ছবি: সংগৃহীত
নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এ আদেশের পর গণমাধ্যমে শুধু বিবৃতি দেওয়া ছাড়া আর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি দলটি। জানা গেছে বিষয়টি নিয়ে মাঠের কোনো কর্মসূচিতে যাবে না দলটি। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ধৈর্যের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।
জামায়াতের একাধিক নেতা মনে করেন নিষিদ্ধ ঘোষণা তাদের জন্য একটি ফাঁদ। তারা যদি প্রতিক্রিয়া দেখায় বা রাজপথে কর্মসূচি পালন করে তাহলে সরকার চলমান ছাত্রদের আন্দোলন থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিবে।
জামায়াত নেতাদের দাবি, কোটাবিরোধী আন্দোলনে সরকার অনেক শিক্ষার্থী, দিনমজুর ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছেন যেখানে জামায়াত বা ছাত্রশিবিরের কোনো নেতাকর্মী নিহত হননি।
কোটা আন্দোলনের ঘটনায় ঢাকায় ৩১শে জুলাই পর্যন্ত ডিএমপি ২৪৩ মামলায় ২৬৩০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে ২২৮৪ জনের রাজনৈতিক পরিচয় নেই। বিএনপির নেতাকর্মী ২৬৯ জন, জামায়াত ও শিবিরের ৭৩ জন।
নেতারা মনে করেন সরকার যা করেছে তাতে জামায়াত জনগণের আরও কাছে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
নিষিদ্ধ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, সরকার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। আমরা সরকারের এই অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও অন্যায় সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ‘ভিন্নখাতে’ প্রবাহিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, সরকার ছাত্রদের অরাজনৈতিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য দেশে দলীয় ক্যাডার ও রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে গণহত্যা চালায়। সরকারের এই গণহত্যার বিরুদ্ধে দেশের শিক্ষকসমাজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে। বিশ্ব সম্প্রদায় এই গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছে। সরকার নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নির্বাহী আদেশবলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে চলমান আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে।
আলাদা এক বিবৃতিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, সরকার নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে চলমান আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকারের এই হাস্যকর সিদ্ধান্ত ছাত্রশিবিরসহ দেশের ছাত্রসমাজ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ইতঃপূর্বে কোনো স্বৈরাচারকে মেনে নেয়নি। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দিয়ে প্রতিবেশী প্রভুর অনুকম্পায় অবৈধভাবে দীর্ঘ ১৫ বছরের অধিক সময় ধরে ক্ষমতা দখল করে থাকা এই সরকারকেও মেনে নিচ্ছে না। সাধারণ ছাত্রজনতার ওপর গণহত্যা চালানো গণবিরোধী আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে দেশের মানুষ লালকার্ড দেখিয়েছে।
উল্লেখ্য, নিবন্ধন না থাকায় জামায়াতের গত তিনটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ ছিল না। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বেশির ভাগ কার্যালয়ই বন্ধ অনেক বছর ধরে। দুই একটি ব্যতিক্রম ছাড়া এতদিন জামায়াত-শিবিরকে প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচিও পালন করতে দেয়া হয়নি। কার্যত অনেকটা নিষিদ্ধই ছিল দলটি।