Logo
Logo
×

রাজনীতি

শাসকদের ভুলে বিপদের সম্মুখীন অর্থনীতি: ড. মইনুল ইসলাম

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৪, ১০:৪১ পিএম

শাসকদের ভুলে বিপদের সম্মুখীন অর্থনীতি: ড. মইনুল ইসলাম

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেছেন, শাসকদের ভুলে ও খাম-খেয়ালিপনার কারণে দেশের অর্থনীতি বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। অবনতি হয়েছে সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির। দেশে গণতান্ত্রিক সংকট অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে বড় বাধা হিসাবে থেকেই যাচ্ছে। 

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা : সংকট ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ‘শাসককুলের ভুল ও খামখেয়ালিপনার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিপদের সম্মুখীন’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. মইনুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য সুশান্ত দাস, পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা প্রমুখ।

ড. মইনুল ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনীতিতে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের অযোগ্য কোনো বিষয় নয়। কিন্তু একতরফা সিদ্ধান্তের কারণে সমাধান হচ্ছে না। সমস্যাগুলো অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ভোগাচ্ছে। স্বল্প প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণের হিড়িকের ব্যাপারে যে ভুল অবস্থান সরকার গ্রহণ করেছিল, সেখান থেকে অবিলম্বে সরে আসতে হবে। তা না হলে ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে। এই চাপ অব্যাহত থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে শ্রীলংকার মতো ঋণগ্রস্ততার ফাঁদে বাংলাদেশও পড়তে পারে।

মূল প্রবন্ধে ড. মইনুল ইসলাম বলেন, একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশে একরকম একনায়কতন্ত্র চলছে। বিগত দিনগুলোতে সরকার খেলাপি ঋণ পুঁজি পাচার, হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রেরণ, দুর্নীতি দমন, স্বল্প প্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণের হিড়িকের ব্যাপারে যেসব ভুল অবস্থান নিয়েছিল, সেখান থেকে অবিলম্বে সরে আসতে হবে। কিছু ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে নানা নীতি প্রণয়ন করা হয়। তার মতো ব্যবসায়ীর পদে থাকা দেশের জন্য অনেকটা অশোভনীয়।

মইনুল ইসলাম বলেন, পুঁজি পাচার অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সমস্যা; হুন্ডি কমাতেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ডলারের দাম তাদের কাছে কিছুই না। এখন অনেক ক্ষেত্রে ১৩০ টাকা দিয়ে ডলার কিনে আমদানি করতে হচ্ছে। সরকার এসবের বিরুদ্ধে (অর্থ পাচার ও হুন্ডি) ব্যবস্থা নেয়নি, বরং পাচারের টাকা ফেরাতে কর ছাড়সহ নানা সুবিধা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক টাকাও দেশে ফেরেনি। ব্যাংক ঋণের অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, রূপপুরের মতো প্রকল্প ভারতে অর্ধেক টাকায় করে দিয়েছে রাশিয়া। তাহলে কেন আমাদের বেশি অর্থ খরচ হচ্ছে। এমন অনেক অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে লুটপাট হচ্ছে। বড় অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো করে শ্রীলংকা ধসে গেছে। আমরাও এমন খামখেয়ালি করে একই পথে চলছি। ২০০৮ সালের পর দেশে কোনো ভালো নির্বাচন হয়নি। সব একতরফা নির্বাচন হয়েছে। গণতন্ত্র থেকে বিচ্যুত হওয়াটা দেশের জন্য অশনি সংকেত। অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়ছে।

প্রবন্ধে আরও বলা হয়, আমদানিতে অতি মূল্য, রপ্তানিতে কম মূল্য, রপ্তানি আয় দেশে না আনা এবং হুন্ডির মাধ্যমে ব্যাংক ঋণের অর্থ পাচার হচ্ছে। এ চার কারণে দেশ থেকে প্রতি বছর ১৫ থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। 

ব্যাংক খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণের পরিণত হয়েছে। তারপরও ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং নানাভাবে অযৌক্তিক ছাড় দিয়ে খেলাপি ঋণ লুকিয়ে রাখা হয়েছে। যে কারণে দেশে বড় বড় ঋণখেলাপি এখন প্রায় সবাই ওই তালিকা থেকে নিজেদের নাম লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। দেশের সবচেয়ে বড় ঋণখেলাপিরা এখন সরকারের  আশপাশের লোক। 

ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটের গনতন্ত্র পুরোপুরি লাইনচ্যুত হয়েছে। এ বছরের ৭ জানুয়ারি আরেকটি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক এই সংকট অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে বড়সড় বাধা হিসাবেই থেকে যাচ্ছে। 

অনুষ্ঠানে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ডলার সংকটের মূল্য দিচ্ছে জনগণ। মূল্যস্ফীতির চাপ পড়ছে ভোক্তার ওপর। মূল্যস্ফীতির বাড়তি কর জনগণ দিচ্ছে। সংসার চলে না মানুষের। এখন দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত পার্টি বড় পদের লোক। বেনজীর ও আজিজ দুজনের চরম আগ্রাসন দেখলাম। এখন দেখা যাবে দুদক কী করে।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম