সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা আমি সমর্থন করছি না: মান্না
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:২৩ পিএম
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রস্তাবটি সুন্দর হলেও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এটিকে আমি আপাতত সমর্থন করছি না বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গণশক্তি
সভা আয়োজিত ‘শাসন ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন ও নির্বাচন’—শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই
মন্তব্য করেন।
মান্না বলেন, ‘যে স্বৈরাচারকে এত কষ্ট করে লড়াই করে ফেলে দিয়েছি, সেই
স্বৈরাচারের ভোটের হার এখনো অনেক বেশি। সংখ্যানুপাতিক হারে ভোট হলে তারা অনেক বেশি
এগিয়ে থাকবে। তা ছাড়া ওই দল যদি ভোট করার সুযোগ পায়, তাদের পদত্যাগ বিষয়ে বিতর্ক হতে
পারে। কিন্তু সরকার বলছে না, আমরা নিষিদ্ধ করব না। নিষিদ্ধ যদি না করেন, তাহলে তারা
নির্বাচন করবে না কেন।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি আরও বলেন, ‘সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন প্রস্তাবটি
খুবই সুন্দর। আমার জন্য বেশি সুন্দর, কিন্তু সমগ্র জাতির জন্য নয়। এতে আওয়ামী লীগের
যদি ৪০টা এমপি আসে, তারপর আমি এমপি থাকতে পারব কিনা সন্দেহ আছে। ’
তারা বলবে, জনগণের রায় আমাদের পক্ষে, তুমি কে? কয়টা ভোট পেয়েছ তুমি?
তোমার কয়টা এমপি আছে?’
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কর্মসূচির বিষয়ে মান্না বলেন, ‘গত পরশু এবং গতকালও
আওয়ামী লীগের লোকজন লিফলেট বিতরণ করেছে। কীভাবে করতে পারল তারা? আমাদের পুলিশ কী করেছে?
তারপর দেখলাম, আমাদের প্রশাসনের কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলন করে বলছেন, এরপর কেউ করলে
তাকে অ্যারেস্ট করা হবে। তারা তো ঘোষণা দিয়েছে ১৫ দিন আগে, ১৫ দিন ধরে আপনারা কি করলেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার এই প্রশাসন এখনো তৈরি করতে
পারেনি। আমরা সফলতা কামনা করছি, কিন্তু তারা সফল হতে পারছে না। তারা যদি সফল হতে পারত,
তাহলে এই ঘটনা ঘটতো না।’
নির্বাচনের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে মান্না বলেন, ‘আপনি নিশ্চয়ই নৃশংসভাবে আমাদের দেশের শিশু-কিশোর, শ্রমজীবী মানুষদের যে নির্বিচারে গুলি করে মারা হয়েছে সেটার বিচার চান। আমিও এর বিচার চাই। কিন্তু আপনি বললেন, বিচার করার আগে ভোট হবে না। বিচার করতে কত দিন লাগবে? আপনি আদালতকে বলতে পারবেন, বিচার শেষ করতে হবে। তাহলে তো আদালতে হস্তক্ষেপ করা হয়। কিন্তু আদালত যদি মনে করে, বিচার করতে আরও সময় লাগবে এবং বিচার করতে যদি পাঁচ বছর লাগে, তাহলে কি পাঁচ বছর পরে নির্বাচন করবেন? সম্ভব? দ্রব্যমূল্য দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছে, এত দিনেও সরকার কি কিছু করতে পেরেছে? বাস্তবতা মেনে নিতে হবে, শুধু আবেগ দিয়ে চললে আমাদের সমস্যা সমাধান হবে না।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাড. ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কেউ নিজ ইচ্ছায় বসেনি, তাদেরকে সরকারে বসানো হয়েছে। অথচ কোনো কোনো দল এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে!
কেন এসব হুমকি-ধমকি প্রশ্ন রেখে জামায়াত নেতা বলেন, এই সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে আসেনি, রাখবে না, রাখতে পারবেও না। এই সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের চেষ্টা করছে। তবে শুধু সংস্কার নয় প্রয়োজন গণহত্যার বিচার কাজও সম্পন্ন করা। রাজনৈতিক সরকার গণহত্যার বিচার রাজনৈতিক বিবেচনায় করবে, ফলে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবে না এবং বিচার জনমনে প্রশ্নবৃদ্ধ হবে। এজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল দায়িত্ব ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থপাচার এবং গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ও মদদদাতাদের বিচার করা এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করলে বিপ্লব ব্যর্থ হবে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণমুক্তি জোটের সভাপতি ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ, লে. জেনারেল
(অব.) আমিনুল করিমসহ প্রমুখ।