কোন সুতার টানে চলছে সরকার, জানতে চায় জনগণ: রিজভী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩৭ পিএম
পুতুল নাচের ন্যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুতার টান অন্য কোথাও থেকে আসছে কিনা সেটা জনগণ জানতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা যেন এক ধরনের ধোঁয়াশার মধ্যে আছি। জনগণ যেন একটা প্যারাডক্সের মধ্যে, দেয়ালের মধ্যে, কুয়াশার মধ্যে আছে। এই শুনলাম সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্রেফতার হয়েছে, তার কয়েকদিন পর শুনলাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকসন হাইটসে ঘুরাফেরা করছে। আবার শুনলাম, তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাত গ্রেফতার হয়েছে, তার দুই-তিন দিন পরে শুনলাম তিনি গ্রেফতার হননি। জনগণের সাথে এই প্রতারণা কিসের জন্য? জনগণের সামনে এই লুকোচুরি কিসের জন্য? এটা তো জনগণ জানতে চায়।
সরকারের উদ্দেশে রিজভী আরও বলেন, শেখ হাসিনার আমলের মন্ত্রীরা যারা অপরাধ করেছে, অবিচার করেছে তাদে গ্রেফতার হওয়া, না হওয়া এটা নিয়ে এই ধরনের লুকোচুরি কেন খেলছেন? জনগণ কি প্রশ্ন করতে পারে না? জনগণ কি জানে না কোনো না কোনো জায়গা থেকে পুতুল খেলার নাচের মতো আপনাদের সুতোর টান দিচ্ছে। সেই সুতার টানে আপনারা নাচানাচি করছেন। এটাই তো সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে শেখ হাসিনার দেওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারে মন্থরগতি লুকিয়ে থাকা আওয়ামী দোসরদের নীল নকসার অংশ বলেও মন্তব্য করেন রুহুল কবির রিজভী।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনও কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম জড়াতে পারেনি। এই মামলা তো ছিল শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা। তারপরও তার বিরুদ্ধে মামলা এখনো প্রত্যাহার হচ্ছে না কেন? এটার কারণ কি দেশবাসী জানতে চায়? আপনাদের অন্তরের ভাষা আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না। ছাত্র- জনতার তুমুল আন্দোলনে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা সবাই সমর্থন দিয়েছি। এই সমর্থনের পরেও তারা যদি আলো-ছায়ার মধ্যে দুলতে থাকে তাহলে তো সামনের দিকে একটা বিপদজনক বার্তা বয়ে নিয়ে আসবে।
শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে রাজশাহীর চারঘাটে সারদা পুলিশ একাডেমিতে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণরত ২৫২ জন উপপরিদর্শককে (এসআই) অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আজকে দেখলাম রাজশাহীর সারদাতে শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত ২৫২ জন পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাদ দেওয়ার কথা ছিল ৮০৩ জনকে।এদেরকে কেন নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, কারণ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জয়ের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে, তাদের টাকা পাচারের বিরুদ্ধে যারা লিখবে এই পুলিশ কর্মকর্তারা তাদেরকে অত্যাচার করবে। তাদের ওপর অবিচার করবে। তাদেরকে নির্মমভাবে প্রহার করবে। বিএনপি নেতাকর্মীদের আঙ্গুলের ভেতরে সুই ঢুকাবে, তাদের কানে-পায়ে ইলেকট্রিক শর্ট দিতে হবে এই কারণে তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া, চাকরিতে না নেওয়া এই দাবি কি অন্যায় দাবি? এটা অন্যায় দাবি নয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি কেউ কি শেখ হাসিনার অত্যাচার এবং গুম থেকে রেহাই পেয়েছে? জাকির, সুমন আরো কত জনের কথা বলব?
তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলের জয়পুরহাটে সরকারি আইনি অফিসে নিয়োগপ্রাপ্ত ৪২ জনের মধ্যে অবৈধ আইনমন্ত্রীর ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া কসবা এলাকারই ৩২ জন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিশ্বজিতের ন্যায় অসংখ্য মানুষকে কুপিয়ে খুন ও গুম করার রাজনীতি বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।
তিনি বলেন, বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা এম ইলিয়াস আলী একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন, চৌধুরী আলম জনপ্রতিনিধি ছিলেন, সালাউদ্দিন আহমেদ স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি মন্ত্রী ছিলেন তাকেও ৬২ দিন আটকে রেখে ভারতে পাচার করে দেওয়া হয়েছিল। আমরা কি আবার সেই আমলের পুনরাবৃত্তি করবো? আমরা কি সেই দুঃসহ, দুর্বিষহ পরিস্থিতি আবার আনবো? আইনের শাসনের বদলে যুবলীগের শাসন চলবে, আওয়ামী লীগের শাসন চলবে। আমাদের এত আত্মত্যাগ ১৫-১৬ বছর ছাত্রদল যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, বিএনপি নেতাকর্মীরা অকাতরে জীবন দিয়েছে। তাদেরকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে এসে তার স্ত্রীর সামনে, মায়ের সামনে থেকে বাবার সামনে থেকে হত্যা করা হয়েছে।কারো কারো লাশ পাওয়া গেছে তিনদিন চারদিন পর তুরাগ নদীতে, শীতলক্ষ্যা নদীতে এই ছিল বিএনপির নেতাকর্মীদের ভাগ্যের লিখন।এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে শেখ হাসিনার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, পুলিশ আর র্যাব। সেই শাসন কি আবার ফিরে আসবে। সেই শাসন আর ফিরে আসতে পারে না।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক রফিকুল আলম মজনু, সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, যুবদল নেতা ওমর ফারুক কাওসার, ছাত্রদল নেতা ডা. আউয়াল প্রমুখ।