এস আলমের গাড়িতে সালাউদ্দিন, ‘অনুতপ্ত’ মুজিব
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ পিএম
ফাইল ছবি
সম্প্রতি ১০ বছর পর নিজ জন্মভূমি কক্সবাজারে ফিরেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ। কক্সবাজারে বিপুল জনপ্রিয় বিএনপির এ নেতাকে কয়েক লাখ মানুষ বরণ করে নেন।
তবে হঠাৎ সমালোচনায় হচ্ছে তাকে নিয়ে। অভিযোগ আলোচিত ও সমালোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের মালিকানাধীন গাড়িতে চড়ে নিজ এলাকায় গিয়ে সংবর্ধনা নিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। যদিও ইতোমধ্যে এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন সালাউদ্দিন আহমেদ।
তার দাবি, জানতেন না যে বির্তকিত এস আলমের গাড়িতে করে সংবর্ধনা নিয়েছেন।
জানা গেছে, বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা থেকে তিনি কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর দলের নেতা-কর্মীদের গাড়িবহরের সঙ্গে পেকুয়ায় পৌঁছান তিনি।
কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদের গাড়িবহর পেকুয়ায় পৌঁছানোর বিভিন্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ রকম একটি ভিডিওতে দেখা যায়, যে গাড়িতে (জিপ) চড়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজার থেকে পেকুয়ায় আসেন, সেটির নম্বর চট্ট মেট্রো ঘ-১১-১৫৩৩। এটি মিতসুবিশির স্টেশন ওয়াগন ব্র্যান্ডের জিপ। তিনি সামনে সিটে বসে হাত নেড়ে আশপাশের লোকজনকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিববহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম কার্যালয়ে যোগাযোগ করে জানা যায়, সালাহউদ্দিন আহমেদকে বহন করা গাড়িটি (চট্ট মেট্রো ঘ-১১-১৫৩৩) এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন। এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্টের নামে এটি ২০১০ সালে নিবন্ধন করা। ঠিকানা লেখা আছে এস আলম ভবন, চট্টগ্রাম নগরের আছদগঞ্জ। এটি এস আলম গ্রুপের প্রধান কার্যালয়।
জেলা বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও পেকুয়া সদর ইউপির চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ এস আলমের গাড়িতে করে সংবর্ধনার ব্যবস্থা করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পেকুয়াসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় এস আলমের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে আসছেন। এস আলমের আলোচিত চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ এর সঙ্গে তার নিয়মিতি যোগাযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহ যুগান্তরকে বলেন, যেভাবে আমাকে জড়ানো হচ্ছে সেটা ঠিক না। আমার সঙ্গে এস আলমের আগের মতো যোগাযোগ নেই। তাদের সঙ্গে ব্যবসা আগের মতো করি না।
সালাউদ্দিন আহমেদের সংবর্ধনা এস আলমের গাড়িটা ব্যবসায়ী লায়ন মুজিব রহমান ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বলে দাবি করেন পেকুয়া বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী লায়ন মুজিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমি এস আলম গ্রুপকে অনেক জমিজমা ক্রয় করে দিয়েছি-বিক্রি করেছি। এ কারণে তাদের সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক রয়েছে। সে সম্পর্ক থেকে মাঝে মাঝে তাদের গাড়ি ব্যবহার করে থাকি, অনেকে করেন।
তিনি বলেন, যেদিন আমাদের কক্সবাজারের কৃতি সন্তান সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান, সেদিন অনেকের মতো আমিও তাকে রিসিভ করতে যাই। এসময় এস আলমের সে গাড়িটা আমার সঙ্গে ছিল।
লায়ন মুজিবর বলেন, সালাউদ্দিন ভাইয়ের জন্য অপেক্ষাকৃত নির্ধারিত গাড়িটা মানুষের ভিড়ে আটকে গেলে আমিসহ কয়েকজনের অনুরোধে আমার গাড়িতে উঠেন তিনি। তখন স্বাভাবিকভাবে এটা হয়েছে। এটা সালাউদ্দিন ভাই জানত না আমিও সেভাবে চিন্তা করিনি। তবে এখন ওনার সমালোচনা হচ্ছে দেখে আমার কষ্ট হচ্ছে।
যা বলছেন সালাউদ্দিন
আলোচিত এস আলমের গাড়িতে উঠে সংবর্ধনা নেওয়ায় বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গাড়িটি কার এবং কোথাকার তা তিনি জানতেন না। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা জানতেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সেই মুহূর্তে আবেগাপ্লুত ছিলাম, কার গাড়িতে উঠছি এ বিষয়ে জানা ছিল না। সংবাদ প্রকাশের পরে জানতে পারলাম গাড়িটি আমার এলাকার ছোট ভাইয়ের। তিনি এস আলমে চাকরি করেন। তিনি ওদের জমিজমা দেখাশোনা করতেন। অসাবধানতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এই বিএনপি নেতা।