দুনিয়া বাদ দিয়ে আখিরাতে সফল হওয়া সম্ভব নয়: মাসুদ সাঈদী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৬ এএম
পিরোজপুর-১ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনিত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাসুদ সাঈদী বলেছেন, মানবরচিত কোনো মতবাদই দুনিয়াতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। একমাত্র ইনসাফ ও ভারসাম্যপূর্ণ আল্লাহর আইন দ্বারাই আল্লাহর জমিনে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। আর এজন্য প্রয়োজন আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন।
শনিবার পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান, আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার অন্তর্গত চকরিয়া ছাত্রকল্যান ফোরামের উদ্যোগে চকরিয়া সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত ৫ম বার্ষিকী ঐতিহাসিক তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মাসুদ সাঈদী বলেন, ইসলাম প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত সংগঠন শহীদী কাফেলা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে সৎ, যোগ্য, দক্ষ ও আমানতদার লোক হিসেবে তৈরি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জামায়াত হচ্ছে নীতি-নৈতিকতা সম্পন্ন আদর্শ মানুষ গড়ার কারখানা। দুনিয়া বাদ দিয়ে আখিরাতে সফল হওয়া সম্ভব নয়। আর আখিরাত বাদ দিলে দুনিয়ার জীবন ব্যার্থ। তাই জামায়াতের সকল কর্মসূচি দুনিয়া ও আখিরাতমুখী। দুনিয়া চাষ করেই আমাদেরকে আখিরাতের সফলতা অর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন, ইসলাম গতানুগতিক কোনো ধর্মের নাম নয়, এটি আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম সার্বজনীন ধর্ম। ইসলাম শুধুমাত্র মক্কা-মদিনা বা আরব দেশ ও জাতির জন্য নয় বরং ইসলাম বিশ্বের সকল বর্ণ, গোত্র, জাতি, ধনী-গরিব, সাদা-কালো, আরব-অনারব সকল মানুষের জন্যই প্রেরিত ও একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা এবং আল্লাহর মনোনীত দ্বীন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাসুদ সাঈদী বলেন, যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ দ্বীনের দাওয়াত দিতে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত সমাজব্যবস্থার তীব্র বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু কোনো বাঁধাই তাদেরকে দ্বীনের দাওয়াত থেকে বিরত রাখতে পারেনি। আমাদেরকে সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে দ্বীনের দাওয়াত চালিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদেরকেও জান ও মালের কুরবানী পেশ করতে হবে। যেমন করে জান ও মাল কুরবানীর এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন আমাদের শহিদেরা। কুরআনের পাখি আল্লামা সাঈদী তার প্রায় পুরো জীবনটাই দাওয়াতে দ্বীনের কাজে ব্যায় করেছেন। তিনি চাইলে আরাম আয়েশের জিন্দেগী বেছে নিতে পারতেন, চাইলে তিনি অন্য অনেকের মতো ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে আপোষও করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার খুনি হাসিনার সব অত্যাচার নির্যাতন জেল জুলুম সহ্য করেও ঈমানের ওপর অবিচল থেকেছেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নানা রকম প্রস্তাব প্রলোভন দু'পায়ে ঠেলে দিয়ে ঈমানের বলে বলিয়ান হয়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জালিমের সঙ্গে আপোষ না করে আল্লামা সাঈদী প্রমান করে গেছেন একজন ঈমানদার মুসলমান কোনদিন কখনো আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে মাথা নত করতে পারে না। সুতরাং আল্লামা সাঈদী রহ.সহ শত শত শহীদের রক্তে রঞ্জিত এই বাংলাদেশকে কুরআন দিয়ে পরিচালনার মাধ্যমে সমাজে শান্তি নিশ্চিত করা শপথ আমাদের করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে আগে নিজেরদের ঘরে দাওয়াতী কাজ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য সবার আগে আমাদের নিজেদের ঘরকে ইসলামী আন্দোলনের উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত করতে হবে। পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনকে ইসলামী আন্দোলনে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। আল্লাহই আমাদের একমাত্র রব। তিনিই আমাদের একমাত্র পালনকর্তা, হুকুমদাতা, বিধানদাতা, রিজিকদাতা।
বিশ্বনন্দিত মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা সাঈদীপুত্র মাসুদ সাঈদী আরও বলেন, ইসলাম পালন করা যেমন ফরজে আইন, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করাও ফরজে আইন। আল্লাহ তায়ালা বলছেন- ওয়াকিমুস সালাত- মানে নামাজ কায়েম করো। সেই আল্লাহই বলছেন, ওয়াকিমুত দ্বীন- মানে দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করো। দুটিই সরাসরি আল্লাহর নির্দেশ, যা পবিত্র কুরআনে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা আল্লাহ ফরজ করে দিয়েছেন। আর সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা একাকী সম্ভব নয়, দলবদ্ধভাবে সেটা করতে হয়। তাই আল্লাহর এই জমিনে সকল প্রকার মানব রচিত মতবাদকে মূলোৎপাটন করে ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
স্বৈরাচার হাসিনার জুলুমের বর্ণনা দিয়ে মাসুদ সাঈদী বলেন, জালিমদেরকে আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। ফ্যাসিস্ট খুনি শেখ হাসিনার নির্যাতন আল্লাহ তায়ালা সহ্য করেন নাই। আল্লাহর দেওয়া সুযোগকে হাসিনা কাজে লাগাতে পারে নাই। অবশেষে সর্বশক্তিমান আল্লাহ হাসিনাকে পাকড়াও করেছেন, আর আল্লাহর পাকড়াও বড়ই কঠিন। আল্লাহ যেদিন হাসিনাকে ধরেছেন সেদিন হাসিনা তার বাড়া ভাতটুকুও খেতে পারেনি। শেখ হাসিনার দুঃশাসন ৭২-৭৫ সালের দুঃশাসনকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। হাসিনা সরকারের পতনের মূল কারণ দুঃশাসন ও নির্যাতন। ২০০৯ থেকে ২০২৪- ইউপি থেকে শুরু করে সংসদ নির্বাচনে কোনো মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তারা ১৭টি বছর খুন, গুম-রাহাজানিসহ বাংলাদেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে দেশের বাইরে পাচার করেছে। দেশের লাখ-লাখ কোটি-টাকা লুটপাট করে বিদেশে বেগমপাড়া বানিয়েছে শেখ হাসিনা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। আজ তাদের পতন হয়েছে। তাদের এই পতনের মধ্যে রয়েছে জালিমদের জন্য শিক্ষা। আমরা আশা করি ভবিষ্যতে যে বা যারাই ক্ষমতায় আসবেন তারা খুনি হাসিনার পতনের কারণ ও তার করুণ পরনতি তাদের স্মরণে রাখবেন। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের স্মৃতি মাথায় রেখে নতুন দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে রাজনীতি করতে হবে।
যুবকদের উদ্দেশ্যে মাসুদ সাঈদী বলেন, যুবকরাই ইসলামের প্রানশক্তি। ইসলাম যেখানে যৌবনকালকে এত গুরুত্ব দিয়েছে, মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের যৌবনকালকে ভালো কাজে ব্যয় করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে, সেখানে আমাদের দেশে অপশক্তিগুলো তরুণ-যুবকদেরদের নেশা, সন্ত্রাস অপকর্মের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আর পৃথিবীর প্রতিটি বিভাগেই যুবসমাজের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন, জৈনপুরী দরবার শরীফের পীর মুফতি ড. সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ওয়া সিদ্দিকী তার আলোচনায় বলেন, মহাগ্রন্থ আল কুরআন হলো মহান আল্লাহর মহাদান, রাসূল (সা)-এর শ্রেষ্ঠ মোজেজা, বান্দার জন্য রহমতের ভান্ডার। সর্বোপরি বিশ্বমানবতার মুক্তির মহাসনদ। কুরআন এমন একটি কিতাব যা তিলাওয়াত করলেও সওয়াব, শুনলেও সওয়াব, শিখলেও সওয়াব, শেখালেও সওয়াব, আমল করলেও সওয়াব, কাউকে আমল করতে উৎসাহিত করলেও সওয়াব। কুরআনি সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শহীদ হলেও সওয়াব, গাজী হলেও সওয়াব। পৃথিবীতে কুরআন ছাড়া এমন কোনো গ্রন্থ নেই যা তার অনুসারীদেরকে এভাবে উজ্জীবিত করে।
তাফসীরুল কুরআন মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন চকরিয়া হাইস্কুল ক্যাম্পাস জামে মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা আলাউদ্দিন ইমামী, পূর্ব নলুয়া উত্তর পাড়া জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মিনারুল ইসলাম, চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদরাসার প্রভাষক ওয়াজেদুল আকবর।
আলহাজ হাফেজ মাওলানা রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে ও আলহাজ আনোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় তাফসীর মাহফিলে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন চকরিয়া ছাত্রকল্যাণ ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা মুসা বিপ্লব ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন ছাত্রকল্যাণ ফোরামের সভাপতি হাসানুজ্জামান।
ঐতিহাসিক এই তাফসীরুল কুরআন মাহফিলে প্রধান মুফাসসির হিসেবে উপস্থিত থেকে তাফসির পেশ করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন, তাহরিকে খতমে নবুওয়্যাত বাংলাদেশের আমীর, জৈনপুরী দরবার শরীফের পীর মুফতি ড. সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ওয়া সিদ্দিকী। মাহফিলে আরও তাফসির করেছেন বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরিনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, খ্যাতিমান আলেমে দ্বীন মাওলানা নাসিরউদ্দিন হেলালী, চিরিংগা জামে মসজিদের খতিব অধ্যাপক মাওলানা কফিল উদ্দিন।