যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে না বিএনপি। সোমবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ মন্তব্য করেন।
দেশের চলমান সংকট নিয়ে করণীয় এবং আগামী দিনের কর্মসূচি ঠিক করতে মিত্রদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বিএনপি। এরই অংশ হিসাবে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও লেবার পার্টির সঙ্গে সোমবার আলাদা বৈঠক করে দলটি। এতে নেতারা সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। আগামী দিনে কর্মসূচি পালনের বিষয়েও তারা একমত হন। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীকে যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারেও প্রস্তাব দেন জোটের নেতারা। তবে এ বিষয়ে কিছু জানাননি বিএনপি নেতারা। কী ধরনের কর্মসূচি নেওয়া যায়, মিত্র দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে তা ঠিক করতে বলা হয়েছে এবং তা ৫ দিনের মধ্যেই জানাতে বলেছেন বিএনপি নেতারা। আজও নুর নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। বুধবার বৈঠক হবে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে। এ দুদিনের বৈঠকে বিএনপির পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
সোমবারের বৈঠকে বিএনপির পক্ষে নজরুল ইসলাম খান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান।
সমমনা জোটের বৈঠক শেষে ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফর এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এক বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ওনার (ওবায়দুল কাদের) আশা-নিরাশায় আমাদের কিছু যায় আসে না। ডোনাল্ড লুর ব্যাপারটা অতখানি গুরুত্বপূর্ণ মনে করলে আমরা বলতাম। আমাদের কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। যতটা গুরুত্বপূর্ণ কুকি চিনের আচরণ, যেটা নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। আমরা শঙ্কিত আমার দেশের অবস্থা নিয়ে। আমার দেশে যারা ব্যাংক লুটেরা, তাদের মুক্ত করতে সরকারের অপচেষ্টা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তার সমস্যার সমাধান বরাবরই নিজেরা করেছে। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ, নব্বইয়ের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান-এসবই আমরা করেছি। যারা মানুষের ন্যায্য আন্দোলনে সমর্থন করতে চায়, আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই; আর কেউ বিরোধিতা করলে নিন্দা জানাই।
আরেক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি কখনো সহিংস আন্দোলনে বিশ্বাস করে না বা আমাদের জোটের কেউ-ই সহিংস আন্দোলনে বিশ্বাস করি না। সংহিসতা সরকার করে, তার দায় আমাদের ওপর চাপায়। আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে; মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। তবে এতে আমরা ভীত নই। জনগণের সমস্যা সমাধানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়েছি বা চালাব।
বৈঠক সম্পর্কে নজরুল ইসলাম খান বলেন, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবন বিপর্যস্ত, এ নিয়ে আলোচনা করেছি। বিদ্যুৎ, পানি সংকট ও যোগাযোগ সীমিত-এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সর্বোপরি অর্থনীতি নিয়ে দেশের যে সংকট, টাকা অবমূল্যায়ন, ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুট, রাষ্ট্রীয় ঋণের দ্রুত বৃদ্ধি-এ বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আমাদের জোটগুলো নিজেরা বসবে এবং আলোচনা করবে। তারা আমাদের সঙ্গে আবার বসবে। আরও যেসব জোটের সঙ্গে বসছি বা বসব, এরপর কর্মসূচির কথা জানাব।
বৈঠকে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতাদের মধ্যে ছিলেন এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপা একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ মহাসচিব শাহ আহমেদ বাদল, গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কারি মো. আবু তাহের, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান এমএন শাওন সাদেকী ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ডা. সৈয়দ নুরুল ইসলাম। অপর বৈঠকে মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লেবার পার্টির ১০ নেতা অংশ নেন।
যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণে রোববার ১২ দলীয় জোট এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে আলাদা বৈঠকের মধ্য দিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করে বিএনপি।