যে কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৪৭ এএম
আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা-কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেবে না দলটি।
এসব নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে কোনো সমঝোতাও করবে না ক্ষমতাসীনরা। বরং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে জাতীয় নির্বাচনের মতোই জোট শরিকদের সবাইকে প্রার্থী দিতে উৎসাহ দেবে আওয়ামী লীগ। জোট শরিকরাও নির্বাচনগুলোতে নিজেদের মতো আলাদাভাবে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করেছে।
সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য যুগান্তরকে জানিয়েছেন, সভায় উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সেখানে দলীয় প্রতীকের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দেন নেতারা। তবে বেশির ভাগ নেতা দলীয় কোন্দল ও সংঘাত থেকে নেতা-কর্মীদের দূরে রাখতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক না রাখার পরামর্শ দেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও নেতাদের এই মতামতের প্রতি নিজের সমর্থন জানান।
বৈঠকে নৌকা প্রতীক না দেওয়ার জন্য দুটি কারণ উল্লেখ করা হয়। প্রথম কারণ হলো, সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা এড়ানো ও দ্বিতীয় কারণ হলো, স্থানীয় নির্বাচনকে উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক করা।
যুক্তি তুলে ধরে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সব নেতা বলেন, কদিন আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় তৃণমূলে বিভেদ তৈরি হয়েছে। এখন স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে একজনকে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দিলে অন্যরা স্বতন্ত্র ভোট করবে। এতে বিভেদ আরও বাড়বে। বরং উন্মুক্ত করে দেওয়াই ভালো হবে।
এরপর দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সবার মতামতের প্রতি সমর্থন করেন। তিনি বলেন, আপাতত স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলীয়ভাবে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। এতে ভোট উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক হবে। যিনি জনপ্রিয় প্রার্থী, তিনিই জয়ী হয়ে আসবেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ এবার সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। যারা দলের মনোনয়ন পাননি তাদেরকেও নির্বাচনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল স্বতন্ত্রভাবে। এজন্য আওয়ামী লীগ কারও বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে না এমন ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।
সেই প্রেক্ষিতে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হিড়িক পড়ে। প্রচুর স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং রেকর্ড সংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী এবার নির্বাচনে জয়ী হন। কিন্তু এই জয়ের পরে সারা দেশে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রবল আকার ধারণ করেছে। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক এবং উৎসবমুখর করার জন্যই আওয়ামী লীগ জেনে বুঝে এই ঝুঁকি নিয়েছে।
কিন্তু এই ঝুঁকির পর এখন সারা দেশে আওয়ামী লীগের কোন্দল এবং বিরোধ ছড়িয়ে পড়েছে। এরকম বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের জন্য উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরকম বাস্তবতায় উপজেলা নির্বাচনে দলের কোন্দল এবং বিরোধ কিছুটা প্রশমিত হবে বলে ধারণা করছেন দলীয় নেতারা।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণমূলক দেখানোর কৌশলগত পদক্ষেপ নিইনি, নির্বাচনকে সর্বজনীন করার জন্যই দলীয় প্রতীক থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে উপজেলা পর্যায়ে সঠিক নেতৃত্ব উঠে আসবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে নির্বাচনে প্রতীক না দিলে কারও কিছু বলারও থাকবে না, যোগ করেন তিনি।
নানক আরও বলেন, বিএনপি জামায়াত যদি উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করে তাও আওয়ামী দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবে না। তাছাড়া উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বা দলীয় মনোনয়ন দেওয়া না হলে আইনি কোন জটিলতা হবে না।
এদিকে সিটি করপোরেশন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী মনোনয়ন বা দলীয় প্রতীক না দিলে এ নির্বাচন তুলনামূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে-এমন মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মেয়র বা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী উন্মুক্ত রাখা হলে একই দলের অনেকেই প্রার্থী হতে উৎসাহী হবেন। বিএনপিসহ যেসব দল নির্বাচন বর্জন করছে, সেসব দলের অনেকেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। শুধু তাই নয়, দলনিরপেক্ষ স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদেরও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগ্রহ তৈরি হবে।
বেশিসংখ্যক প্রার্থী অংশ নিলে নির্বাচন যেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে, তেমনই ভোটার উপস্থিতিও বাড়বে। নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরিতে সুবিধা হবে। তবে নির্বাচনে সহিংসতা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রবণতা বাড়ার আশঙ্কাও করছেন।
উদাহরণ হিসাবে তারা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব আসনে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে, সেখানে সহিংসতা ও আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের ঘটনা বেশি ছিল।
আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচনে নৌকা থাকবে না