নির্বাচন দিতে যত দেরি হবে সমস্যা তত বাড়বে: মির্জা ফখরুল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪২ এএম
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের রূপরেখা না দেওয়ায় আশাহত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘দ্রুত নির্বাচন হওয়াটা দেশের জন্য মঙ্গল। নির্বাচন যত দেরি হবে সমস্যা তত বাড়বে। কেন বলছি, সেটা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে। এই ধরনের সরকার যতদিন বেশি থাকে তত সমস্যা তৈরি হবে। কারণ অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচিত নয়, তাদের তো ম্যান্ডেট নেই। এর পেছনের শক্তিটা কোথায়? এজন্য এ সরকারকে চিন্তা করতে হবে, যে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো নিয়ে আমরা কথা বলছি, সেগুলো যৌক্তিক সময়ের মধ্যে করতে হবে। এমন সময় যেন না নেন, যে সময় নিতে গেলে জনগণের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হবে যে, আপনি ক্ষমতায় থেকে যেতে চাইছেন। কারণ সেসব অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে ফখরুদ্দীন-মঈনউদ্দিনের সরকার কিংস পার্টি করার চেষ্টা করেছিল, ক্ষমতায় থেকে দল করবে, মানুষ সেটা মেনে নেয়নি। তারা নির্বাচন দিয়ে পালিয়েছিল।’
সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সভার আয়োজন করে বিএনপি।
এ সময় গত দেড় দশকের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, বিএনপি ১৫ বছর ধরে আন্দোলন করলেও শেষ গোলটা করেছে শিক্ষার্থীরা। তারা স্ট্রাইকার, বুক পেতে গুলি নিয়েছে তরুণ ভ্যানগার্ডরা। ছাত্রদের সঙ্গে কখনোই দূরত্ব সৃষ্টি করা যাবে না।
দ্রুত জাতীয় নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্ররা অনেক কথা বলছে, বলবে। আমরা হিসেবি। তাই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, দ্রুত নির্বাচন জাতির জন্য জরুরি। কারণ এই ধরনের সরকার যত বেশিদিন ক্ষমতায় থাকবে, তত বেশি সমস্যা তৈরি হবে। কারণ এটা তো নির্বাচিত সরকার নয়। সংস্কারের কথা বিএনপিও বলেছে। অবশ্যই সংস্কার চাই। সেটা যৌক্তিক সময় হতে হবে। এসব না করতে পারলে সমাজ পরিবর্তন করা যাবে না।
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এই সময়ে সবাইকে সতর্ক থাকার প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, এমন কাজ করা যাবে না, যা আমাদের দেশকে অস্থিরতার দিকে নিয়ে যাবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের প্রধান উপদেষ্টা কালকে (রোববার) ১০০ দিনের পূর্তিতে একটা ভাষণ দিয়েছেন। ভালো হয়েছে। অনেকে আশান্বিত হয়েছেন, আমি একটু আশাহত হয়েছি। আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা তার সব প্রজ্ঞা দিয়ে সমস্যাটা চিহ্নিত করে নির্বাচনের জন্য একটা রূপরেখা দেবেন।’
তিনি বলেন, ‘কেন নির্বাচনের কথা বারবার বলছি। কারণ নির্বাচন দিলে আমাদের অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিএনপি ক্ষমতায় যাক না যাক, সেটা বিষয় নয়। আজকে যারা বাংলাদেশের ক্ষতি করতে চাচ্ছে, স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাচ্ছে, বাংলাদেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে, নির্বাচনের একটা রূপরেখা দিলে তারা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হবে। কারণ ওই সরকারের পেছনে জনগণের সমর্থন থাকবে। এই বিষয় আমাদের চিন্তা করতে হবে।’
সংস্কার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘সংস্কার আমরা শুধু চাই না, আমরা এটা শুরু করেছি। আপনাদের কাছে অনুরোধ, যেভাবে এগোলে সুন্দর হয়, গ্রহণযোগ্য হয়, সেভাবে আপনারা এগিয়ে যান। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো বাধার সৃষ্টি করিনি, বরং প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনাদের সমর্থন দিচ্ছি। যদিও সচিবালয়ে স্বৈরাচারের ও ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছেন। আপনি তাদের নিয়ে কীভাবে কাজ করবেন।’
প্রশাসনের কথা উলেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আপনি সংস্কার করবেন, আমলারা যারা বসে আছেন, তারা বেশির ভাগই স্বৈরাচারের দোসর। তারা কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন, দুর্নীতি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে সেভাবে ব্যবস্থা নিতে দেখি না। এগুলো একটু দৃশ্যমান করুন। গভর্ন্যান্সের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রশাসন চালানো, দেশ শাসন করা এগুলোতে যেন মানুষ শান্তি পায়। সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।’
বাজার পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে, শান্তি পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তা-ও তো মানুষ মেনে নিচ্ছে। কারণ আপনারা একটা সুন্দর নির্বাচন দেবেন। কাজেই ওটাকে দৃশ্যমান করুন, ব্যবস্থা নিন। বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেন বা না পারেন, চেষ্টা করুন। ব্যবস্থা নিতে হবে। সচিবালয়ে যদি ঘুস দিতে হয়, সচিবালয়ে গিয়ে যদি মানুষ দেখে সেই দালালরাই ঘোরাঘুরি করছে, মানুষ তা কখনো ভালো চোখে দেখবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এ সরকার পারবে, বাংলাদেশের মানুষ পারবে এবং তরুণরা পারবে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও মওলানা ভাসানী মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা নাজমুল হক নান্নু, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, আবদুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, আসাদুল করীম শাহিন, হেলেন জেরিন খান প্রমুখ।