মৃত্যুর সংখ্যা ধামাচাপা দিতে তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না: মির্জা ফখরুল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪৩ পিএম
কোটা সংস্কার আন্দোলনে মৃত্যুর সংখ্যা ধামাচাপা দিতে সরকার তালিকা প্রকাশ করছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘বিভিন্ন সূত্রে ইতোমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি হত্যার সংখ্যা অনেক লম্বা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি স্থাপনাগুলোর বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে। অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনে মৃত্যুর তালিকা এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই মৃত্যুর তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না। তাছাড়া সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এবং সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার বাণিজ্য অব্যাহত রাখা হয়েছে। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত বিএনপির ৯ হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। রিমান্ডের নামে তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। সাবেক এমপি, মন্ত্রীসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাদের সন্ত্রাসীদের মতো ৫-৭ দিন করে রিমান্ডে নির্যাতন করা হচ্ছে। সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নীরব, আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনুসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে চোখ ও হাত-পা বেঁধে, শারীরিক নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়ের নিরন্তর চেষ্টা চলছে। তারা (নেতাকর্মীরা) আদালতকে অবহিত করেছেন। তারপরেও আদালত সরকার প্রধানের ইশারায় তাদের রিমান্ড অব্যাহত রেখেছেন। তাদের শারীরিক সুস্থতা নিয়ে দেশবাসী শঙ্কিত। তাদের ওপর চলমান নির্যাতনে অনাকাক্সিক্ষত কিছু হয়ে গেলে এর দায় সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই নিতে হবে।
সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার যতই ছলচাতুরী করুক না কেন, গণদাবির কাছে পদত্যাগ করতেই হবে। মানুষ যখন প্রতিবাদ শুরু করেছে এই প্রতিবাদের ধারা অব্যাহত থাকবে।’
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকে নিয়ে সরকার দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করছে’-এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নিরীহ ছাত্রছাত্রী এবং কোটা সংস্কারের নেতাদের নির্যাতন করা হবে না। অপরদিকে প্রতিনিয়ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। সাধারণ মানুষ, প্রতিবন্ধী শিশু এমনকি চাকরিজীবীরাও এ ধরনের অমানবিক কর্মকাণ্ড থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আন্দোলনকারীদের প্রতিনিয়ত গ্রেফতার ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যারা প্রকাশ্যে সাধারণ ছাত্রদের বুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করল তাদের একজনকেও গ্রেফতার করা হয়নি, তাদের নিয়ে সরকার প্রধান মায়াকান্না করছেন।’
এদিকে কোটা আন্দোলন চলাকালে গ্রেফতার সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ধানবান্ধি ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সঞ্জিব ভূঁইয়া রোববার মারা গেছেন বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব। পুলিশের নির্মম নির্যাতনে সঞ্জিবের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ফ্লাইট লে. (অব.) হারুনুর রশিদ ভূঁইয়াকে জনসমক্ষে হাজির করারও আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, দলের চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বিবৃতিতে গ্রেফতারকৃত বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতা এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার, রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধ এবং অবিলম্বে সবার নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে সারা দেশে যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে এবং হত্যা, নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে তা অবিলম্বে বন্ধ করে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবে।