অস্ত্র দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হয় না: জিএম কাদের
রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৪, ১০:২৩ পিএম
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশ ও জনগণকে রক্ষা করার বদলে জনগণের দিকে বন্দুক তাক করে আছে। এটা আমাদের জন্য বড় দুঃখজনক ঘটনা। হেলিকপ্টার থেকে, বহুতল ভবন থেকে তাদের নির্বিচার গুলিবর্ষণে দেশের নিরীহ জনগণ, শিশু, গৃহিণী, পথচারী মারা গেছে। এ জন্য সবাই আজ শোকাহত।
বিরোধীদলীয় নেতা আরও বলেন, সরকার যাদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে তাদের কাউকে সন্ত্রাসী হিসাবে চিহ্নিত করার সুযোগ পায়নি। আমার প্রশ্ন হলো তাহলে কেন নির্বিচারে এমন গণহত্যা করা হলো। হেলিকপ্টার থেকে, বাড়ির ছাদ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে বুঝল কে সন্ত্রাসী, কে ভালো, কে শিশু। তিনি আরও বলেন, অস্ত্র দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হয় না।
জিএম কাদের বলেন, আমার জীবনে অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম দেখেছি কিন্তু ২০২৪ সালের মতো সাধারণ মানুষ এভাবে একত্রিত হয়েছে এরকম আন্দোলন আগে দেখিনি। দীর্ঘদিন থেকে মানুষ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে, মানুষ নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। সব একসঙ্গে হয়ে জনগণ মাঠে নেমেছে ছাত্রদের সঙ্গে।
বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টায় রংপুরে দু’দিনের সফরে এসেছেন তিনি। এ সময় রংপুর সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এ বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি।
বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, সরকারের এমন কর্মকাণ্ডে আজ দেশের অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহির্বিশ্বে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। দেশে অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দিলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে। আবারও জনগণ মাঠে নামবে, মানুষ মারা যাবে। এক সময় বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে সন্ত্রাসী জাতি হিসাবে চিহ্নিত হবে। আমি মনে করি, এ থেকে উত্তরণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে দমন করে ক্ষমতায় থাকা সভ্য সমাজের নীতি হতে পারে না। সবার সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার বুকে সাহস নিয়ে রাজনীতি করা উচিত। জনগণকে বাধ্য করে তাদের ক্রীতদাস করা যাবে না। বর্তমান সরকার স্বৈরাচারী সরকার- এ কথার সঙ্গে আমি একমত। বিশ্ব গণমাধ্যমও তাই লিখছে। দেশের এমন অবস্থা সৃষ্টির জন্য মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে নাই, সংগ্রাম করে নাই। আমরা গণতান্ত্রিক পরিবেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু দেশে একনায়কতন্ত্র ও চরমভাবে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
নাশকতার দায় বিএনপি-জামায়াতের ঘাড়ে চাপানো প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন, সংঘর্ষের শুরু থেকে বিএনপি-জামায়াত বলে যতবার সরকার যেভাবে প্রচার করুক না কেন, আমি ঢাকায় দেখেছি, মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। জনগণ সরকারের এ কথা গ্রহণ করেনি। এটি জনগণের সংগ্রাম। বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টির কেউ থাকলে তারা ব্যক্তিগতভাবে আন্দোলনে গিয়েছিল। আন্দোলন নিয়ে বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টি এজেন্ডা দিয়েছিল সরকার এটিকেও প্রমাণ করতে পারেনি। মানুষও এটিকে গ্রহণ করেনি।
জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি বন্ধ নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, জোর করে কিছু করলে তাদের যদি গ্রহণযোগ্যতা ও সাংগঠনিক কাঠামো থাকে, তাহলে তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে। সেভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এতে করে অস্বাভাবিক রাজনীতির বীজ বপন হতে পারে। সরকার এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে কেন জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করল, তাদের কী উদ্দেশ্য রয়েছে এসব প্রশ্ন আমাদের মনে। সেই সঙ্গে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগে সরকার বড় ধরনের নির্যাতনে যাবে কি না এটি নিয়েও আমাদের সংশয় রয়েছে।
বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের আরও বলেন, রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। অস্ত্র দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান হয় না। যাদের কথায় মানুষের আস্থা রয়েছে, যাদের মানুষ বিশ্বাস করে সেই সব রাজনৈতিক দল, রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারকে খোলামেলাভাবে কথা বলতে হবে। সেই সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন, আমি আমার জীবদ্দশায় এত স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন দেখিনি। এ সময় তিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ সারা দেশের যত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন তাদের সবাইকে যেন আল্লাহ বেহেশত নসিব করেন সেই কামনা করেন।
এ সময় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির, সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক আজমল হোসেন লেবু, কেন্দ্রীয় সদস্য নুরে আলম যাদু, রংপুর জেলা যুবসংহতির সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিমসহ কেন্দ্রীয় রংপুর মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।