‘জুলাই বিপ্লবের শহীদ স্মারক’ মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ডা. শফিকুর রহমান
জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস বিকৃত হতে দেবে না জামায়াত
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪০ পিএম
![জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস বিকৃত হতে দেবে না জামায়াত](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2025/02/05/Jamat-amir-2py-67a3948a26327.jpg)
ছবি: যুগান্তর
জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ কোনো অপকর্ম
না করার জন্য সংশি্লষ্ট সব অংশীজনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর
আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, শহিদরা একটা বৈষম্যহীন-মানবিক সুন্দর বাংলাদেশ চেয়েছিল।
দুর্নীতি-দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ চেয়েছে। তারা চলে গেছে, আমানত আমাদের ঘাড়ে। তাদের রক্তের
দিকে একটু তাকান। তরতাজা সেই শিশু, যুবক, নারী-পুরুষের দিকে তাকান। যারা জীবন দিয়েছে,
তাদের দিকে তাকিয়ে বিপ্লবের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ এমন কোনো অপকর্ম কেউ করবেন না। যদি
করেন, শহিদদের আত্মা কষ্ট পাবে। তাদের রক্তের অপমান করা হবে। আর জীবিত শহিদ, যারা পঙ্গু
হয়ে আছে; তারা ভীষণ কষ্ট পাবে। মজলুম দেশবাসী অভিশাপ দেবে।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে
চব্বিশের রক্তস্নাত গণ-অভু্যত্থানে শহিদদের তথ্য সংবলিত ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতার শহিদ যারা' শীর্ষক স্মারক গ্রন্থের
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতের এ অনুষ্ঠানে
গণ-অভু্যত্থানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষক, সাংবাদিক, শহিদপরিবার
ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এ সময় জুলাই-আগস্টে গণ-অভু্যত্থানের ওপর একটি
ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রকাশ করা হয়। জাতীয় প্রেস ক্লাব ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম,
খুলনা, কুমিল্লা, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট প্রেস ক্লাবে একযোগে ‘জুলাই বিপ্লবের শহিদ স্মারক’
মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের কাছে মুক্তিকামী
সবাই ছিলেন মজলুম। ২৪-এর গাজি ও শহিদ পরিবারগুলোর হতাশা কিছুটা দূর করতে অসম্পূর্ণ
রেখেই শহিদ স্মরণিকা আজ প্রকাশিত হলো। এ স্মরণিকা পূর্ণাঙ্গ করার কাজ চলমান থাকবে।
বৈষম্য, দুর্নীতি ও দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবার মধ্যে জুলাই বিপ্লবের চেতনা
সমুন্নত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আবু সাঈদের শাহাদত ছিল এই আন্দোলনের
বিশাল একটা টার্নিং পয়েন্ট। একটা গরিব পরিবারের ছেলে দুনিয়ায় নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল।
সে জেনেশুনে শহিদ হওয়ার জন্য ডানা মেলেছিল। তার পথ ধরে বাকি শহিদরা বলেছিল
আবু সাঈদ আমাদের ভাই, যে শাহাদতের সিঁড়িতে সে পা রেখেছে, আমরাও সেই সঁিড়িতে
পা রাখতে চাই। তাদের এ বক্তব্য প্রমাণ করে জাতি
কতটা নির্যাতিত, মজলুম ছিল।
জুলাই বিপ্লবে শহিদদের নিয়ে স্মারক প্রকাশ প্রসঙ্গে
জামায়াত আমির বলেন, যে কাজে জামায়াত হাত দিয়েছে, এ কাজের দায়িত্ব সবার। আমরা এই কাজের
কোনো ক্রেডিট নিতে চাই না। আমরা শুধু একটা নৈতিক দায়িত্ব পালনের চষ্টো করেছি। আমাদের
চেয়ে আরও সুন্দর করে এই কাজ করতে সরকারসহ অন্যদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি। তাহলে আমাদের
এই কাজটা সার্থক হবে। সেক্ষেত্রে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আসুন শহিদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন
করি। একটি সাম্য-সেৌন্দর্যের বাংলাদেশ, বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ, সর্বোপরি
একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য এগিয়ে যাই।
তিনি আরও বলেন, কিছু ইতিহাস মানুষের জন্য হয় আনন্দের,
কিছু হয় বিষাদের আর কিছু হয় গেৌরবের। বিশেষ করে জাতিকে মুক্ত করার আন্দোলনে যারা জীবন
দেন, অতীতেও এরকম যারা দিয়েছেন, সাতচলি্লশ, বায়ান্ন, একাত্তর এবং সর্বশেষ চব্বিশে যারা
জীবন দিয়েছেন, তাদের ইতিহাস হচ্ছে গেৌরবের ইতিহাস। শহিদপরিবারগুলোর জন্য কান্নার ইতিহাস।
দেশবাসীর জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের ইতিহাস। চব্বিশের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত এরকম
একটা আয়োজন আমরা কেন কোনো বিরোধীদল বা কোনো বিশষ্টি ব্যক্তিরা কল্পনাও করেনি।
জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে
অনুষ্ঠানে দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের
আমির মাওলানা মামুনুল হক, যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় দলের
চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাগপা নেতা রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের
মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, শহিদ আলিফের বাবা গাজীউর রহমান, ঢাকা
মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন,
দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম প্রমুখ
বক্তব্য দেন।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, দ্বিতীয় স্বাধীনতা
জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস যাতে কখনো কেউ মুছে দিতে না পারে, সেজন্য বাংলাদেশ জামায়াতে
ইসলামী শহিদদের স্মরণিকা প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়ে এই স্মারক প্রকাশ করছে।
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান
আযাদ বলেন, জামায়াতে ইসলামী এদেশে ইসলামি সমাজ বিনির্মাণের মাধ্যমে সব নাগরিকের আশা-আকাঙ্ক্ষা
পূরণে কাজ করছে। জামায়াতে ইসলামী ইতিহাস রচনা করে, ইতিহাস মুছে দিতে দেয় না, দিবে না।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, জামায়াতে ইসলামী জুলাই
বিপ্লবের শহিদ স্মারক প্রকাশের মাধ্যমে এক মহান দায়িত্ব ও দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত স্থাপন
করেছে। এটি রাষ্ট্র করার কথা থাকলেও রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের সেদিকে মনোযোগ দেখা
যায়নি।
যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, অত্যন্ত
পরিতাপের বিষয়, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও আজ অবধি মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের নিয়ে কোনো স্মারকগ্রন্থ
প্রকাশিত হয়নি। সংখ্যা নিয়ে চলছে বাগাড়ম্বর। জুলাই বিপ্লবের শহিদ স্মারক প্রকাশ করা
রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল, রাষ্ট্র সেটি করতে পারেনি। সেই কাজটি করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ
জামায়াতে ইসলামী।
গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের
নির্দেশে জামায়াতে ইসলামীর বহু নেতাকে হাসিনা সরকার হত্যা করেছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের
ন্যায়বিচার হওয়া দরকার।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক সংগ্রামের
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাজ্জাদ রহমান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের
সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, ইয়াসিন আরাফাত, ঢাকা মহানগরী
দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মো. দেলাওয়ার হোসেন, কামাল হোসাইনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার
মানুষ।