
প্রিন্ট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৩৯ এএম
শিরীন শারমিন কোথায়, ঘরে বসে আঙুলের ছাপ দেওয়ার অভিযোগ
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪০ পিএম

ফাইল ছবি
আরও পড়ুন
আত্মগোপনে রয়েছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। ছাত্রজনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দুপুরে সংসদ ভবন এলাকায় নিজের সরকারি বাসভবন থেকে বেরিয়ে যান তিনি। এ সময় স্পিকারের জন্য বরাদ্দ গাড়ি ব্যবহার করেননি শিরীন। সংসদ সচিবালয়ের পরিবহণ পুল থেকে গাড়ি পাঠানো হলেও তিনি ওই গাড়ি ব্যবহার করেননি।
শিরীনের সঙ্গে ছিলেন স্বামী ও কনিষ্ঠ সন্তান। তবে সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে তিনি কোথায় গেছেন তা জানা নেই তাদের। তিনি আত্মগোপনে থাকাবস্থায় গত ৩ অক্টোবর ই-পাসপোর্ট পেতে আবেদন করেন। গত ১০ অক্টোবর ঘরে বসে আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
শিরীন শারমিন ছিলেন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার খুবই আস্থাভাজন। ২০০৯ সালে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য হিসেবে জাতীয় সংসদে আসেন শিরীন শারমিন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে ২০১৩ সালে ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম নারী স্পিকার নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছেড়ে দেওয়া রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসন থেকে উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসেন স্পিকার শিরীন শারমিন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার শ্বশুরবাড়ির এলাকা পীরগঞ্জের আসনটি নোয়াখালীর মেয়ে শিরীনকে ছেড়ে দেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও এ আসনে শিরীন শারমিনকে প্রার্থী করে আওয়ামী লীগ।
টানা চারবারের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে আছেন। রাজধানী ঢাকার একটি অভিজাত এলাকায় আত্মগোপনে আছেন তিনি।
স্বামী ফার্মাসিউটিক্যাল কনসালট্যান্ট সৈয়দ ইশতিয়াক হোসাইন এবং ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড কলেজের আইবি কোর্সে অধ্যয়নরত ছোট ছেলে সৈয়দ ইবতেশাম রফিক হোসাইন তার সঙ্গে আছেন। দুই সন্তানের মা ড. শিরীন শারমিনের বড় মেয়ে লামিসা শিরীন হোসাইন যুক্তরাষ্ট্রে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট পদে চাকরি করছেন। বড় মেয়ে ছাড়া বাকি সবাই এক ছাদের নিচে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারিতেই আছেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণঅভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নেন। ওইদিন দুপুরেই একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে কোনো ধরনের প্রটোকল ছাড়াই স্বামী ও সন্তান নিয়ে সংসদ ভবনের বাসভবন থেকে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যান ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এই ঘটনার ২৭ দিনের মাথায় গত ২ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত স্থান থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি। ওইদিনই তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে দেওয়া গেজেটে বলা হয়, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৭৪(২)(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতির কাছে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্পিকারের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগপত্রটি রাষ্ট্রপতি আজ গ্রহণ করেছেন এবং আজই তা কার্যকর হয়েছে।’ সংবিধানের ৭৪ (২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পদ কখন শূন্য হয়।
আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ৩ অক্টোবর স্বামী সৈয়দ ইশতিয়াক হোসাইনসহ ঢাকার আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অফিসে সাধারণ ই-পাসপোর্ট পেতে আবেদন করেন তিনি। পরে সেখানে না গিয়ে গত ১০ অক্টোবর ঘরে বসে তাদের আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
অথচ ই-পাসপোর্ট আবেদনের নিয়মে বলা আছে, সবকিছু ঘরে বসে করতে পারলেও নির্ধারিত তারিখে অসুস্থ এবং যারা শারীরিকভাবে অক্ষম, তারা ছাড়া আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ দিতে আবেদনকারীকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, অদৃশ্য মহলের ইশারায় ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর বেলায় এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে।
যদিও এসব ঘটনা ছাপিয়ে রাজনীতির অন্দরমহলে একটি প্রশ্ন সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে বেশ কিছুদিন যাবৎ। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এখন কোথায়, কী অবস্থায় আছেন-এ নিয়ে নানা মহলে কৌতূহল কাজ করছে। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
গত ২৭ আগস্ট স্বর্ণশ্রমিক মুসলিম উদ্দিনকে হত্যার অভিযোগে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। রংপুর শহরের পূর্ব গণেশপুর এলাকার বাসিন্দা মুসলিম উদ্দিনের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলাটি তদন্ত করছে রংপুর মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এ বিষয়ে আরএমপির উপকমিশনার (ক্রাইম) শিবলী কায়সার বলেন, ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী হত্যা মামলার পলাতক আসামি। পুলিশ তাকে খুঁজছে, সন্ধান পেলেই তাকে গ্রেফতার করা হবে।