প্রশ্ন এবি পার্টির
আন্দোলনের মিত্রদের কণ্ঠে কেন এত অনৈক্যের সুর
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৮ পিএম
আন্দোলনের মিত্রদের কণ্ঠে কেন এত তাড়াতাড়ি অনৈক্য ও বিভক্তির সুর সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) নেতারা।
তারা বলেন, মাত্র তিন মাস আগেও যেসব ছাত্র একতাবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন, ঢাল হয়ে একে অপরের জীবন রক্ষা করেছেন, তারা কেন আজ হিংসা হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে পরস্পরের রক্ত ঝরাচ্ছেন? কেন রাজপথে নেমে প্রতিদিন সহিংস আন্দোলন করতে হচ্ছে অধিকারবঞ্চিতদের?
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু এসব প্রশ্ন তোলেন। এতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন দলের আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার।
এবি পার্টি সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, গত কয়েক মাসের সংঘাত, সংঘর্ষ, অস্থিরতা ও গণ-অভ্যুত্থানের মিত্রদের বিভক্তির দায় অন্তর্বর্তী সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার ও দেশবাসীর উদ্বেগ দূর করার আহ্বানজানান তিনি।
তিনি বলেন, হাজারো ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে একটি সফল গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকার আন্দোলনে সম্পৃক্ত সব পক্ষের ঐক্য রক্ষার ব্যাপারে শুরু থেকেই উদাসীন।
দ্রব্যমূল্যরে ঊর্ধ্বগতিতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উদ্বেগ আমলে নেওয়া হচ্ছে না। আহত সংগ্রামীরাসহ প্রতিদিন রাজপথে নেমে আসতে হচ্ছে অধিকারের দাবিতে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে একটি ভালো সমন্বয় টিম তৈরি করে এসব আন্দোলন ও দাবি দাওয়া টেবিলে বসেই সমাধান করা যেত। বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি, দখলদারিত্বের যে অভিযোগ-তার কোনো সঠিক সুরাহা হচ্ছে না।
তুচ্ছ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্রদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাফিলতি এখানে অত্যন্ত সুস্পষ্ট। কয়েকটি জাতীয় পত্রিকার অতীত ভূমিকা নিয়ে সংক্ষুব্ধদের বিষয়টিকেও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিরসন সম্ভব হতো বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।
এবি পার্টি সদস্য সচিব মঞ্জু বলেন, ১৫ বছরের চরম নৈরাজ্যবাদী শাসনের অবসানের পর দেশবাসী আশা করেছিল, সব জায়গায় ধীরে ধীরে শান্তি ফিরবে। কিন্তু পতিত ফ্যাসিবাদের মদদপুষ্ট ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য বারবার চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকার সে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে কোনো আগাম পদক্ষেপ নিতে তো পারছেই না, বরং কখনো কখনো নিজের মিত্র শক্তিদের দূরে সরিয়ে তাদের ষড়যন্ত্রকারীদের দোসর বলে দায় এড়াতে চাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকারের নীতির সমলোচনা করে বলা হয়, রাষ্ট্র শাসনে কোমলতা বলে কিছু নেই। বরং ন্যায় ও ইনসাফের জন্য যথার্থতার নীতি অনুসরণই কাম্য। সর্বাত্মক জনসমর্থন, বিপ্লবের স্পিরিট, প্রভ‚ত ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব পাওয়া সত্ত্বেও ড. ইউনূসের মতো শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া জননন্দিত ব্যক্তিত্ব যদি দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে না পারেন, তাহলে তা হবে খুবই দুঃখজনক।
সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে গণ-অভ্যুত্থানের অংশীদার সব পক্ষকে অস্থিরতা পরিহার করে ধৈর্য ও সহনশীলতার ভিত্তিতে এবি পার্টির পক্ষ থেকে একটি সমঝোতা সনদ তৈরির প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। শিগগিরিই তারা বৈষম্যবিরোধী সব ছাত্র-জনতাকে নিয়ে ‘গণ-অভ্যুত্থান সনদ’ তৈরির পদক্ষেপ নেবেন বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব এবিএম খালিদ হাসান, আমিনুল ইসলাম এফসিএ, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসাইন, যুব পার্টির আহ্বায়ক শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, সহকারী সদস্য সচিব শাহ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী নাসির, মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব সেলিম খান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুলতানা রাজিয়া, শাহিনুর আক্তার শীলা, আমেনা বেগম, সুমাইয়া শারমিন ফারহানাসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।