সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলামকে নিয়ে স্মৃতিচারণ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ১০:২০ পিএম
সদ্য প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম সবুজকে নিয়ে স্বরণসভা করেছেন শিক্ষাবিদ-রাজনীতিক-কুটনীতিকসহ তার বন্ধুরা। শুক্রবার বিকালে মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে মরহুমের জীবন-কর্মের নানা দিক তুলে ধরে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা। দি ঢাকা ফোরাম’(টিডিএফ) এর আয়োজনে এই স্মরণ সভায় অর্থ ও বানিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সবুজ ছিল স্পষ্ট ও সত্যবাদী। আমরা দেশ ও মানুষের স্বার্থে কাজ করবো। সবুজের এই দর্শনটা ছিল লেখায়। এটা আমার জন্য খুবই ভারাক্রান্ত বিষয়।
স্মৃতিচারণ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা হারিয়েছি আমাদের বন্ধুকে, দেশ হারিয়েছে অত্যন্ত দেশপ্রেমিক একজন কূটনীতিককে। তিনি ছিলেন অসাধারণ দেশপ্রেমিক, ভালো বন্ধু, ভালো পিতা, ভালো স্বামী, অত্যন্ত মেধাবী, বুদ্ধিমান এবং স্পষ্টবাদী।
এ ধরনের মানুষ সব সময় আসে না। আমাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক সেই ছাত্র জীবন থেকে। ১৯৬৫ সাল থেকে। ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র আমরা। মত সব সময় এক ছিল তা না, কিন্তু মানুষ তো একেবারে খাঁটি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই আন্দোলনের সময় বহুবার তার বাসায় গিয়েছি। যতদিন ছিলেন, যা বলেছি তা করে দিয়েছেন। আমরা দীর্ঘ সময় আলোচনা করেছি। সব শেষে আমরা যখন জেলে গেলাম তখন দেখলাম, বিদেশে যোগাযোগ করার মাধ্যম কঠিন হয়ে গেছে। সেই সময় সবুজ অনেক ঝুঁকি নিয়ে সেই দায়িত্ব পালন করেছে। এই অল্প পরিসয়ে এবং মানুষের এই অবস্থায় ভারাক্রান্ত মনে খুব বেশি কথা বলতে পারা যায় না। সবুজ (সিরাজুল ইসলাম সবুজ), তার নাম চেহারের মধ্যে সব সময় সবুজ ছিল। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। এই প্রার্থনা করছি যে, আল্লাহ তা’আলা তাকে যেন বেহেশত নসিব করেন।
ফখরুল আরও বলেন, আমার খুব আশা ছিল যে, যখন স্বাধীন হবে তখন সবুজকে আমরা বিশাল কাজে লাগাতে পারবো। এই সংগ্রামে শুধু দু’মাসে শহীদ হয়েছে তা নয়। ১৫ বছর ধরে অসংখ্য মানুষ শহীদ হয়েছে। এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্টের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করবার জন্য রাজপথে প্রাণ দিয়েছে। সবুজ লড়াই করেছে, তার লেখনী ও কথার মধ্যে দিয়ে। সব সময় সে কথা বলেছে। ঠিক সেই সময় চলে গেছে, আমি তাকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করছি। কারণ দেশের কথা বলতে বলতে সে চলে গেছে।
স্মরণসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, শাহেদ চৌধুরী, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন এবং তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের স্মৃতিচারণ করেন। এ ছাড়া সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি মিজানুর রহমান মিনু, আবদুল হালিম, আবদুল কাইয়ুম, নজমুল হক নান্নু, সুজা উদ্দিন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নূর মোহাম্মদ খান, জহির উদ্দিন স্বপন, শামা ওবায়েদ, সাবেক কুটনীতিক ইফতেখার করীম, শাহেদ আখতারসহ অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের মরহুমের সহধর্মিনী নাসরিন ফোজিয়া, দুই কন্যা মৌসুমী ইসলাম সাবরিনা ও নওরিনসহ মরহুমের স্বজনরা ছিলেন। সভা শেষে মির্জা ফখরুল শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন। গত ১১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মারা যান সিরাজুল ইসলাম। গত ১৮ আগস্ট ঢাকার বনানীতে দাফন করা হয়। পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগ দিয়ে সিরাজুল ইসলাম কূটনীতিক পেশায় কাজ শুরু করেন। কর্মজীবনে ক্যানবেরা, নয়াদিল্লি, ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ে বাংলাদেশ মিশনে কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি মিশর ও জাপানেও দায়িত্ব পালন করেন। দক্ষিণ এশিয়া ও সুদূর প্রাচ্যের মহাপরিচালকের দায়িত্বেও ছিলেন সিরাজুল ইসলাম।