Logo
Logo
×

রাজনীতি

ব্যারিস্টার খোকনের অব্যাহতিতে ক্ষুব্ধ আইনজীবী ও দলের নেতারা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৮ পিএম

ব্যারিস্টার খোকনের অব্যাহতিতে ক্ষুব্ধ আইনজীবী ও দলের নেতারা

বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ফোরামের সিনিয়র সহ সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনকে। মূলত ব্যাক্তিগত বিরোধ ও তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে মত বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের অনেকের। সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে তুমুল জনপ্রিয় এই নেতাকে বাদ দেওয়ায় ফোরামের নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ বিএনপির সিনিয়র নেতারাও।  তারা এই বিরোধ দ্রুত সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন।

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে অব্যাহতি দেওয়াকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছেন দলের কয়েকজন নীতিনির্ধারক। তবে এ নিয়ে কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির দুজন স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য যুগান্তরকে জানান, তাদের কাছে মনে হয়েছে বিষয়টি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে। ব্যারিস্টার খোকন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাতবারের সম্পাদক। তিনি দলেরও একজন সিনিয়র নেতা। তার মতো নেতাকে এভাবে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দিয়ে অসম্মানিত করাটা মোটেই ঠিক হয়নি। এখন যে উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার দ্রুত সমাধান করা উচিত। কারণ এটাকে বেশি জিইয়ে রাখলে ফোরাম ছাড়াও দল আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা আশা করেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দ্রুতই এর সমাধান করবেন।

বিএনপি নেতারা বলছেন, ফোরামের ভেতরকার অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে মাহবুবউদ্দিন খোকনকে কোণঠাসা করার অপচেষ্টা করছে একটি পক্ষ। ওই পক্ষটি ফোরামের একক নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে। যেটি খোকনের জনপ্রিয়তার কাছে অদৌ সম্ভবপর হয়ে উঠছে না, সেটিও তারা জানে।  

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করায় বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব খোকনকে ফোরামের সিনিয়র সহসভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে চিঠি দেওয়া হয় গত শনিবার। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত এক পত্রে তাকে অব্যাহতির কথা জানানো হয়। এ নিয়ে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন খোকন। তিনি কায়সার কামালকে ‘অর্বাচীন বালক’ বলে আখ্যায়িত করেন। নৈতিক স্খলনের কারণে দল থেকে কায়সার কামালের বহিষ্কারও দাবি করেন।

বিএনপিপন্থি একাধিক সিনিয়র আইনজীবী যুগান্তরকে জানান, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন একটি হাতিয়ার। মূলত ব্যক্তিগত পর্যায়ের দ্বন্দ্ব থেকেই ফোরামের এখন এই পরিস্থিতি। ফোরামের সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ নেই। তিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজন নেতা। তবে ব্যারিস্টার খোকনকে অব্যাহতির পর এখন খোকনপন্থি ও ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালপন্থি আইনজীবীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। সোমবারও কোর্টে যার বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে।

তারা আরও বলেন, একটি নির্বাচন করতে হলে আর্থিক বিষয়সহ অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। সেটি করেই নির্বাচনে সভাপতি হয়েছেন ব্যারিস্টার খোকন। এই নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের একজন শীর্ষ নেতারও প্রার্থী ছিল। যেভাবেই হোক ওই প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারেননি। তারপর থেকেই একের পর এক নানা ঘটনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এবং সেখানে ফোরামকে ব্যবহার করা হচ্ছে। একাধিক সিনিয়র আইনজীবী ক্ষোভ প্রকাশ করে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের উদাহরণ টেনে বলেন, সেই নির্বাচনকেও তো আমরা অবৈধ এবং আগের রাতের নির্বাচন বলে কঠোর সমালোচনা করেছি। কিন্তু তাই বলে কি বিএনপি থেকে যে কয়েকজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, তারা কি শপথ নেননি? ফলে জাতীয় নির্বাচনে যদি শপথ নিতে পারে, তাহলে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে দায়িত্ব নিতে সমস্যা কোথায়? বরং সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে দলের কোনো ব্যক্তি থাকলে তাতে নেতাকর্মীরাই উপকৃত হবে।

জানা গেছে, এর আগেও শোকজ ছাড়াই কয়েকজনকে বহিষ্কার করে ফোরামের বর্তমান নেতৃত্ব। এর মধ্যে রয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সিনিয়র সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী মো. জয়নাল আবেদীন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘আমাকে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি ফোরাম থেকে কোনো শোকজ ছাড়াই বহিষ্কার করা হয়। তখন জাতীয় নির্বাচনের প্রতিবাদে ফোরামের পক্ষ থেকে কোর্ট বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়। আমি তখন বর্তমান নেতৃত্বকে বলেছিলাম, কর্মসূচি দিয়ে তো সফল করতে পারেননি। অথচ এ কথা বলার কারণে আমাকে বহিষ্কার করা হয়।’

আরও পড়ুন: ‘সরকারের এজেন্ট’ কায়সার কামালকে বহিষ্কার করা উচিত: ব্যারিস্টার খোকন

জয়নাল আবেদীন অভিযোগ করেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়ে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন ফোরামের বর্তমান মহাসচিব। ব্যারিস্টার খোকনের মতো একজন সিনিয়র নেতাকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর এই ফোরাম এখন একটি হাস্যকরে পরিণত হয়েছে।

এদিকে ব্যারিস্টার খোকনের সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের সেক্রেটারি ব্যারিস্টার কায়সার কামালকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বক্তব্য দেওয়াটাও সমীচীন হয়নি বলে মনে করেন কেউ কেউ। 

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল যুগান্তরকে বলেন, ‘ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন তার অব্যাহতি নিয়ে কোনো কথা বলেননি। তিনি ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন ব্যারিস্টার কায়সার কামালের বিরুদ্ধে। যা নিন্দনীয় ও অরুচিকর। তার মতো সিনিয়র নেতার কাছে এমনটা আশা করিনি। 

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন মেজবাহ মনে করেন, যেভাবেই হোক একটা উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আশা করি, দলের সর্বোচ্চ মহল সবাইকে ডেকে বিষয়টির সমাধান করবেন।

জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুগান্তরকে বলেন, ‘রাজপথের আন্দোলনে যেহেতু কর্মসূচি চলে আসছে, সেখানে আইনজীবী ফোরামের নেতারাও থাকবেন। তাই এখানে বিভেদ-দ্বন্দ্ব কোথায়? সবাই তো বিএনপির লোক, আমাদের উদ্দেশ্যও তো এক।’

কয়েকদিন আগে ব্যারিস্টার খোকন কায়সার কামালের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে যুগান্তরকে বলেছিলেন, এবারের নির্বাচনে ফোরামের শক্তিশালী একজন নেতার আচরণ ছিল রহস্যজনক। তিনি পুনঃভোট গণনার বিপক্ষে ছিলেন। আমরা তার সম্পর্কে অনেক গুজব শুনে যাচ্ছি। খুব ইমপর্টেন্ট, শক্তিশালী নেতা। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার আঁতাত ছিল কিনা- এ ব্যাপারে আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে খুব গুঞ্জন আছে। আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি এ ব্যাপারে কি করা যায়।’ 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম