কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। নেতাদের দাবি, শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছে। চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অতি সীমিত সংখ্যা কোটা ছাড়া বাংলাদেশে এখন আর কোনো কোটার প্রয়োজন নেই।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির সংগঠনটির অবস্থান জানান।
১১ দিন ধরে নিখোঁজ ছাত্রনেতা আতিকুর রহমান রাসেলের সন্ধানের দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদল। এ সময় নিখোঁজ রাসেলের বাবা আবুল হোসেন সরদার কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছেলেকে ফেরত চান। তারা কান্নায় উপস্থিত নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের চোখে অশ্রু দেখা যায়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি শাহীনুর রহমান শাহীন ও সাধারণ সম্পাদক জুলহাস মিয়াসহ কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতারা।
রিজভী বলেন, সবাই জানি আতিকুর আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আছে। কিছুটা বিরতি দিয়ে সরকার গুমের সংস্কৃতিতে ফিরে আসছে। বিএনপি-ছাত্রদল যেন সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে উচ্চকিত না হয়, তাই মনোযোগ সরাতে এসব গুম করা হচ্ছে। মাফিয়া-সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোনো আয়না ঘরে আতিকুরকে বন্দি রাখা হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ডিসি-এসপিতে এত ছাত্রলীগ কিভাবে আসে? প্রশ্নফাঁসের মধ্য দিয়েই তারা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, রাজকোষ এখন শূন্য। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে দেশে দেশে ঘুরছেন। ফিরে আসছেন খালি হাতে। ২০ বিলিয়ন ডলার চাইলেন, ১ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পেলেন। যাত্রা সংক্ষিপ্ত করে চলে এসেছেন। এখন অন্য অজুহাত দিচ্ছেন। রাষ্ট্রীয় অপকর্ম ঢাকতে একের পর এক ইস্যু সামনে আনছে সরকার।
রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, আমাদের সহযোদ্ধা গুম হয়ে আছেন। আমরা অত্যন্ত উৎকণ্ঠা ও আশঙ্কার মধ্যে আছি। আমাদের পাশাপাশি রাসেলের পরিবারও অত্যন্ত উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় পার করছেন। রাসেল গুম হওয়ার পরও সরকারের প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো সাড়া শব্দ করছেন না, একটা কথাও বলছেন না। অবিলম্বে রাসেলকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেওয়া না হয়, তাহলে আগামী দুই-একদিনের মধ্যেই ঢাকাসহ সারাদেশে এর প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করব।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিব বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনে যারা রয়েছেন, তাদের আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। ঢাকা কলেজ শাখার সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান রাসেলকে ‘গুম’ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রাসেলের নামে কোনো মামলা নেই, কোনো ওয়ারেন্ট নেই। বিনা কারণে তাকে গুম করা হয়েছে। রাসেলের সন্ধানে ছাত্রদল রাজপথে থাকবে, আমরা আমাদের ভাইদের অবশ্যই প্রতিশোধ নেব।
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে নাছির বলেন, আমাদের অফিশিয়াল বক্তব্য হচ্ছে- চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অতি সীমিত সংখ্যক কোটা ছাড়া বাংলাদেশে এই মুহূর্তে কোনো কোটার কোনো প্রয়োজন নেই। চলমান যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীরা করছে, এই আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্রদল পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করছে। আমরা বিশ্বাস করি, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীদের রুখে দিয়ে এই আন্দোলন সফল হবে।
রাসেলের বাবা আবুল হোসেন সরদার বলেন, আমার ছেলে ১১ দিন ধরে কোথায় আছে, কী খায় আমি জানি না। তার কোনো সন্ধান পাইনি, কেউ সন্ধান দেয়নি। পুলিশের উচ্চ পর্যায়েও গিয়েছি, ফলাফল শূন্য।
তিনি বলেন, সন্তানকে আমার বুকে ফেরত চাই। আমি জানি না, আমার বাবা কী করেছে? কী অপরাধ আমার বাবার? রাসেলের সন্ধানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।