সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি খলীল আহমদ
হেফাজত দৃঢ়তার সঙ্গে অরাজনৈতিক অবস্থান বজায় রাখবে
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৪৪ পিএম
ইমান-আকিদাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সঙ্গে ঐক্য বা এ জাতীয় কোনো আলাপ-আলোচনার সুযোগ নেই। হেফাজতে ইসলাম সাংগঠনিক স্বকীয়তা ও অরাজনৈতিক অবস্থান বজায় রেখে ইমান-আকিদার সুরক্ষায় নাস্তিক্যবাদী চক্রের ইসলামবিদ্বেষী যেকোনো ষড়যন্ত্র উৎখাতসহ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মানবাধিকারকে হুমকিমুক্ত রাখতে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে কাজ করে যাবে।
গঠনতান্ত্রিকভাবে হেফাজতের অরাজনৈতিক অবস্থানের ওপর যে অঙ্গীকার রয়েছে, সেটাকে সর্বাত্মকভারবে বজায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে দেওবন্দী ধারার পূর্বসুরী হক্কানী উলামায়ে কেরামসহ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাদের যে মতাদর্শিক অবস্থান, সেখান থেকেও হেফাজতে ইসলাম বিচ্যুত হবে না।
সোমবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির ও দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে তিনি হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বলেন, ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রসার ও অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুযোগ নিয়ে নাস্তিক্যবাদী চক্র যখন ইসলামের বিরুদ্ধে বহুবিদ ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং পুঁজিবাদী ষড়যন্ত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবেও নানান অনৈসলামিক সিদ্ধান্ত জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়, এমন পরিস্থিতিতে শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর (রহ.) উদ্যোগে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি উম্মুল মাদারিস দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ গঠন করা হয়। তখন প্রতিষ্ঠাতা মুরুব্বী আলেমরা সর্বাবস্থায় এই সংগঠনকে অরাজনৈতিক, সামাজিক, অধ্যাত্মিক ও আত্মসংশোধনমূলক সংগঠনরূপে পরিচালনার ওপর দৃঢ়তার সঙ্গে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠাকালে শীর্ষ মুরুব্বি আলেমরা আরও অঙ্গীকার করেন যে, এ সংগঠন আকাবিরে ওলামায়ে দেওবন্দের নীতি-আদর্শের ভিত্তিতে মহান আল্লাহর আনুগত্য, ইসলামের বিধি-নিষেধকে জাতীয় ও সামাজিক স্তরে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে পরিচালিত হবে। একইসঙ্গে ঈমান-আক্বিদা, মুসলিম সভ্যতা-সংস্কৃতি, ইসলামের বিধান ও প্রতীকসমূহের হেফাজতে দেশের মুসলমানদেরকে সচেতন করতে কাজ করে যাবে।
পাশাপাশি ধর্মীয় ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন জারি রেখে যাবে। কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্যে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি পরিচালিত হবে না। কিন্তু রাজনৈতিক ইস্যুর আড়ালে ইসলামকে টার্গেট করা হলে হেফাজতে ইসলাম সর্বস্তরের মুমিন-মুসলমান তথা নবীপ্রেমিক, ইসলামপ্রিয় জনতাকে সঙ্গে নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
বিবৃতিতে মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী আরও বলেন, ইমান-আকিদার হেফাজত এবং দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা, সামাজিক সম্প্রীতি ও স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থেই ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম ঐতিহাসিক ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করেছিল। হেফাজতের এসব দাবির প্রতি দলমত নির্বিশেষে দেশের গণমানুষের সমর্থন ও আস্থা লংমার্চ ও ঢাকা অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে বার বার প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি হেফাজতের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
বিবৃতির শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) প্রায় সময়ই বলতেন, ‘হেফাজতে ইসলাম কখনই রাজনীতিতে জড়াবে না, ক্ষমতার মসনদে বসবে না। হেফাজত ক্ষমতায় যেতে কারো সিঁড়ি হিসেবেও ব্যবহৃত হবে না। তবে হেফাজতের ইমান-আকিদার নীতি-আদর্শকে অবজ্ঞা করে কেউ ক্ষমতার মসনদে থাকতেও পারবে না।'
প্রতিষ্ঠাতা আমিরের এই দর্শন কঠোরভাবে অনুসরণ করে যেতে কোনোরূপ ছাড় না দেওয়ার ওপর সংগঠনের প্রতিটি নেতাকর্মীর দৃঢ় প্রত্যয় থাকা কর্তব্য।
সংগঠনের ব্যানার ও পদবি ব্যবহার করে হেফাজতের এসব নীতি-দর্শন থেকে কোনো নেতাকর্মীর বিচ্যুত হওয়ার সুযোগ নেই। তবে হেফাজতের পদ-পদবি, ব্যানার ও কর্মসূচির বাইরে যার যার পছন্দের বৈধ ক্রিয়াকলাপ ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে হেফাজত কাউকে বাধা দেয় না।