শুধু নেতা নয়, নীতির পরিবর্তন হতে হবে: ফয়জুল করীম
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪২ পিএম
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, ৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠন করলাম। ৭১ এর ঘোষণা ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র গঠন করেছিলাম। কিন্তু ৭২-এর সংবিধানে ভারতে সংবিধানের যে মূল চার নীতি, গণতন্ত্রবাদ, সমাজতন্ত্রবাদ, ধর্মনিরেপক্ষবাদ, জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই মূল চার নীতি বাংলাদেশের মুসলমানদের চার নীতি নয়; বরং ভারতে চাপিয়ে দেওয়া চার নীতি।
তিনি আরও বলেন, ভেবেছিলাম স্বাধীন দেশে এবার মানুষ শান্তি পাবে-মুক্তি পাবে। কিন্তু কি পেলাম! ৫৩ বছরে দেখালাম সামাজিক ন্যায়বিচার নেই, সাম্যতা নেই। এ অবস্থা চললে গরিবরা আরও গরিব হবে, ধনীরা আরও ধনী হবে।
বুধবার বিকালে ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জেলা শাখা অয়োজিত বিশাল গণসমাবেশে সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম এসব কথা বলেন।
ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যায় জড়িতদের বিচার, হতাহতদের ক্ষতিপূরণ, দুর্নীতিবাজদের বিচার ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ ৭ দফা দাবি তুলে ধরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির বলেন, দেশের শৃঙ্খলা, সঠিক ইসলামি শাসন, দুর্নীতি প্রতিরোধ, ধনী-গরীব ভেদাভেদ বাতিল করে পেয়ার পদ্ধতির নির্বাচন হতে হবে।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বক্তব্যে আরও বলেন, দেশের অর্থ পাচারকারীদের বিচার করে বিদেশে পাঠানো তাদের সমুদয় অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আনা ও সংখানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু করাতেই হবে, তাছাড়া কোনোভাবেই রাষ্ট্র মেরামত সম্ভব না। ফ্যাসিস্ট সরকার প্রধান শেখ হাসিনার পিয়ন ৪শ কোটি টাকা পাচার করে। মাত্র ২৫ পরিবারের কাছে এতো পরিমাণ টাকা যে সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছেও সেই পরিমাণ টাকা নেই। জাল-জালিয়াতি ও দুর্নীতি করে এতো টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে ও বিদেশে পাচার করা হয়েছে। সব মানুষের মাথার উপর এখন দেড় লাখ টাকার ঋণ চেপে বসেছে। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই। ভালো মানুষ সংসদে গেলে দেশের মানুষের উপকার ছাড়া ক্ষতি নেই। সংসদকে অকার্যকর করে ফেলেছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফয়জুল করীম জোর দিয়ে আরও বলেন, শুধু নেতা নয় নীতির পরিবর্তন হতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন হলো পিয়ার সিস্টেমে নির্বাচন। প্রাপ্ত ভোট অনুপাতে আসন নির্ধারণ হবে। ব্যক্তিকে ভোট দিবে না -মানুষ মার্কায় ভোট দেবে। তবেই হবে পিয়ার সিস্টেম নির্বাচন। মানুষ শাস্তি পাবে। কেও বৈষম্যর শিকার হবে না, শান্তিতে থাকবে। আমরা একটি সাম্যের বাংলাদেশ চাই। যেখানে সব ধর্ম মত ও পথের মানুষ নিজেদের অধিকার নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করবে। আমরা চাই না নতুন কোনো ফ্যাসিবাদ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠুক। এদেশে দখলবাজিদের স্থান হবে না। দখলবাজি চলতে দেওয়া হবে না। ইসলামি সমাজ ব্যবস্থায় কোনো বৈষম্য থাকে না। এর জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সংগঠনের জেলা সভাপতি ডা. এইচএম মোমতাজুল করীমের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি প্রভাষক মৌলানা শিহাব উদ্দীনের সঞ্চলানায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি মওলানা শোয়াইব হোসেন, ইসলামী যুব আন্দোলনের ঝিনাইদহ জেলা শাখার সহ সভাপতি মাস্টার শরীফুল ইসলামসহ অনেকে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সমর্থক যোগ দেন এ সমাবেশে। ব্যানার ফেস্টুনসহ দলে দলে সমাবেশ স্থলে হাজির হলেও ছিল না কোনো বিশৃঙ্খলা। অনেকেই দলীয় মার্কা হাত পাখা নিয়ে এসেছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যর সময় উপস্থিত হাজার হাজার নেতাকর্মী মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়েন। টুঁ শব্দ করেননি তারা। বক্তব্য শেষে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম।