ত্রাণ বিতরণে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মযজ্ঞ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ পিএম
সারি সারি চাল, ডাল, আলুসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের ব্যাগ। কেউ ওজন মাপছেন, কেউ ব্যাগের ভেতর খাদ্যদ্রব্য ভরছেন, আবার কেউ মেশিনের সাহায্যে ওইসব ব্যাগের মুখ সেলাই করছেন। এভাবেই দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যার্তদের পাশে দাড়ানোর জন্য দ্বিতীয় ধাপের প্রস্তুতি শুরু করেছেন জাতায়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। এই কর্মযজ্ঞে শুধু কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাকর্মীরা নয়, তাদের স্ত্রী, সন্তানরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছেন। তারাও নিজ উদ্যোগে ত্রাণের প্যাকেট প্রস্তুত করতে কাজ করছেন। সহায়তা করছেন সংগঠনের নেতাদের।
সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে পল্টন কমিউনিটি সেন্টারে এমনই চিত্র দেখা যায়। কমিউনিটি সেন্টারের বাইরে বড় ব্যানারে লেখা- ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য কেন্দ্রীয় ত্রাণ ভাণ্ডার সংগ্রহ ও প্যাকেটজাতকরণ’। কমিউনিটি সেন্টারের নীচে চেয়ার-টেবিল পাতানো জায়গায় বসে আছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানে কথা হয় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সঙ্গে। তারা জানান, চার ধাপে বন্যার্তদের পাশে দাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এর মধ্যে প্রথম ধাপে বন্যাকবলিত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। দ্বিতীয় ধাপের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। মঙ্গলবার কুমিল্লার বুড়িচং এলাকা থেকে এই ত্রাণ বিতরণ আরম্ভ করা হবে। সেখানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত থাকবেন। প্রথম ধাপে তারা ১৬ হাজার পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার, ওষুধ, পানি, শাড়ি-লুঙ্গিসহ নগদ অর্থ প্রদান করেছেন। শুকনো খাবারের মধ্যে চিড়া-মুড়ি, বিস্কুট, গুড় এবং মোরগ-পোলাও রান্না করে বন্যার্তদের মাঝে বিলি করেছেন। এ ছাড়া যেসব পরিবার খামারি ছিলেন তাদের নগদ অর্থ বিলি করেছেন।
ত্রাণ বিতরণের দ্বিতীয় ধাপে কেন্দ্রীয়ভাবে ১০ হাজার পরিবারের জন্য চার কেজি চিকন চাল, দুই কেজি আলু, পিয়াজ এক কেজি, ডাল এক কেজি, সয়াবিন তেল এক কেজি, লবণ এক কেজি, পানি দুই লিটার, গুড়ো মরিচ ৫০ গ্রাম, হলুদের গুড়া ৫০ গ্রাম এবং আধা কেজি মুড়ি নিয়ে পুরো একটি প্যাকেট করছেন।
সভাপতি এসএম জিলানি বলেন, তারা কারও কাছ থেকে নগদ অর্থ সহায়তা নিচ্ছেন না। সংগঠনের বাইরের কাছ থেকেও কিছু নিচ্ছেন না। সংগঠনের মধ্য থেকেই যারা বিত্তশালী, যাদের কিছু দেওয়ার সক্ষমতা আছে তাদের সরবরাহকৃত খাদ্যদ্রব্য দিয়েই তারা ত্রাণভাণ্ডার তৈরি করে বন্যার্তদের পাশে দাড়াচ্ছেন। শুধু সংগঠনের নেতাকর্মী নয়, তাদের পরিবারের সদস্যরাও এগিয়ে এসেছেন তাদের এ মহৎ কাজে।
সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান জানান, তারা প্রথম ধাপের কাজ সম্পন্ন করে এখন দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু করেছেন। মঙ্গলবার থেকে তারা ১০ হাজার পরিবারের মধ্যে এ ত্রাণ বিতরণ করবেন। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। তৃতীয় ধাপে তারা মেডিকেল ক্যাম্প করবেন। বন্যকবলিত এলাকার প্রত্যেক উপজেলায় অন্তত একটি করে মেডিকেল ক্যাম্প করার টার্গেট রয়েছে তাদের। সেখানে বিনামূলে ওষুধ ও চিকিৎসা দেওয়া হবে। চতুর্থ ধাপে তারা অবকাঠামো উন্নয়ন, মেরামত এবং কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করবেন। তাদের এ কার্যক্রমে কোথাও কারও কাছ থেকে কোনো চাঁদা সহায়তা নেওয়া হচ্ছে না। সংগঠনের নিজ উদ্যোগে এসব করা হচ্ছে।
কমিউনিটি সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় দেখা গেছে, পুরোটা জুড়ে চাল, ডাল, আলুসহ বিভিন্ন জিনিসের সারি সারি প্যাকেট। সেগুলোকে আবার একটি বড় প্যাকেটে ভরে মুখ সেলাই করে দেওয়া হচ্ছে। সেলাইয়ের জন্য দুটো মেশিনও কেনা হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, নেতাকর্মী ছাড়াও সেখানে সভাপতির সহধর্মিণী রওশন আরা রত্না, সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসানের সহধর্মিণী আরিফা আক্তার, মেয়ে আফসিন ইসাবেলা তিহাসহ আরও অনেক নেতার স্ত্রী, কন্যা ও পুত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করছেন, কেউ প্যাকেট করছেন, কেউ প্যাকেট ভরছেন আবার কেউ মাপছেন।