এ কথা বলার কায়সার কামাল কে: ব্যারিস্টার খোকন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৮ পিএম
১৮ বছর বয়স থেকে বিএনপি করছেন উল্লেখ করে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, বিএনপি করছি, করব। পদ-পদবি কোনো বিষয় নয়। তবে কুলাঙ্গাররা শহিদ জিয়ার বিএনপিতে থাকুক, এটা আমি চাই না।
ব্যারিস্টার কায়সার কামালকে অর্বাচীন বালক হিসেবে উল্লেখ করে খোকন বলেন, তিনি একজন আত্মস্বীকৃত অপরাধী। নৈতিক স্খলনের কারণে আইনজীবী ফোরামে তার সদস্যপদ থাকা উচিত নয়। সরকারের এই এজেন্টকে দল থেকে বহিষ্কার করা উচিত।
সোমবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
বার সভাপতি বলেন, তারেক রহমান আমাদের প্যানেল ঘোষণা করেছেন। বিএনপির পার্টি অফিসে সবার উপস্থিতিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। তারেক রহমান তো বলেননি তোমরা ভোট গণনায় যেও না, সভাপতির দায়িত্ব নিও না। তাহলে দায়িত্ব নিও না- এ কথা বলার কায়সার কামাল কে? যদি আমরা ১২ পদে জয়ী হতাম তাহলে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের আন্দোলন শক্তিশালী করতে পারতাম। কার সঙ্গে আঁতাত করে কায়সার কামাল সরকারকে পূর্ণ প্যানেলে জয়ী করার পেছনে কাজ করছিল।
তিনি বলেন, বার নির্বাচনে আমরা সরকারের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি; কিন্তু কায়সার কামালের ষড়যন্ত্রের কারণে সেই যুদ্ধে পুরোপুরি জয়ী হতে পারিনি। তিনি নির্বাচনের সময় উপস্থিত না থেকে বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। তারেক রহমানের ঘোষিত প্যানেলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
কায়সার কামালকে অর্বাচীন বালক হিসেবে উল্লেখ করে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, তিনি একজন আত্মস্বীকৃত অপরাধী। একজন আইনজীবীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া করতে গিয়ে হাতেনাতে ধৃত হন। ওই আইনজীবী কায়সার কামালকে মারপিট করে কলাবাগান থানা পুলিশে সোপর্দ করেন। মামলা হলে ওই নারীর কাছে না যাওয়ার শর্তে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন; কিন্ত পরে শর্ত ভঙ্গ করে কায়সার কামাল ওই আইনজীবীর স্ত্রীর সঙ্গে পরে যোগাযোগ রাখেন এবং বিয়ে করেন, কিন্তু কাবিন করেননি। তার ছয় মাসের বাচ্চা আছে। এটা কায়সার কামালের তৃতীয় স্ত্রী। সুপ্রিমকোর্টে ২৫/২৬শ নারী আইনজীবী রয়েছেন। তাদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়।
খোকন বলেন, এমন ব্যক্তি কিভাবে আইনজীবীদের নেতা হন। নৈতিক স্খলনের কারণে আইনজীবী ফোরামে তার সদস্যপদ থাকা উচিত নয়। সরকারের এই ‘এজেন্টকে’ দল থেকে বহিষ্কার করা উচিত। আমি মনে করি কায়সার কামালের ভূমিকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের তদন্ত করা উচিত।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে তাকে বহিষ্কার করার কোনো ভিত্তি নেই দাবি করে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, এই ফোরামের কোনো গঠনতন্ত্র নেই। গঠনতন্ত্র ছাড়া সংগঠন থেকে এর আগে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের বহিষ্কারও সঠিক হয়নি। প্রায় আধাঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনে পুরো সময়ই ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামালের পরকীয়ার বিষয়সহ নানা বিষয় নিয়ে সমালোচনা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ছিল টিএইচ খানের মতো আইনজীবীদের নেতৃত্বে। সেই সংগঠনকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম করে কায়সার কামাল। তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় কায়সার কামালদের ভূমিকা কী ছিল? কোথায় ছিলেন তিনি ওই সময়। তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার কায়সার কামালের বক্তব্য জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি আপাতত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত, এবারের নির্বাচনে ১৪টি পদের বিপরীতে সভাপতিসহ চারটি পদে বিজয়ী হয়েছিল বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল। অপরদিকে সম্পাদকসহ ১০টি পদে বিজয়ী হয়েছে সরকার সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। গত ৬ ও ৭ মার্চ নির্বাচন শেষে ৯ মার্চ রাতে ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র অ্যাডভোকেট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের। এরপর বিএনপি সমর্থিত বিজয়ী সভাপতি ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চারজনকে দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে গত ২৭ মার্চ চিঠি দিয়েছিল জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। তবে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের চিঠি পাওয়ার পরও অপর তিনজন দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকলেও গত ৪ এপ্রিল দায়িত্ব নেন মাহবুব উদ্দিন খোকন।
উল্লেখ্য, গত শনিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করায় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব খোকনকে ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে চিঠি দেয়া হয়। তবে রোববার যখন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন আইজীবীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন তখন তার অব্যাহতির খবর চাউর হয়।