হাসিনা বাইরে থেকে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন: রিজভী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৫৮ পিএম
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার শাসনামলের মতো যেন আদালত পরিচালিত না হয়; সেই নির্মম আদালত, নির্মম বিচারব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেশে সত্যিকার অর্থে একটি আইনের শাসনের সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক।’
শনিবার সকালে শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানানো শেষে এসব কথা বলেন তিনি। সদ্য কারামুক্ত বিএনপির প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যান রিজভী।
রিজভী বলেন, ‘গতকাল একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে— শেখ হাসিনার সঙ্গে গোপালগঞ্জের একজন ছাত্রলীগ নেতার। ছাত্রলীগ নেতা বলছেন— আপা পুলিশ হানা দেয় প্রতিদিন পাঁচ-ছয়জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। অথচ আপনি (শেখ হাসিনা) তো ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, যিনি সত্যিকার প্রধানমন্ত্রী থাকে, সেখানে আইনের শাসন থাকে। যিনি অপরাধ করে অপরাধীদের সাজা হয়, সে যে দলেরই হোক। আপনি কী জানতেন না— আপনি পালিয়ে যাওয়ার পর মাত্র এক মাসও হয়নি স্বেচ্ছাসেবক দলের দিদারকে গোপালগঞ্জে প্রকাশ্যে দিবালোকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এর পরও পুলিশ তাদের পূজা করবে? তাদের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানাবে। আপনি (শেখ হাসিনা) গতকাল ছাত্রলীগের এই ছেলের সঙ্গে কথোপকথন করে আপনি যে বর্বর নিষ্ঠুর-রক্তপান করা ছাড়া অন্য কোনো বিবেক আপনার নেই, মানবতা নেই সেটা আবার প্রমাণ করলেন। অথচ আপনি বলতে পারতেন— ওইখানে হত্যাকাণ্ড হলো কেন? ওইখানে অন্য একটি রাজনৈতিক দলের নেতা মারা গেল কেন? বলেননি। কারণ আপনি ছিলেন আওয়ামী লীগের জননী, গডফাদারদের জননী, টাকা পাচারকারীদের জননী।
বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, ‘এ কারণেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বাইরে যে গণতন্ত্রের জন্য কথা বলেছে, তাকে খুন-গুম-হত্যা করতে, তাদের আয়নাঘরে আটকে রাখতে আপনার মনে এতটুকু বিবেকবোধ কাজ করেনি। এখন আপনি উসকানি দিচ্ছেন; রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে যেভাবে ছাত্রলীগ-যুবলীগকে দিয়েছেন; একই কায়দা উসকানি দিয়ে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে একটা রক্তাক্ত বাংলাদেশের আবহ তৈরি করে আপনি মনে করেছেন সেই সুযোগে বাংলোদেশে প্রবেশ করবেন, তা এই দেশের মানুষ হতে দেবে না।’
রিজভী বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরের সড়ক বিভাগ থেকে ১৫ বছরে কত হাজার কোটি টাকা গেছে, বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে হাজার কোটি টাকা লুপাট হয়েছে। এখন প্রতিদিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে। সুতরাং এই ধরনের লুণ্ঠন ও টাকা পাচারের দেশ তৈরি করার জন্য তিনি কাজ করেছেন।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘মহান স্বাধীনতার ঘোষক বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবতর্ক, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণের উদ্দেশ্যে এখানে এসেছি। আপনারা জানেন— মিথ্যা মামলায় বিএনপির প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে গ্রেফতার করা হয়েছিল; গ্রেফতার করে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে ৭০ বছর। একটা অনাচারমূলক রাষ্ট্রের দৃষ্টান্ত; শেখ হাসিনা যে মাফিয়া রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন, সেখানে হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে ৭০ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ— হাবিবুল ইসলাম হাবিব নাকি শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা করেছিল। আমরা সেদিনের ঘটনা জানি, হাবিব ঢাকায় অবস্থান করছিল। আমাদের একটি প্রোগ্রাম ছিল ঢাকায়, অথচ তার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে পরিকল্পিত মামলা সাজিয়ে এ মামলাটি দেওয়া হয়। হাবিবুল ইসলাম হাবিব ‘৯০-এর গণঅভুত্থানের একজন তেজস্বী নেতা। সে ডাকসুর মিলনায়তনবিষয়ক সম্পাদক ছিল। এরপর সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সভাপতি এবং নির্বাচিত এমপি; তার মতো একজন অপেক্ষকৃত সাহসী তারুণ্যদ্বীপ্ত নেতাকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নেতাকে যদি ধ্বংস করা যায়, হাসিনা অত্যন্ত আনন্দ লাভ করেন তার ফ্যাসিবাদী কায়েম হয়।’
তিনি বলেন, ১৫ বছর গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ তাদের নেতাকর্মীকে গুম-খুন বিচারবহির্ভূত হত্যা করে শেখ হাসিনা মনে করেছিলেন, তার এই যে স্বর্গরাজ্য, লুটপাট ও মাফিয়া রাজ্য চিরজীবনের জন্য বহাল থাকবে। উনার (প্রধানমন্ত্রী) পিয়নের ৪০০ কোটি টাকার দুর্নীতিতে তিনি গর্ব করে বলেন। এ রকম আরও কত ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে।
এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমসহ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।