রাষ্ট্রপতি ‘ফ্যাসিবাদের প্রোডাক্ট’ হলেও সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি করা যাবে না: রিজভী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০৯ পিএম
রাষ্ট্রপতি ‘ফ্যাসিবাদের প্রোডাক্ট’ হলেও তাকে পদত্যাগের কথা বলে বড় ধরনের সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আমরা সবাই জানি রাষ্ট্রপতি ফ্যাসিবাদেরই একটি প্রোডাক্ট। কিন্তু রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন ছোটখাটো যদি গর্ত হয় আপনি সেই গর্ত টপকিয়ে পার হয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু বড় গর্ত যদি খাল হয়, তখন তো সেটা টপকানোর সম্ভব নয়। সেটি টপকাতে গেলে পড়ে যেতে পারেন। সুতরাং যাতে কোনো সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি না হয় এ জন্য অনেক চিন্তা করে আমাদেরকে কাজ করতে হবে। অল্প শূন্যতা হলে সেই শূন্যতা ভরাট করে দেয়, কিন্তু বড় শূন্যতা হলে তা ভরাট করা মুশকিল হয়। এখানে শেখ হাসিনার পতনে যারা অসন্তুষ্ট হয়েছেন, বাংলাদেশের ভেতরের কিছু মানুষ এবং বাহিরের লোকজন নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে মেতে উঠবে।
শনিবার বিকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অন্তর্বতীকালীন সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, একটি পরিস্থিতি একটি দুনিয়া কাঁপানো বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে- একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেওয়া। সেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করা তাদের দরকার। এর মধ্যে সংস্কারের যে কথাগুলো উঠেছে সেই সংস্কার তারা করবে। কিন্তু কথা হলো সেটা তারা কত দিনে করবে? এ দেশের জনগণ রাজনৈতিক দল যারা গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছে সকলেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছে। নিঃসন্দেহে ড. ইউনূস বাংলাদেশের একজন কৃতি মানুষ, যিনি সুনাম বয়ে নিয়ে এসেছেন। প্রত্যেকেই তাকে শ্রদ্ধা করে। যে গণতন্ত্রের জন্য এতো লড়াই, এতো সংগ্রাম। অনেক মা তার সন্তানহারা, অনেক স্ত্রী তার স্বামীহারা শুধুমাত্র গণতন্ত্রের জন্য কথা বলার জন্য এবং নাগরিক স্বাধীনতার জন্য। তাই যদি হয় তাহলে নির্বাচন নিয়ে আপনাদের এতো দ্বিধাদ্বন্দ্ব কেন? নির্বাচনের জন্য আপনারা যে তারিখটা দেবেন সেটা বলে দিন। এর মধ্যে যতটুকু সংস্কার করা দরকার করুন। নির্বাচনের তারিখ ও সংস্কারের সময়সীমা জানতে চায় জনগণ।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনগণ তো সংস্কার চায়, শেখ হাসিনার বিচার বিভাগ জনগণ চায় না। শেখ হাসিনার প্রশাসন জনগণ চায় না, শেখ হাসিনার পুলিশ জনগণ চায় না। যে পুলিশ মানবদরদি হবে, যে জনপ্রশাসন জনগণের কল্যাণে আসবে জনগণ সেই প্রশাসন চায়। এগুলো সংস্কার করতে কতদিন সময় লাগবে? বিচার বিভাগ হচ্ছে মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল, এটা সংস্কার করতে কতদিন সময় লাগবে? বেশিদিন তো সময় লাগার কথা নয়।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছর ছিল এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। এক ভয়ঙ্কর দানব শেখ হাসিনাকে তাড়াতে গিয়ে শর্ট গানের গুলিতে কারো পা চলে গেছে, কারো দু’চোখের আলো নিভে গেছে। কারো কারো জীবন চলে গেছে। আওয়ামী বাকশালী দুঃশাসনে ভয়ংকর বিষাক্ত বাতাসের মধ্যে সারা বাংলাদেশের মানুষ গত ১৫ বছর ছিল। যারা কথা বলেছে, প্রতিবাদ করেছে তাদেরকে রাতের অন্ধকারে তাদের স্ত্রীর কাছ থেকে, মায়ের কাছ থেকে, বাবার কাছ থেকে নিয়ে অদৃশ্য করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ সারা বাংলাদেশে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে অসংখ্য নেতাকর্মীদেরকে অদৃশ্য করে দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কেউ একটা টু শব্দ করবে না, কেউ টু শব্দ করলে তার পরিণতি হবে গুম অথবা জনির মত ক্রসফায়ারে হত্যা। এই ছিল শেখ হাসিনার আমল।
রিজভী বলেন, অনেক লড়াই করতে হয়েছে আমাদেরকে। দিনের পর দিন দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পুরোনো জরাজীর্ণ কারাগারে রাখা হয়েছে। প্রায় দুই লাখ মামলায় ৬০ লাখ বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে আসামি করা হয়েছে। এ অবস্থার মধ্যে শেখ হাসিনা মনে করেছিল তার বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ নেই, দেশের মানুষের টাকা, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নামে আমার নিজেদের লোকজনদেরকে দিয়ে লুটপাট করাবো কেউ কোনো আওয়াজ করতে পারবে না। সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে জনগণের গচ্ছিত টাকা আমি হরিলুট করবো, পাচার করবো, কানাডায় বেগমপাড়া বানাবো, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানাবো। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারবে না। এই ছিল শেখ হাসিনার ইচ্ছা। এভাবেই গত ১৫ বছর শেখ হাসিনা দেশ চালিয়েছে। বিচার বিভাগ তার আঁচলের মধ্যে ছিল, পুলিশ বিভাগ তার শাড়ির আঁচলের মধ্যে ছিল, জনপ্রশাসন তার শাড়ির আঁচলের মধ্যে বাধা ছিল।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল আলম নীরব, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন, ডা. জাহিদুল কবির, যুবদল নেতা মেহবুব মাসুম শান্ত, আবুল মনসুর খান দীপক, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ সভাপতি ডা. আউয়াল, ইমাম হোসেন প্রমুখ।