অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব রাষ্ট্র সংস্কার: চরমোনাই পির
খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ পিএম
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিম পির সাহেব চরমোনাই বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কার করা। যাতে আর কেউ কখনোই কোনো স্বৈরাচার হিসেবে জন্ম নিতে না পারে।
তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি ইতোমধ্যে সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। এখন এই কমিশনগুলোকে গতিশীল ও জনসম্পৃক্ত করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সোমবার বিকালে খুলনার ডাকবাংলো সোনালি ব্যাংক চত্বরে খুলনা মহানগর ও জেলা ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার ও অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার বিচার, বন্ধকৃত সব মিল কলকারখানা চালু, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ইসলামি সমাজভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়।
রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করার দাবি জানিয়ে পির সাহেব চরমোনাই বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোই দীর্ঘমেয়াদে জনমত ধারণ করেছে, আগামীতেও করবে। ফলে সক্রিয় রাজনৈতিক দল, উলামা শ্রেণি এবং বিভিন্ন পেশা ও স্তরের জনমানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সংস্কার নিয়ে ইতোমধ্যে মানুষের মধ্যে কানাঘুষা তৈরি হয়েছে। এই কানাঘুষা সংস্কারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি বলেন, বিগত ১০০ দিনের বিভিন্ন নিয়োগ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে বিগত স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী হওয়া ও জনমানুষের বোধ বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আবার কারও ব্যাপারে বিপ্লবে তেমন কোনো অবদান না থাকা সত্ত্বেও বড় পদে পদায়িত করার অভিযোগ আছে। এগুলো মানুষকে ক্ষুব্ধ করছে। আপনাদের বিবেচনাবোধ ও বিপ্লবের প্রতি আপনাদের দায়বোধ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করছে। তাই যে কোনো নিয়োগে দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে সঙ্গে বিপ্লবে তার ভূমিকা প্রধান বিবেচ্য হিসেবে ধার্য করতে হবে। প্রতিটি নিয়োগের যুক্তি জনতার সামনে উপস্থাপন করতে হবে।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিম বলেন, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত চরম বিতর্কিত উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে জনগণ মেনে নেয়নি। অতএব পতিত স্বৈরাচারের বেনিফিশিয়ারি বিকৃত মানসিকতার সমাজ বিধ্বংসী নাটক-সিনেমা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে দ্রুত উপদেষ্টা পরিষদ থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। এটাই দেশবাসী প্রত্যাশা করে।
পির সাহেব চরমোনাই আরও বলেন, সাধারণ মানুষ জটিল রাজনীতি বোঝে না। তারা তাদের খাদ্যের নিশ্চয়তা চায়, জীবনের নিরাপত্তা চায়। কিন্তু এই দুই ক্ষেত্রেই জনতার অভিজ্ঞতা ভালো না। দ্রব্যমূল্য বহু আগেই নাগালের বাইরে চলে গেছে। সংসার চালাতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে আরও আগে থেকেই। স্বৈরাচারের পতনের পরে মানুষ ভালো কিছু আশা করেছিল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেছে। এটা মানুষকে হতাশ করেছে। সেজন্য বলব, যেকোনো মূল্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অবিলম্বে খুলনার বন্ধকৃত সব মিল কলকারখানা চালু করে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খুলনা মহানগর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল। মহানগর সহসভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিন, মহানগর সেক্রেটারি মুফতি ইমরান হুসাইন, জেলা সেক্রেটারি হাফেজ আসাদুল্লাহ আল গালীবের যৌথ সঞ্চালনায় গণসমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা শোয়াইব হুসাইন, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি মানসুর আহমেদ সাকী, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি নুরুল বশর আজিজী।