সর্বশেষ কবে বিদেশ গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:১৬ পিএম
দীর্ঘ ৭ বছরেরও বেশি সময় পর চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যাবে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, প্রথমে খালেদা জিয়া লন্ডনে যাবেন ছেলে তারেক রহমানের কাছে। বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে।
পরে লন্ডন থেকে তৃতীয় একটি দেশে নিয়ে তাকে কোনো একটি ‘মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে’ ভর্তি করা হবে বলে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন।
দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছর দণ্ডিত হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। দণ্ড থেকে মুক্ত হওয়ার আড়াই মাস পর চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার খবর এলো।
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবি ছিল পরিবার ও দলের। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাকে বিদেশ যেতে দেয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর তার বিদেশ যাওয়ার পথ খুলল।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই সময় প্রায় দেড় মাসের মতো লন্ডনে অবস্থান করেন তিনি।
এর দুই বছর আগে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চোখের ও পায়ের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমানসহ তার পরিবার এবং প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ইদ উদযাপন করেন। ৬৫ দিন লন্ডনে অবস্থানের পর দেশে ফিরেন তিনি।
৭৯ বছর বয়সি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। সবশেষ গত ৮ জুলাই গভীর রাতে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন এখনও সুস্থ নন। আগে তিনি বন্দি ছিলেন, এখন মুক্ত। দলের নেতাকর্মীরা স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন, দমন-নিপীড়ন থেকে মুক্তি পেয়েছেন এবং দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এসেছে। এজন্য খালেদা জিয়া মানসিকভাবে স্বস্তিতে দিন কাটাচ্ছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চেরিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালে কারাগারে যেতে হয়।
দণ্ড মাথায় নিয়ে কারাগারে যাওয়ার দুই বছর পর ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হলে খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করে তার পরিবার। তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকার নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়।
শর্ত ছিল খালেদা জিয়াকে নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৪০১ ধারা অনুসারে দণ্ড স্থগিত করে এই আদেশ দেয় হাসিনা সরকার।
এরপর অবশ্য খালেদা জিয়াকে আর কারাগারে যেতে হয়নি। নিয়মিতভাবে সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ অবস্থায় গত ৬ মার্চ উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে স্থায়ী মুক্তি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করে তার পরিবার।
সেই আবেদনে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হলে ‘সুযোগ নেই’ বলে আবেদনটি নাকচ করা হয়। এরপর গত ২১ জুন রাতে খালেদা জিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসান চিকিৎসকেরা।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর গত ৬ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দণ্ড মওকুফ করে মুক্তির আদেশ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ সংবাদ পান তিনি। মুক্তির পর দিনই ৭ আগস্ট নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে ভিডিও বার্তায় বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া।
এক মাসেরও বেশি সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২১ আগস্ট গুলশানের বাসায় ফিরেন দুর্নীতির দুই মামলার দণ্ড থেকে মুক্তি পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন। মুক্তি পেলেও অসুস্থতার কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না। যদিও ২৪ ঘণ্টাই চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।