সংবাদ সম্মেলন করে নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন ঢাবি শিবির নেতারা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৩ পিএম
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ্যে আসার পর নেতারা এলেন সাংবাদিকদের সামনে। বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে নেতারা নিজেদেরকে ‘মজলুম’ বা নির্যাতিত সংগঠন দাবি করে সেই নির্যাতনের বর্ণনা দেওয়া হয়।
নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে সংগঠনের নেতাকর্মীরা হলে থাকতে পারেননি। বিভিন্ন মামলায় বারবার কারাগারে যেতে হয়েছে।
আওয়ামী লীগের শাসনের অবসানে বাংলাদেশে সবাই তাদের নিজ নিজ মত ও আদর্শ প্রচার ও প্রকাশ করার সুযোগ পাবে বলেও আশা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ বলেন, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও হলে না থেকে তার দলের নেতাদেরকে বাইরে থেকে কোনো রকম জীবন যাপন করতে হয়েছে। কাউকে কাউকে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে নেওয়ায় ইয়ার লস করতে হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের বায়তুল মাল সম্পাদক আলাউদ্দিন আবিদ বলেন, ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে চট্টগ্রামের মীরেরসরাইয়ে তিনি শিবিরে যুক্ত হন।
সেখানে মিছিল শেষে স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীরা ধরে নিয়ে যায় থানায় দেয়। তাদেরকে দুটি মামলা দেওয়া হয়, একটি মামলায় একদিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। দুই মাস পরে ছাড়া পান।
মাদ্রাসায় আলিম শ্রেণিতে পড়ার সময় হোস্টেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবার মারধর করে পুলিশে দেয়। এক মামলায় সে সময় ১৬ মাস কারাগারে ছিলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরও দু’বার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। প্রথমবার নিজ এলাকা থেকে এবং পরেরবার থানায় আত্মসমর্পণ করতে গিয়ে। এসব কারণে হলে থাকতে পারেননি, নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি ।
সংগঠনের স্কিল ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, আমি কোনো গুরুতর নির্যাতনের শিকার হইনি। তবে বিগত রেজিমে আমার কতগুলো স্বপ্ন মাটিচাপা দিতে হয়েছে। এখানে যারা পড়াশোনা করবে তারা হলে থাকার সুবিধা পায়। আমার ক্ষেত্রে এমনটা হওয়া উচিত ছিল। আমার বিজয় ৭১ হল অ্যাটাচড ছিল। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি এর এক বছর আগে বুয়েটের আবরার ফাহাদের ঘটনাটা ঘটে। তাই আমি হলে উঠার ব্যাপারে যখন আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলি তারা হলে উঠতে মানা করে।
তিনি বলেন, পারিবারিকভাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিল। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করলেও তারা হলে উঠতে বারণ করেন।
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ ছিল না ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের। এমনকি শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সন্দেহে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের হেনস্তার মুখোমুখিও হতে হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ধীরে ধীরে কাটতে থাকে এই বাধা। ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরাও যে সেই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, ধীরে ধীরে তা প্রকাশিত হচ্ছে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের সঙ্গে ছাত্র সংগঠনের যে বৈঠক হয় তাতে শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি পরিচয়ে যোগ দেন মো. আবু সাদিক কায়েম। পরদিন প্রকাশ পায় বিশ্ববিদ্যাল শিবিরের সেক্রেটারি এস এম ফরহাদের পরিচয়। ১ অক্টোবর প্রকাশ করা হয় ১৪ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির নাম।
সংগঠনটির প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী হোসাইন আহমাদ জুবায়ের বলেন, দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাস, শহর, নগর, বন্দর এমনকি গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রশিবির এই ‘ফ্যাসিস্ট’ শাসনামলের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। এই কারণে শেখ হাসিনা ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ‘জমের মত’ ভয় করেছে।