Logo
Logo
×

রাজনীতি

আমাদের সামনে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ: সংসদে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম

Icon

সংসদ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৪, ০৯:৪১ পিএম

আমাদের সামনে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ: সংসদে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম

ফাইল ছবি

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবং সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেছেন, বর্তমানে আমাদের সামনে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর একটি হচ্ছে দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি কমানো। আরেকটি হচ্ছে সুশাসন নিশ্চিত করা এবং শেষটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক কূটনীতি বাংলাদেশের পক্ষে নিয়ে আসা। রোববার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত সংসদ-সদস্য সালমা ইসলাম আরও বলেন, দ্রব্যমূল্য কমাতে হলে শুধু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিলেই চলবে না। ডলার সংকটের সমাধান করতে হবে। কারণ ডলার না থাকলে পণ্য আমদানি করা যাবে না। এতে বাজারে পণ্যের সরবরাহ না থাকলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এমনকি প্রভাবশালী কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও- তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। সবাই যাতে ন্যায়বিচার পায়- তাও নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে। আমেরিকা, চীন ও ভারত-এই তিন দেশই আমাদের রাজনীতি ও অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। সুতরাং কূটনীতিতে ভারসাম্য দরকার। জিএসপি সুবিধা যাতে ব্যাহত না হয়, সেজন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সফল কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। ২০২৬ সালের পর আমরা যখন উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হব, তখন যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে, সেগুলো মোকাবিলার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চিত্র তুলে ধরে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ট্রি-মিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশে পৌঁছানোর অভিযাত্রা ঠিক করেছে। কিন্তু এ অভিযাত্রায় আমাদের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আর্থিক খাতে চরম অ-ব্যবস্থা। খেলাপি ঋণ লাগামহীন গতিতে বেড়েই চলছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবেই এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। ডলার সংকট বাড়ছে। রিজার্ভ ক্রমাগত নিুমুখী। ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগছে। অনেক ব্যাংক রুগ্ণ হয়ে যাচ্ছে। আমি জাতীয় সংসদে এর আগেও বহুবার ঋণখেলাপি, ব্যাংক লুটেরা এবং অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি। আজও একই দাবি জানাচ্ছি। আমি মনে করি ঋণখেলাপি, ব্যাংক লুটেরা এবং অর্থ পাচারকারীরা আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছে। তাই তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, আরেকটি কথা বলতে চাই-ভালো শিল্প উদ্যোক্তাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার শিল্প ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে এনেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তা আবার তুলে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে এই সুদের হার ইতোমধ্যে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এভাবে সুদের হার বাড়লে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। এমনিতেই ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় হু হু করে বাড়ছে। এ অবস্থায় শিল্প ঋণের সুদের হার ওপেন করে দেওয়া মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসাবে দেখা দিয়েছে। আমি আশা করছি শিল্প ঋণের সুদের হার কমাতে শিল্পবান্ধব সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তাহলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা সহজ হবে এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে সরকারকে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, সামনে পবিত্র রমজান মাস। এর মধ্যে সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এমনিতেই সাধারণ মানুষের আয় উপার্জন কমে গেছে। তার ওপর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে। জীবনযাত্রার ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে। চাল, ডাল, আটা, তেল, পেঁয়াজ, চিনি, লবণসহ প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দাম লাগামহীন গতিতে বাড়ছে। সিন্ডিকেটের খপ্পরে এখনো দেশের বাজারব্যবস্থা। প্রধানমন্ত্রী বারবার সিন্ডিকেট ভাঙার কথা বলছেন, কিন্তু তারপরও কোথায় যেন এ উদ্যোগ আটকে আছে। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে যে কোনো মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতেই হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। 

রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে জাতীয় পার্টির নেত্রী সালমা ইসলাম বলেন, এই তো সেদিন বেইলি রোডে নিমর্ম অগ্নিকাণ্ডে অনেকগুলো তাজা প্রাণ ঝরে পড়ল। এর দায় কে নেবে? অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণহানির পর বলা হয় সিলিন্ডার থেকে দুর্ঘটনা ঘটেছে। বলা হচ্ছে এ সিলিন্ডার ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। বলা হচ্ছে ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের অভাব ছিল। কিংবা ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানা হয়নি-এসব বলে প্রতিটি দুর্ঘটনায় দায় এড়ানোর চেষ্টা চলে। প্রাণহানি রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কী পদক্ষেপ নিচ্ছে? দেশের মানুষ তা জানতে চায়। 

নিজের নির্বাচনি এলাকা দোহার এবং নবাবগঞ্জের বিভিন্ন সমস্যা চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, এ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি গ্যাস সংযোগ। ঢাকার পাশেই দোহার এবং নবাবগঞ্জে গ্যাস সংযোগ দিলে সেখানে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা। সৃষ্টি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থান। তাই আমি আমার নির্বাচনি এলাকায় গ্যাস সংযোগের জোর দাবি জানাচ্ছি। ইতঃপূর্বে আমার উদ্যোগে এলাকায় অনেক রাস্তা ঘাট, ব্রিজ কালভার্ট, স্কুল, কলেজ, মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মিত হয়েছে। আরও কিছু কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এসব কাজ দ্রুত শেষ করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহায়তা কামনা করছি।

অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে বর্তমান সরকার মা ও শিশুর মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমিয়ে এনেছে। আমি মনে করি এ মৃত্যুর হারÑআরও কমাতে হলে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন করা অতি জরুরি।

আলোচনার শুরুতে রাষ্ট্রপতি, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নবনির্বাচিত সংসদ-সদস্যদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমেই আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। অগ্নিঝরা মার্চ আমাদের স্বাধীনতার মাস। এ মাসে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সব বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ৩০ লাখ শহিদ এবং ২ লাখ সম্ভ্রম হারা মা-বোনদের। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি লাল-সবুজের রং-তুলিতে আঁকা ৫৬ হাজার বর্গমাইলের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মানচিত্র। 
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি, যিনি আমাকে ২০১৩ সালে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ দিয়েছিলেন। 

তিনি বলেন, আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি আমাদের জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান সাবেক সফল রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। দেশের সার্বিক উন্নয়নে তার রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। পল্লীবন্ধুর নানা দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করাসহ দলকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের। আমি তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞ। আরও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও আমাদের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর প্রতি। 

অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণে আগামী দিনের বাংলাদেশ সম্পর্কে সুনিপুণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আমি তাই তাকে আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমি মনে করি মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণের মধ্যে যেসব দিকনির্দেশনা রয়েছে, সেগুলো যদি আমরা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে আর বিভেদ-বৈরিতা থাকবে না। গণতন্ত্র সত্যিই সুসংহত হবে। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম