসম্ভবের সঙ্গেও আপনাকে (শেখ হাসিনা) চাই। আবার বলেছিল আমৃত্যু তোমাকে চাই, মৃত্যুর পরেও তোমাকে চাই, মৃত্যুর পরেও তোমার সঙ্গে থাকব, খেয়াল আছে। যদি কারও খেয়াল না থাকে দয়া করে টেলিভিশনে ভিডিও ফুটেজ দেখেন সবগুলো ডেভিল, সবগুলো শয়তানকে পেয়ে যাবেন।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এক কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা আব্বাস বলেন, যাদের উস্কানিতে চার-পাঁচ
আগষ্টে সারা বাংলাদেশে ছাত্র জনতার ওপরে গুলি চালানো হয়েছিল, যাদের উস্কানিতে আজকে
দ্রব্যমূল্য বেড়ে চলেছে, যাদের উস্কানিতে আমার হাজার হাজার মা বোনের বুক খালি হয়েছে।
সেই উস্কানিদাতাদের ধরছেন না। কারণ ওদের সবার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ফেলেছে বিশেষ একটি
রাজনৈতিক দল। যারা বারবার আমাদেরকে (বিএনপি) দোষারোপ করে। নিজের দোষ ঢাকতে গিয়ে বিএনপিকে
দোষারোপ করছে। এখন থেকে আমাদের কাজ হবে ওই ধরনের ভণ্ড রাজনৈতিক দলগুলোকে, যারা লেবাস
পরে অন্য দলকে দোষারোপ করার চেষ্টা করছে তাদেরকে জনগণের সামনে উন্মোচন করে দেওয়া।তাদের
প্রকৃত অবস্থা দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা।
এর আগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে
‘সদস্য নবায়ন
কার্যক্রম’এর উদ্বোধন করেন মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেন, কবিতার ভাষায় বলেছিলেন, ‘জীবনেও চাই, মরনেও
চাই, সেই ডেভিলরা তো হাতের কাছে আছে কেন ধরছেন না? একটি পত্রিকায় দেখলাম নাবিল গ্রুপ
১২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। তাকে আপনারা গ্রেফতার করছেন না। কারণ কি? কোনো একটি
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক আছে। সুতরাং তাকে ধরা যাবে না। তাই না? সবাই
শুধু বিএনপির দোষ দেন, বিএনপি এটা করেছে, বিএনপি ওটা করেছে। বিএনপি এ পর্যন্ত যতটুকু
সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে, বিএনপির ছেলেরা যতটুকু ভালো থাকার, ভালো রাখার চেষ্টা করেছে
সেদিকে আপনারা নজর দিচ্ছেন না। শুধু দেখলাম ভাঙ্গা ঢোলে বাজিয়ে দিচ্ছেন বিএনপি চাঁদাবাজি
করে, চাঁদাবাজি করে। আরে ভাই চাঁদাবাজি করলে ধরছেন না কেন? জানেন যখন ধরেন। কোনো আপত্তি
নাই সবাইকে ধরেন।
একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি ইঙ্গিত করে মির্জা
আব্বাস বলেন, নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন, কখনো বলে যাবেন না, কখনো বলে যাবেন। আবার কখনো
বলেন এটাতে যাব, কখনো বলে ওইটাতে যাব। আরে ভাই আপনাদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে মনে আছে
২০০৮ সালে বিএনপি এবং জোট নির্বাচনে গিয়েছিল। তার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের অনেক নামীদামি,
অনেক বিখ্যাত প্রখ্যাত ব্যক্তিকে প্রাণ দিতে হয়েছে ফাঁসির কাষ্ঠে। ওই রকম ভুল আর করবেন
না দয়া করে। একটি ভুল লাখ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারে। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে
কোনো তালবাহানা করবেন না। আমি সরকারকে বলছি না। আমি বলছি এই সরকারকে বিভ্রান্ত করার
জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্নভাবে নির্বাচনে বিভিন্ন কথা বলছেন। এই সরকারকে অস্বস্তি
অবস্থায় ফেলে দিচ্ছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন,
আমরা সরকারকে বলতে চাই, আপনারা ডিসেম্বরে ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচন। ডিসেম্বরে নির্বাচন
দিন। আমরা সব সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ইনশাআল্লাহ।
গণহত্যার বিচার প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস
বলেন, অনেকে বলেন নির্বাচনের আগে বিচার শেষ করতে হবে।ভাই বিচার শেষ করে নির্বাচন করবেন
এটা কি সম্ভব? তিন মাসের মধ্যে তড়িঘড়ি করে আপনারা বিচার করবেন। পারলে করেন, কোনো অসুবিধা
নেই। তিন মাসের মধ্যে বিচার করেন অবিচার নয়। বিচার করতে হবে।
মির্জা আব্বাস বলেন, যারা নির্বাচনকে ব্যাহত
করার জন্য, প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য চেষ্টা করছেন পক্ষান্তরে তারা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে
ধ্বংস করার চেষ্টা করছেন। এদেশের মানুষের কথা বলার অধিকার খর্ব করার চেষ্টা করছেন।
এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করার চেষ্টা করছেন। দয়া করে আপনাদেরকে বলব এ সমস্ত
কাজ থেকে বিরত থাকুন। সরকারকে বলব যে বক্তব্য রেখেছি এই বক্তব্যকে ফলো করুন। কার কার
কথা বলেছি, নাম বলিনি তারপরও কম বলিনি অনেকের নাম বলে দিয়েছি। আগস্টের মিটিংটা দেখেন
টেলিভিশনের ভিডিও দেখেন সব পাবেন।
তিন শ্রেণির বিষয়ে সর্তক থাকুন উল্লেখ
করে মির্জা আব্বাস বলেন, দলের সদস্য নবায়ন ও সদস্য সংগ্রহ আমাদেরকে খু্বই সাবধান হতে
হবে, সচেতন থাকতে হবে। যদি নবায়নের সময়ে দেখা যায় ওই ব্যক্তি সস্পর্কে সংগঠনবিরোধী
কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত আছে তার সদস্য পদ নবায়ন করা যাবে না। দলের দুর্নাম হচ্ছে,
এমন কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত আছে এমন কোনো ব্যক্তিকে সদস্য নবায়ন করা যাবে না। আর
আওয়ামী লীগের কিংবা সুযোগ সন্ধানী কিছু লোক এসময়ে দলের নতুন করে সদস্য হওয়ার চেষ্টা
করবেন যারা আমাদের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না, তারা আমাদের ক্ষতিই করবে। সুতরাং তাদেরকেও
আমাদের সদস্য করা যাবে না।
তিনি বলেন, এজন্য বলতে পারেন দলের লোকের সদস্য সংখ্যা কমে যাবে। আমরা
কোয়ালিটিতে বিশ্বাস করি, কোয়ান্টিটি নয়, কোয়ালিটি চাই, ভালো লোক চাই। আমাদের হাজার
হাজার লোকের দরকার নাই। আমাদের সলিড খুব ১০টা লোক হলে চলবে।যারা দেশকে ভালোবাসবে, দলকে
ভালোবাসবে, দেশের মানুষকে ভালোবাসবে, প্রয়োজনে ঝড়ঝাপটা মোকাবিলা করবে।
রমজানকে সামনে রেখে সিন্ডিকেটদেরও তৎপরতা বেড়ে গেছে উল্লেখ করে মির্জা
আব্বাস বলেন, রমজানকে সামনে রেখে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে বা বাড়ার প্রস্তুতি চলছে। সিন্ডিকেট
তাদের কাজ করেই যাচ্ছে, সিন্ডিকেট তাদের কাজ বন্ধ করেনি। সরকারের পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু
সিন্ডিকেটের কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং এরা এই সরকারকে একটি বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেওয়ার
চেষ্টা করছে।আমরা যতই বলি এই সরকারকে সহযোগিতা করব, করছি, এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেব
না, ততই যেন সিন্ডিকেটের কাজকাম বেড়ে যায়, ততই যেন দুস্কৃতিকারীরা বেশি আশকারা পাচ্ছে।
কেনো জানি না সরকারের মধ্যে এমন সব রয়ে গেছে যারা এদেরকে আশকারা দিয়ে বড় করছে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব
হাবিব উন নবী খান সোহেল, আব্দুস সালাম আযাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল
আলম মজনু, সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবীন প্রমুখ।