ঢাকা-৫ আসনে বিএনপির দুগ্রুপে দ্বন্দ্ব, বিভ্রান্তিতে নেতাকর্মীরা
মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, ডেমরা (ঢাকা)
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৯ পিএম
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ঢাকা-৫ আসন এলাকায় বিএনপিতে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে নেতাকর্মীরা চরম বিভ্রান্তিতে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ ঘটনায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির হাইকমান্ড রয়েছেন শক্ত অবস্থানে। কোনোভাবেই ঢাকা-৫ নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব স্থায়ী করা যাবেনা। এ লক্ষ্যে নগর বিএনপি ও কেন্দ্রীয় বিএনপি দ্রুত সমাধান করবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ঊর্ধ্বতন নেতারা।
এদিকে পূর্বপরিকল্পনা ও ঘোষণা অনুযায়ী সংসদীয় ঢাকা-৫ আসন বিএনপির পক্ষ থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে গত শনিবার (২৩ নভেম্বর) বিক্ষোভ মিছিল করার কথা ছিল ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপির নেতাকর্মীদের। এক্ষেত্রে ওই দিন প্রস্তুতি নেওয়া বিএনপির দুই গ্রুপের পৃথক ওই কর্মসূচিতে নিশ্চিত সংঘাত হওয়ার আশংকায় বিএনপি মহাসচিবের নির্দেশে কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কার্যনির্বাহী কমিটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে বিএনপির দুই গ্রুপ ঢাকা-৫ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী নবী উল্লাহ নবী ও ঢাকা-৫ আসনের সাবেক এমপি এবং সর্বশেষ ঢাকা-৪ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিনের সমর্থকরা একই দিনে একই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ওই দিন (২৩ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নিশ্চিত সংঘাতের আশংকায় দলের হাইকমান্ড থেকে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত রাখার জন্য মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয় সংশ্লিষ্টদের।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিএনপির নেতাকর্মীরা বলেন, সংসদীয় ঢাকা-৫ আসনভুক্ত ডেমরা-যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপির নবী উল্লাহ নবী গ্রুপ ও সালাউদ্দিন গ্রুপ নিজেদের আধিপত্য ও এলাকায় শক্ত অবস্থান প্রমাণের জন্য একই দিনে ডেমরা এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও কর্মসূচির আহ্বান করে। উভয় গ্রুপের সাংগঠনিক শক্তি প্রমাণে নেতাকর্মীরাও বেশ জোরালো ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছে ওই কর্মসূচিকে ঘিরে। আর কয়েকদিন আগে থেকেই কর্মসূচি সফল করতে উভয় গ্রুপের প্রস্তুতি চলছে বেশ জোরেশোরেই। উভয় গ্রুপের এ কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনা লক্ষ্য করা গেছে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে। এ বিষয়ে উভয় গ্রুপের এমন কর্মসূচি চলমান থাকলে ঢাকা-৫ আসন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে বলে আশংকা রয়েছে দলীয় হাই-কমান্ডের। তাই রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় আগামী দিনে দলীয় গ্রুপিং নিরসনের লক্ষ্যে শনিবারের বিক্ষোভ কর্মসূচি আপাতত স্থগিত রাখার জন্য বলা হয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে।
এ বিষয়ে নবী উল্লাহ নবী গ্রুপের ডেমরা থানা বিএনপির প্রস্তাবিত সভাপতি এসএম রেজা ও প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান বলেন, আমরা ৫ আগস্টের পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে নানা কর্মসূচি চালিয়ে আসছি। আর ধারাবাহিক ওইসব কর্মসূচির অংশ হিসেবেই আমাদের শনিবারের এ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা ছিল। এদিকে আমাদের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম ও পূর্বের ডাকা কর্মসূচি বন্ধসহ পণ্ড করার জন্যই অপর গ্রুপ একই দিনে একই কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। তাই রাজনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই কেন্দ্রীয় নির্দেশে আমাদের আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত করেছি।
ঢাকা-৫ আসন বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক নবী উল্লাহ নবী বলেন, দলীয়ভাবে আমাকে ঢাকা-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে আমি বিএনপির অংশগ্রহণে বিগত জাতীয় নির্বাচনও করেছি। দুর্দিনে এ আসনের তৃণমূল বিএনপিকে আমি সুসংগঠিত রাখতে আন্দোলন সংগ্রামসহ সব কর্মসূচি পালন করেছি। নেতাকর্মীরা জেল খেটেছে, বাড়িতে ঘুমাতে পারেনি। তারপরও আমার নেতাকর্মীরা আমাকে নিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার তোপের মুখেও সংসদ নির্বাচন করেছে ঢাকা-৫ আসন থেকে। আর ৫ আগস্টের পর ঢাকা-৪ আসনের বিএনপি প্রার্থী সালাহ্উদ্দিন সাহেব নজর দিয়েছেন ঢাকা-৫ আসনের দিকে। এখানকার সুবিধাবাদী কিছু নেতাকর্মীকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে কাউন্টার কর্মসূচি দিতে চেয়েছেন, যা মূলত সংঘাত করার ইচ্ছা নিয়েই। কিন্তু আমি ও আমার নেতাকর্মীরা শান্তি শৃঙ্খলা বাজায় রেখে রাজনৈতিক সব কর্মসূচি পালন করছি। এক্ষেত্রে সালাহউদ্দিন সাহেবের ঢাকা-৫ আসন নিয়ে বিএনপিরি রাজনীতির মানসিকতা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। কারণ দলীয়ভাবে তাকে ঢাকা-৪ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। আর তার বাসস্থানও নেই ঢাকা-৫ আসন এলাকায় বা তিনি এখানকার ভোটারও নন।
এ বিষয়ে সালাহ্উদ্দিন গ্রুপের ডেমরা থানা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী মোফাজ্জল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মো. হানিফ বলেন, অনেক আগেই আমরা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে শনিবার বিকালে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দিয়েছিলাম ঊর্ধ্বতন নেতাদের নির্দেশ অনুযায়ী। অথচ আমাদের আয়োজিত এ কর্মসূচিকে কাউন্টার হিসেবে বন্ধ করার জন্যই অপর গ্রুপ একই কর্মসূচির ডাক দেয় হঠাৎ করে। তাই দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনাকে সম্মান দেখিয়ে আমরা আজকের কর্মসূচি স্থগিত করা হলো।
এ বিষয়ে ঢাকা-৫ আসনের সাবেক এমপি ও ঢাকা-৪ আসন বিএনপির মনোনীতি প্রার্থী সালাহ্উদ্দিন আহম্মেদকে মোবাইল ফোনে বার বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক রফিকুল আলম মজনু মোবাইল ফোনে বলেন, ঢাকা-৫ আসনের ডেমরা-যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় বিএনপির দুই গ্রুপের একই কর্মসূচি হচ্ছে- এমন খবর পেয়ে সংঘাত এড়াতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির পক্ষ থেকে কর্মসূচি স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছি। একই এলাকায় একই দলের দুই গ্রুপ কেনো বিক্ষোভ মিছিল করবে নিয়ম বহির্ভূতভাবে। এক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা হওয়ার আশংকায় দুই গ্রুপের এমন কর্মসূচি আর হতে দেওয়া যাবেনা ঢাকা-৫ আসনে। ভবিষ্যতে আসনটির রাজনৈতিক পরিমণ্ডল ও মেরুকরণ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে।