কাল বৈঠক
প্রধান উপদেষ্টার কাছে যেসব দাবি জানাবে বিএনপি

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪০ পিএম

ফাইল ছবি
মে মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকার কাজ শেষ হলে চলতি বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে সমস্যা দেখছে না বিএনপি। দলটির প্রত্যাশা নির্বাচনসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেবে সরকার। আইন অনুযায়ী নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করার কথা সরকারপ্রধানের। সেজন্য এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে আগামীকাল প্রধান উপদষ্টো ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করবে বিএনপি প্রতিনিধি দল।
সেখানে জাতীয়
নির্বাচনে সরকারের অবস্থান ও স্পষ্ট রোডম্যাপ জানতে চাইতে পারে দলটি।
রোববার দুপুরে
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির একটি প্রতিনিধি
দল।
বৈঠক শেষে দলটির
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, কমিশনের সঙ্গে নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা
করেছি। সব কিছু আলাপের পর আমাদের কাছে মনে হয়েছে, আগামী মে বা জুন মাসে জাতীয় নির্বাচনের
পুরো প্রস্তুতি সম্পন্ন করবে ইসি। সেক্ষেত্রে দ্রুত নির্বাচন করতে কোনো সমস্যা দেখছি
না আমরা। তবে জাতীয় নির্বাচন কবে হবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ইসির নেই।
নির্বাচনের
সময় নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে
চাইলে তিনি বলেন, কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। যেহেতু আইন অনুযায়ী নির্বাচনের রোডম্যাপ
ঘোষণার দায়িত্ব সরকারের। তাই সোমবার (আজ) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের বৈঠক, সেখানেই
এ বিষয়ে আমাদের দাবি তুলে ধরব।
জানা গেছে,
বিএনপি প্রতিনিধি দল দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করবেন।
এছাড়া ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ সারা দেশে ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরবে।
সরকারের সহযোগিতার পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচনও চায় বিএনপি। এজন্য দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচনের
নির্দিষ্ট রোডম্যাপ জানতে চাইবে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর ইতিবাচক কোনো
সাড়া না পেলে বিএনপি দ্রুত নির্বাচন দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা নিয়ে
রেখেছে। দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশ ও জেলা জেলায় সমাবেশ করবে।
নজরুল ইসলাম
খান বলেন, ইসি সঠিকভাবে কাজ করছে। জাতীয় নির্বাচনে ৩০ লাখ নতুন ভোটার যুক্ত হবে, এটা
আগে বাদ পড়েছিল। এছাড়া ১৫ লাখ ভোটার বাদ যাবেন। কারণ, তারা মারা গেছে। তবে বিদ্যমান
তালিকায় ভোটার বাড়বে।
ইসির সঙ্গে
বৈঠক প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, তারা এই মুহূর্তে কী কার্যক্রম করছেন, জাতীয় নির্বাচনের
বিষয়ে তাদের প্রস্তুতি কি? এই বিষয়গুলো নিয়েই আমরা নির্বাচন কমিশনের সাথে মতবিনিময়
করেছি। সবকিছু আলাপের পর আমাদের কাছে মনে হয়েছে ভোটার তালিকা আপগ্রেড করে নির্বাচন
অনুষ্ঠানের বিষয়ে আগামী মে-জুনের মধ্যে তারা পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত হবেন। তবে এ ব্যাপারে
সদ্ধিান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এখন তাদের নেই। কারণ দেশের প্রচলিত সংবিধান ও আইন হলো, একটি
সরকার পদত্যাগ করলে তার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা, এটা আইন। কিন্তু এখন তো
ওই আইনে দেশ চলছে না।
তিনি বলেন, এ মুহূর্তে তাহলে পলিটিক্যাল কনসেনসাসের
ভিত্তিতে সরকারের তরফ থেকে অনুরোধ হতে হবে এবং তার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন
অনুষ্ঠান করবে। তবে আমরা এতটুকু বুঝেছি যে, যদি মে-জুন মাসের মধ্যে পূর্ণ প্রস্তুতি
থাকে তাহলে প্রাসঙ্গিক আর কোনো সমস্যা থাকলে সেটা দূর করে খুব দ্রুতই জাতীয় নির্বাচন
অনুষ্ঠান সম্ভব।
এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচনের
ঘোষণা তো তারা (ইসি) করতে পারেন না। কারণ সংবিধানের নরমাল নিয়ম অনুযায়ী সেই নির্বাচন
হচ্ছে না। যেহেতু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দায়িত্ব এখন সরকারের, তারপরে শিডিউল ঘোষণা
তো কমিশনই করবে।
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে বিএনপি সন্তুষ্ট
কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ওয়েল।
আইন অনুযায়ী তাদের যা করার কথা আমরা বুঝতে পারছি যে, তারা সঠিকভাবে সেটা করছেন।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান
বলেন, ‘সংস্কার
কমিশনের সুপারিশ নিয়ে সরকার স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করবে, সেটা করে যদি সদ্ধিানে্তর
আলোকে আইনের পরিবর্তন হয় বা বিধানের পরিবর্তন হয়, তাহলে সেটা নির্বাচন কমিশনকে মানতে
হবে।
রোববার বিকাল সাড়ে ৩টায় নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে
তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনসহ কমিশনারদের
সাথে বৈঠকে বসেন। সাড়ে ৩টা থেকে ৪টা ২২ মিনিট পর্যন্ত বৈঠকের পর বিএনপি নেতারা সভাকক্ষ
থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবদুর রহমানেল মাসুদ,
বেগম তহমিদা আহমদ এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। বৈঠকে
নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও সেলিমা রহমান
ছিলেন। নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদও ছিলেন এই বৈঠকে।