Logo
Logo
×

অন্যান্য

‘খুনি হাসিনা ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে জামায়াত নেতাদেরকে হত্যা করেছে’

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৬ পিএম

‘খুনি হাসিনা ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে জামায়াত নেতাদেরকে হত্যা করেছে’

আওয়ামী লীগ ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য সেনাবাহিনীসহ দেশের হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করে বলে মন্তব্য করেছেন পিরোজপুর-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাসুদ সাঈদী। তিনি বলেছেন, ‘খুনি হাসিনা ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে জামায়াত নেতাদেরকে হত্যা করেছে।’

শুক্রবার পিরোজপুরে এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দক্ষিণ লেবুজিলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ গণসমাবেশের আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী ৪নং দীর্ঘা ইউনিয়ন।

পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা তাণ্ডবের মাধ্যমে বাংলাদেশ যে পথহারা হয়েছিল, ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আবার পথ ফিরে পেয়েছে। সফল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ৫৩ বছর পর দেশ গড়ার এক সুবর্ণ সুযোগ আমাদের এসেছে। এখন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা ছাড়া অন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। একটি বৈষম্যহীন, শোষণহীন, কল্যাণময় রাষ্ট্রের যে স্বপ্ন নিয়ে ৭১ সালের বীর মুক্তিযোদ্ধারা ও ২৪ সালের বীর যোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছেন, তাদের সেই স্বপ্ন পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।

ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মাসুদ সাঈদী বলেন, সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়তে ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন বাংলাদেশকে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশকে পৃথিবীর সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে হবে।

আওয়ামী লীগের ইতিহাস হত্যার ইতিহাস উল্লেখ করে মাসুদ সাঈদী বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারের’ নামে অন্তত ৫ হাজার মানুষকে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। অন্তত এক হাজার মানুষকে গুম করেছিল। ‘আয়নাঘরে’ বন্দি করে রেখেছিল দেশপ্রেমিকদের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মূল কারণ গুম ও খুন। গুম ও খুনের মাধ্যমে দেশজুড়ে ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে তোলা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সবাই পালিয়ে গেলেও পেছনে রেখে গেছে এক রক্তাক্ত গণবিপ্লবের নির্মম হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস। এই বিপ্লবে গণহত্যার দায় আওয়ামী লীগের। নির্দয়ভাবে গুলি করে বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী। এই গণহত্যার দায় দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। 

জামায়াতে ইসলামী ৪নং দীর্ঘা ইউনিয়নের সভাপতি মাওলানা মো. মাহবুবুর রহমান সভাপতিত্বে ও সহ-সেক্রেটারি ইকবাল হোসেনের সঞ্চালনায় গণসমাবেশে মাসুদ সাঈদী আরও বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষ ও জামায়াত বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর যে নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল শত শত রাতেও বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা যেভাবে সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল, ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ সেরকমভাবে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্যাতন করেছে ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। এসব মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সন্ত্রাসী দল আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতাদের বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি হতেই হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য বিগত পতিত স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট হাসিনা এমন কোনো কাজ বাকি নাই, যেটা করেনি। রাষ্ট্র থেকে একটি দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য মিথ্যা নাটক সাজিয়ে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় নেতাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করতে চেয়েছে।

মাসুদ সাঈদী আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যেখানে থাকবে না শোষণ বঞ্চনা ও প্রতিহিংসা। জামায়াত চায়, সংবিধানের আলোকে সব ধর্মের বর্ণের মানুষকে সমান অধিকার প্রদান করতে। জামায়াতে ইসলামী কুরআন ও সুন্নাহর আইন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। জামায়াত চায়, এদেশকে সোনার বাংলাদেশে পরিণত করতে। সোনার বাংলার জন্য আগে সোনার মানুষ তৈরি করতে হবে। তাই সোনার মানুষ তৈরি করতে দেশব্যাপী জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে। তাই দেশবাসী বিশ্বাস করে নৈতিকতা, আদর্শ ও চরিত্রবান নাগরিক তৈরি করার সেরা সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।জামায়াত চায়, সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির মাধ্যমে দেশকে সমৃদ্ধিশালী ও উন্নত করতে। আমরা বিশ্বাস করি, নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা একটি প্রজন্মই দেশের উন্নয়ন এবং জাতির ভবিষ্যতকে আলোকিত করবে।

৪নং দীর্ঘা ইউনিয়ন জামায়াত কর্তৃক আয়োজিত গণসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পিরোজপুর জেলা শাখার নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রব, জিয়ানগর উপজেলার সাবেক আমির ও জেলা মজলিসে শুরা সদস্য মো. হাবিবুর রহমান, নাজিরপুর উপজেলা শাখার আমির মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা সেক্রেটারি কাজী মোসলেহ উদ্দিন, নাজিরপুর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবু সাঈদ মোল্লা, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির নাজিরপুর উপজেলা সভাপতি মাওলানা রুহুল্লাহ বেলালী, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নাজিরপুর উপজেলা সভাপতি শেখ আবু হানিফ, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর অন্যতম সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী, ঘোষকাঠি মনোরঞ্জন বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক বাবু শেখর রায়সহ স্থানীয়রা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম