ছাত্র মজলিসের আহ্বানে এক টেবিলে ছাত্রদল-বৈষম্যবিরোধী-ছাত্রশিবির
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২৫ পিএম
মতবিনিময় সভায় ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ ২০ ছাত্রসংগঠন। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের আহ্বানে মতবিনিময় সভায় ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ ২০ ছাত্রসংগঠন অংশ নিয়েছে। এ সময় তারা ছাত্ররাজনীতির সংস্কার, যৌক্তিক সময়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচন, জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকা, শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন।
শনিবার রাজধানীর ছাত্র মজলিস মিলনায়তনে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ‘বৈষম্যহীন ক্যাম্পাস ও আগামীর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সভা হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ রায়হান আলী।
এ সময় রায়হান আলী বলেন, ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সব আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রসংগঠন তথা ছাত্ররাজনীতির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল, তাই ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নয় এটার উল্লেখযোগ্য সংস্কার প্রয়োজন, যেটা ছাত্ররা গ্রহণ করবে। বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের লাঠিয়াল বাহিনী ছাত্রলীগের হত্যা, ধর্ষণ, হলে সিট বাণিজ্যের কালচার, আবরার হত্যা—ইত্যাদি ঘটনাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি হিসেবে বিবেচনা করছে। আমরা সেই অপরাজনীতি দূরে রেখে বৈষম্যহীন ক্যাম্পাস গড়তে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একমত হয়েছি- আমরা ক্যাম্পাসে সহাবস্থান চাই, কেউ কাউকে বিতাড়িত করবে এমন নয়। আমরা প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি চাই, প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়। প্রত্যেক ছাত্রসংগঠনের নীতি থাকবে তবে প্রত্যেকে জাতীয় স্বার্থে এক থাকব।’
তিনি আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সবাই ভূমিকা রেখেছে। একটি দলই এটা করেছে এটা থেকে বেরিয়ে এসে সবাই মিলে গণঅভ্যুত্থান সফল করেছি এটা স্বীকার করতে হবে। আগামীর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সব ছাত্রসংগঠনকে নিয়ে একটি ছাত্র কাউন্সিল করা প্রয়োজন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বসার বিষয়টি উল্লেখ করে রায়হান আলী বলেন, ‘ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার মতবিনিময় সভা প্রয়োজন। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা আলাপ-আলোচনা করছেন তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বড় ভূমিকা ছাত্রদের। তাই তাদের প্রতিনিধি অর্থাৎ ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বসতে চাই। প্রধান উপদেষ্টাকে বলতে চাই, আমরা কেমন বাংলাদেশ চাই, আমাদের কথা শুনুন। এরপর আপনি নতুন বাংলাদেশ করুন।’
সংবাদ সম্মেলনে রায়হান আলী আরও বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থা পুনর্গঠন প্রয়োজন। সরকার অনেকগুলো কমিশন করেছে তবে শিক্ষা নিয়ে কোনো কমিশন করা হয়নি। আমরা অতিদ্রুত শিক্ষা কমিশন করার দাবি জানাই। আর ছাত্রসংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যতদ্রুত সম্ভব এটা দিতে হবে তবে যৌক্তিক সময়ে এটি দিতে হবে। ছাত্রসংসদ নির্বাচনে কাউকে বাদ রাখা যাবে না।
এ ছাড়া ফ্যাসিবাদের বিচার নিশ্চিত করা এবং নিহত এবং আহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানান তিনি।
সভায় অংশ নিয়েছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম, ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মিনহাজ আহমেদ প্রিন্স ও প্রচার সম্পাদক শরীফ প্রধান শুভ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য রফিকুল ইসলাম আইনী, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামীন মোল্লা, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সহসভাপতি মুনতাসির আহমাদ; গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি মাসুদ রানা জুয়েল, খেলাফত ছাত্র মজলিসের সভাপতি কামাল উদ্দীন, ছাত্র জমিয়তের কেন্দ্রীয় সভাপতি খালেদ মাহমুদ, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম, জাতীয় ছাত্র সমাজের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আলম বাঁধন, জাগপা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র সরকার, গণতান্ত্রিক ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কাজী কামরুল হাসান, ছাত্র ফোরামের সভাপতি মো. সানজিদুর রহমান শুভ; ভাসানী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্র মিশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাকিল হাসনাত, বাংলাদেশ মুসলিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নূর আলম, ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মোল্লা রাহমতুল্লাহ, ছাত্র মিশনের সেক্রেটারি নাঈমুল ইসলাম, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সভাপতি আব্দুল্লাহ মেহেদী দীপ্ত, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র আন্দোলনের সেক্রেটারি জেনারেল আশিক আল হাবিব প্রমুখ।
এর আগে ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর কাঁটাবনের গ্লোরিয়াস সেন্টারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে ২৮টি ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে সেখানে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কিংবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।