জামায়াত আমিরের সেই বক্তব্যে যা বললেন মেজর হাফিজ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১৭ পিএম
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা ভেবেছিলাম এখন একটা সুযোগ এসেছে; এই সুযোগে তারা (জামায়াত ইসলামী) একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইবে। সেটি না করে তারা একাত্তরে তাদের ভূমিকাকে জাস্টিফাই করছে এবং দেশপ্রেমিক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল কর্তৃক ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধই জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অহংকার’ শীর্ষক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আজকে গণঅভ্যুত্থানকে স্বাধীনতার ওপরে স্থান দেওয়ার প্রচেষ্টা করছে একটি মহল। স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা করতে পারি না আমরা। সবার ওপরে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, চিরকাল এভাবেই থাকবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করতে দেব না। মুক্তিযুদ্ধ বিভক্ত হবে এটাও আমরা আশা করি না।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, কিছুদিন আগে একটি বক্তব্য আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- এদেশে দেশপ্রেমিক শুধু সামরিক বাহিনী এবং জামায়াতে ইসলামী। এই বক্তব্যে আমরা আহত হয়েছি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা একটি বাহিনী। জনগণের বাহিনী হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশকে স্বাধীন করেছে। এই বাহিনী গড়ে তুলেছেন মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে তৎকালীন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ইপিআর এর সৈনিক-অফিসাররা।
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কারো সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নাই, তারা দেশপ্রেমিক নাকি দেশপ্রেমিক না। তাদের একাত্তরের ভূমিকা, বর্তমান ভূমিকা প্রত্যেকটি ভূমিকার সাক্ষ্য দেয়, তারা সবসময় জনগণের পাশে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে জামায়াতে ইসলামীর বক্তব্যে আমি অবাক হয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা ভেবেছিলাম এখন একটা সুযোগ এসেছে, এ সুযোগে তারা একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। সেটি না করে তারা একাত্তরে তাদের ভূমিকাকে জাস্টিফাই করছে এবং দেশপ্রেমিক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
মেজর হাফিজ বলেন, শেখ হাসিনাকে ভারত দেশে পাঠাবে এ আশায় যখন আমরা বুক বেঁধেছি, এখন দেখা গেল তার ভিসার মেয়াদ আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। অর্থাৎ শেখ হাসিনাকে তারা দেশে আশ্রয় দেবে এবং বাংলাদেশকে তারা আনস্টেবল করার জন্য, দেশে নাশকতা সৃষ্টি করার জন্য তারা (ভারত) তাকে (শেখ হাসিনা) ব্যবহার করবে। এটি করলে তাদের সঙ্গে আমাদের আর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখার অবকাশ থাকবে না।
কিংস পার্টির ভবিষ্যৎ ভালো হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি, এ দেশে একটি কিংস পার্টি গঠন হতে যাচ্ছে। কিংস পার্টির ভবিষ্যৎ আগেও ভালো ছিল না, ভবিষ্যতেও ভালো হবে না। জুলাই আগস্টে যে ছাত্র নেতারা আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের সেই সংগ্রামের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। তাদের আবারও অভিনন্দন জানাই; কিন্তু আগামী দিনে আপনারা কোনো কিংস পার্টি করার চেষ্টা করবেন না।
তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দল যেভাবে দেশপ্রেমিক হওয়ার চেষ্টা করছে, দেশপ্রেমিক হোন, জনগণের কাছে যান। জনগণের কাছে আপনাদের কী স্ট্যান্ডিং সেটি নির্বাচন না হলে তো পরীক্ষা হবে না। আপনারা মনে করেছেন, এতদিন সাবালক হয়েছেন একাই নির্বাচন করতে পারবেন। এখন আর বিএনপির প্রয়োজন নাই। মোস্ট ওয়েলকাম। আমরা তাকে স্বাগত জানাই। একটি রাজনৈতিক দলের সে অধিকার আছে সে এককভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। আমরা আশা করবো আমরা আগামী দিনেও ঐক্যবদ্ধ থাকতে চাই। আমাদের নেতা তারেক রহমানের মূল সুর হচ্ছে- আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ থাকি। এখন স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের অপকর্মের কথা ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। এখন বিএনপি জামায়াতের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ হয় কিনা এটা দেখার জন্য বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন মহল রয়েছে। আমি বলতে চাই, বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। আমরা কারো ছোটখাটো কথায় কিছু মনে করি না। নির্বাচন দিতে যত দেরি হবে, শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্র করতে তত সুবিধা হবে।
নির্বাচন নিয়ে মেজর হাফিজ বলেন, আগামী নির্বাচনের কথা বললেই অনেক উপদেষ্টার মুখটা কালো হয়ে যায়। আমরা যখন নির্বাচনের কথা বলি তখন যেন তারা অসন্তুষ্ট হয়ে যায়। আজকে জনগণকে এত কেন ভয়? জনগণ ভোট দিবে এটা আপনাদের আতঙ্কের কারণ কেন হয়েছে? এসব এলিটজম ছাড়েন। আমরা চাই জনগণের মতামতের ভিত্তিতে এই রাষ্ট্র পরিচালিত হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, আওয়ামী লীগের দোসররা এখনো বিভিন্ন জায়গায় বসে আছে। সচিবালয়ে বসে আছে। চিনি, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের যে সিন্ডিকেট আওয়ামী লীগের আমলে করেছিল তাদের একজনকেও এখনো আইনের আওতায় আনতে পারেননি। সচিব, ডিসি, এসপিরা এখনো ডক্টর ইউনূসের ঘাড়ে বসে আছে। সচিবালয়ে কেন আগুন? এগুলো এখনো উদঘাটন করতে পারেননি কেন?
বিরোধী দলের সাবেক এই চিফ হুইপ বলেন, দেশে এত ডিজিএফআই, এত এনএসআই, এত গোয়েন্দা সংস্থার লোক তারপরও ইউনূস সরকারের আমলে কেন ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে পারছে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা আপনাদের সমর্থন দিয়েছি। সমর্থন দিব। তবে এ সমর্থন কত দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে আমরা জানি না। তাই যারা কথাবার্তা বলছেন। ভেবেচিন্তে বলেন ষড়যন্ত্রকারীদের সাহায্য করবেন না। এসব কথা বলে নির্বাচনকে বিলম্বিত করছেন। দয়া করে এসব কথা বন্ধ করুন।
এ সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আরও বক্তৃতা করেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামসহ মুক্তিযোদ্ধা দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।