‘ডিবি অফিসে কোরাল মাছ খেয়ে পালিয়েছিল কারা’
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:৫১ পিএম
বিএনপির কর্মসূচির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোথায় অক্টোবরের ২৮ তারিখ? সময় ঠিক এরকম। কোথায় ছিলেন এতদিন? কোথায় ছিলেন গয়েশ্বর বাবু? তিনি আজ (শনিবার) পল্টনে হাজির হয়েছেন। বলেছিলেন অলিগলি খুঁজে পাব না, আমরা পালিয়ে যাব! কে পালিয়েছে? ডিবি অফিসে কোরাল মাছ খেয়ে পালিয়েছিল কারা? গয়েশ্বর বাবু অলিগলি খুঁজে পাননি।
তিনি বলেন, দেখতে দেখতে ১৫ বছর। সামনে আরও পাঁচ বছর। মানুষ বাঁচে কয় বছর? কবে হবে আন্দোলন? এই বছর না ওই বছর? রোজার পর না কোরবানির পরে? কবে হবে আন্দোলন? কোন বছর?
শনিবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘শান্তি ও গণতন্ত্র সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
‘বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের’ বিরুদ্ধে দলটির কালো পতাকা মিছিলের দিনে এ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি আবার মাঠে নেমেছে। তারা তো চিরজীবন ভুয়া। আন্দোলন করে ভুয়া হয়ে গেছে। তাদের আন্দোলনে জনগণ সাড়া দেয় না। অবরোধ ডাকে কেউ শুনে না, হরতাল ডাকে রাস্তায় যানজট হয়। বিএনপির আন্দোলন-অবরোধ-হরতাল এক দফা সব ভুয়া। বিএনপি মানেই হচ্ছে ভুয়া।
আরও পড়ুন: ডিবি কার্যালয়ে আপ্যায়ন নিয়ে যা বললেন গয়েশ্বর
আরও পড়ুন: ডিবি কার্যালয়ে গয়েশ্বরকে হারুনের আপ্যায়ন
আরও পড়ুন: আপ্যায়ন ইস্যুতে ডিবিপ্রধানকে একহাত নিলেন গয়েশ্বরকন্যা
বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, বিদেশিদের ভয় দেখান? ৪১.৮ শতাংশ ভোটারের ভোটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়েছে। এ সরকার জনগণের সরকার, নির্বাচিত সরকার। যেখানে ২৮ দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। চীন বা রাশিয়া আমাদের বন্ধু হতে পারে। আমাদের সরকার কোনো বিদেশি শক্তি বসায়নি। বাংলাদেশের জনগণের ভোটে শেখ হাসিনা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে ভালোবাসে। তার মতো জনবান্ধব সরকার আসেনি। আপনারা আস্থা হারাবেন না। আজকে বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা, এমনকি লোহিত সাগরেও যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশে আছে। আমাদের বেশি টাকা দিয়ে আমদানি করতে হয়, বিক্রি করতে হয় কম দামে। ধৈর্যহারা হবেন না। শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রাখুন।
তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বেশি, এটা কমে যাবে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় বসে পুরো টিম নিয়ে নেমে গেছেন জনগণের সংকট লাঘব করতে। তিনি গোটা মন্ত্রিসভাকে কর্মপরিকল্পনা এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে ডাক দিয়েছেন। তার মন্ত্রিসভার কেউ বসে নেই। সবাই কাজে নেমেছে। ইনশাআল্লাহ এভাবে চললে আমরা অচিরেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।
ওবায়দুল কাদের বলেন, রমজানে মানুষের কষ্ট জানি। আমরা জনগণের সরকার। শেখ হাসিনা জনগণের সরকার। আপনাদের সংকট তার হৃদয়ে লাগে। তিনি আঘাত পান। রাত ৩টায় ফোন করে পাওয়া যায়, এমন প্রধানমন্ত্রী পাবেন আর কোথাও? কোন দেশে আছে? দুপুরের খাবার রাতে খান, কোনো কোনো দিন খানও না। আমি এটা বাড়িয়ে বলছি না, সত্য কথা বলছি। এমন প্রধানমন্ত্রী পাওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ অনেক ভাগ্যবান। আস্থা রাখুন, আস্থা হারাবেন না। বিএনপির কথায় কান দেবেন না, এরা ভুয়া।
বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশিদের ডেকে আনে। বিদেশিদের ভয় দেখায়। এদের কোনো দেশপ্রেমে নেই। এরা আটলান্টিকের ওপার থেকে নিষেধাজ্ঞা আনতে চায়, ভিসানীতি আনতে চায়।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পান না। তিনি এ দেশের মানুষ ছাড়া কাউকে পরোয়া করেন না।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি নাকি কালো পতাকা দেখাবে? কাকে দেখাবে? তাদের উচিত ছিলো তাদের দলের ব্যর্থ নেতাদের কালো পতাকা দেখিয়ে বিদায় করে তৃণমূল নেতাদের আনা। তিনি আরও বলেন, বোকারা কী করে? ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। বিএনপিকে আগামী পাঁচ বছর বোকার মতো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে হবে।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ৭ জানুয়ারি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেছেন। আন্তর্জাতিক মহল এ সরকারকে সমর্থন ও অভিনন্দন জানিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি আবার সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছতে চাই। যারা দেশকে পেছনের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করে, তাদের বিষয়ে আপনারা সজাগ থাকবেন। তাদের মাঠে নামতে দেওয়া হবে না। আগামী দিনে অপকর্ম করলে তাদের কোনো ছাড়া দেওয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচনের পর সমস্ত পৃথিবী প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। বিএনপিকে জনগণকে আগেই কালো পতাকা দেখিয়েছে। বিদেশিরা তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি। তারা নানা কায়দা করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু বিদেশিরা বিএনপিকে লাল পতাকা দেখিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ফলে আজকে বিএনপির এই কালো পতাকা মিছিল করে কোনো লাভ নেই।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে, এ দেশে নির্বাচন বয়কট করার রাজনীতি আর চলবে না। এটা ব্যর্থতায় পর্যবশিত হয়েছে। দেশের মানুষ এখন উন্নয়ন চায়। মানুষ এ অপশক্তির বিলীন চায়। তিনি আরও বলেন, বিএনপি এখন দেশের মানুষের কাছে সন্ত্রাসী সংগঠন। সন্ত্রাস করে দেশের মঙ্গল করা যায় না- সেটা প্রমাণিত হয়েছে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইসহাক আলী খান পান্না, সাইফুজ্জামান শিখর, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল, কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, যুব মহিলা লীগ সভাপতি ডেইজী সারোয়ার, সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি, মৎসজীবী লীগের সভাপতি সাইদুর রহমান প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী। সঞ্চালনা করেন দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাইফুন্নবী চৌধুরী সাগর।