ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, আপনারা শুধু আমার নির্যাতনের কথা জানেন, অহংকারের জন্য নয়, সওয়াব যেন নষ্ট না হয়। আজ প্রথম মিডিয়ার সামনে এটি প্রকাশ করছি। আমার পরিবার ছাড়া এ কথা কেউ জানে না। আমার এক সন্তান শহিদ।
শনিবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ আয়োজিত মুফতি মুহাম্মাদ ওয়াক্কাস রহ. স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
যুগান্তর পাঠকদের জন্য ড. মাসুদের বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘আপনারা শুধু আমার নির্যাতনের কথা জানেন, আমার অহংকার, সওয়াব যেন নষ্ট না হয়। আজ প্রথম মিডিয়ার সামনে এটি প্রকাশ করছি। আমার পরিবার ছাড়া এ কথা কেউ জানে না। আমার এক সন্তান শহিদ। আমার স্ত্রী যখন সন্তান সম্ভবা, তার বাবা (আমার শ্বশুর) তখন কেরানিগঞ্জের জেলখানায়। আমার স্ত্রী দেখা করতে গিয়েছেন, তৎকালীন র্যাবের সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করে গাড়িতে উঠিয়েছেন। অন্যায়ভাবে গাড়ি চালিয়েছেন এবং যখন বলেছে দেখুন আমার শরীর খারাপ, বলছে তোমার স্বামীর সঙ্গে তোমার দেখা নাই, তোমার শরীর খারাপ হয় কী করে?
এই নির্যাতনের নির্মম কন্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে আমরা আজ এখানে এসেছি।
তারপর আমার স্ত্রী বলল, দেখেন যদি আমার কোনো অন্যায় থাকে তাহলে আমাকে গ্রেফতার করেন। র্যাব ওয়ানে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ কথাটা বলে শেষ করছি এজন্য, তারপরও তাকে ছাড়া হলো না, আমার আড়াই বছরের আরেকটা বাচ্চা তখন বাড়িতে অবস্থান করছে। আমার বৃদ্ধা ৯০ বছরের মা তাকে নিয়ে র্যাব ওয়ানে গেল এক সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বলা হলো, আপনার সন্তানকে (আমাকে) নিয়ে আসুন, তারপর তার স্ত্রীকে আপনি নিয়ে যান।
আমার স্ত্রীকে নিয়ে আসা হলো কোনোভাবে। এর কয়েকদিন পরে ডাক্তার বলল তাকে অপারেশন করতে হবে। সন্তান জন্ম হলো। এটা কান্নার বিষয় নয়, চোখের পানি ফেলার বিষয় নয়। আমার সন্তান জন্ম হলো, আমাকে খবর দেওয়া হলো, আমি আসার জন্য উদ্যোগও নিলাম। হসপিটাল কর্তৃপক্ষ থেকে আমাকে জানানো হলো, আপনি হসপিটালে আসতে পারবেন না। কারণ হসপিটালের সবদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। আপনি আসলে আপনি বের হতে পারবেন না, আপনার সন্তান, আপনার স্ত্রী কেউ বের হতে পারবেন না, সবাইকে নিয়ে যাবে। আমি বললাম, আমি আসব আমার সন্তানের মুখ দেখব। ডা. বলেছে কতক্ষণ সে বাঁচবে আমি জানি না। এগুলো আলোচনা করতে করতেই আমার সন্তান পৃথিবী থেকে চলে গেল।
জানাজা নির্ধারিত হলো। হসপিটাল কর্তৃপক্ষ আমাকে জানাল, আপনার সন্তানের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে একটু পর। আমার নেতৃবৃন্দকে আমি জানিয়েছি, আমাকে যদি গ্রেফতার হতে হয়, ক্রসফায়ারে যেতে হয়, গুম হতে হয়, আমার সন্তানের জানাজায় আমি যেতে চাই। আমাকে জানানো হলো সংগঠনের সিদ্ধান্ত, তোমাকে সবর করতে হবে, তোমাকে এই মুহূর্তে আমরা প্রশাসনের মুখে ঠেলে দিতে চাই না।
আমার সেই সন্তানকে খিলগাঁও কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। আমার শহিদ সন্তানের জন্য আপনাদের কাছে দোয়া চাই। তার জন্য তো দোয়ার দরকার নাই। আমি বিশ্বাস করি, নবজাতক হিসাবে আল্লাহ তায়ালা তাকে কবুল করেছেন। যেন আল্লাহ তায়ালা তার সঙ্গে আমাকে জান্নাতে দেখা করার ব্যবস্থা করিয়ে দেন।
এই পথ মাড়িয়ে যেই বাংলাদেশ পেয়েছি, শুধু এই কথা বলেছি এই জন্য যে, এই বাংলাদেশকে আর কোনো অবস্থায় বিপদের মুখে ফেলে দিতে পারি না। আমাদের নবজাতকরা শহিদ হয়েছে। আমাদের ভাইয়েরা শহিদ হয়েছেন, আমাদের বোনেরা শহিদ হয়েছেন, ছাত্র-শ্রমিক-যুবক শহিদ হয়েছেন, শহিদের এই বাংলাদেশে বিশ্বাসঘাতকদের আর স্থান করতে দেওয়া হবে না।’