চট্টগ্রাম-১০ আসন
নৌকার বাচ্চুর অগ্নিপরীক্ষা স্বতন্ত্র মনজুর
মজুমদার নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-ডবলমুরিং) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ-সদস্য মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বাচ্চুর সামনে অগ্নিপরীক্ষা স্বতন্ত্র মোহাম্মদ মনজুর আলম। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাপক নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন সাবেক সিটি মেয়র মনজুর। ফুলকপি প্রতীক নিয়ে তিনি চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনি এলাকার প্রতিটি পাড়া-মহল্লা। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলিতে নৌকার প্রার্থীর মতো শোভা পাচ্ছে তার পোস্টার-ব্যানার। এখানে নয়জন প্রার্থী থাকলেও মাঠের প্রচারণায় এখনও পর্যন্ত এগিয়ে আছেন এ দুই প্রার্থী। চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে যে কয়েকটিতে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্রের কঠিন লড়াই হবে বলে মনে করা হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম এ আসন। ‘হেভিওয়েট’ হিসাবে পরিচিত মনজুর আলমের জন্যই মূলত এখানকার ভোটের লড়াই জমে উঠেছে। তার চ্যালেঞ্জের কারণে এবার আর ফাঁকা মাঠে গোল দিতে পারছেন না ৩০ জুলাইয়ের উপনির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ-সদস্য হওয়া মহিউদ্দিন বাচ্চু।
স্থানীয়দের মতে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর মূল ভরসা দলীয় প্রতীক নৌকা। তার বড় শক্তি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। অপরদিকে মনজুর আলমের রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাংক। ২০১০ সালে বিএনপির সমর্থন নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়া মনজু আবার আওয়ামী লীগে ফিরলেও রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় নন। ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক হিসাবে তার আলাদা পরিচয় রয়েছে। দলীয় পরিচয়ের চেয়ে তার ব্যক্তিগত ইমজেটাই বড়। তিনি নিজেও স্বতন্ত্র বলে পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। সক্রিয় নেতাকর্মীরা বাচ্চুর সঙ্গে থাকলেও আওয়ামী লীগ সমর্থক কিছু নীরব ভোটার মনজুর দিকে ঝুঁকতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম-১০ নির্বাচনি এলাকা। এখানে ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। নবম , দশম ও একাদশ টানা তিনবার জাতীয় নির্বাচনে এখান থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আফসারুল আমিন। তার মৃত্যুর পর শূন্য ঘোষিত আসনটিতে চলতি বছরের ৩০ জুলাই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া মহিউদ্দিন বাচ্চু জয়ী হন। শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় অনায়াসেই তিনি নির্বাচনি বৈতরণী পার হয়ে যান। এই নির্বাচনে ভোট পড়েছিল মাত্র ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। এত কম সংখ্যক ভোটার উপস্থিতির কারণে তখন উপনির্বাচন আলোচনার খোরাক হয়ে উঠেছিল। তাই এবার ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করাই প্রার্থীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। মহিউদ্দিন বচ্চুর জন্য নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাসহ নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছেন।
অপরদিকে মোহাম্মদ মনজুর আলম তিনবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কাউন্সিলর ছিলেন। এরপর ২০১০ সালের চসিক নির্বাচনে রাজনৈতিক গুরু আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়র পদে প্রার্থী হয়ে চমক সৃষ্টি করেন। মহিউদ্দিনকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। চসিকের পরের নির্বাচনেও মেয়র প্রার্থী হন মনজুর। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনের কাছে পরাজিত হন। ওই সময়ই তিনি রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে অবশ্য নিজেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী হিসাবে দাবি করে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরে আসেন। দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে সমাজসেবামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। তাই তার নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে বলে মনে করা হয়। ২০১০ সালের চসিক নির্বাচনে তিনি হালিশহর এলাকায় বিপুল ভোট পেয়েছিলেন। মূলত ওই এলাকার ভোটই তার জয়ের প্রধান ফ্যাক্টর ছিল। অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারও হালিশহর এলাকায় মনজুর আলম ভালো ভোট পাবেন বলে আশাবাদী।
আসনটিতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ মাহমুদও (কেটলি) প্রচারণায় সক্রিয় রয়েছেন। অন্য প্রার্থীরাও সামর্থ্য অনুযায়ী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মহিউদ্দিন বাচ্চু : শনিবার নগরীর ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন মহিউদ্দিন বাচ্চু। এ সময় তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বাঁচলে সমগ্র বাংলাদেশ বাঁচবে। এই বেঁচে থাকার অক্সিজেন সঙ্গে করে নৌকা প্রতীক নিয়ে আমি নির্বাচনি লড়াইয়ে নেমেছি। প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেন, তাকে সম্মান ও সমীহ করি। তবে আমাদের বেঁচে-বর্তে থাকার একমাত্র ঠিকানা শেখ হাসিনা। তার প্রতীক নৌকা। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে আমি এলাকাবাসীর চাওয়া-পাওয়া এবং প্রত্যাশা ও স্বপ্নের কথা জানি। আমি এলাকাবাসীর ভোটে নির্বাচিত হলে জনগণের প্রত্যাশা- প্রাপ্তির মধ্যে সমন্বয় ঘটাব।
মনজুর আলম : স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম শনিবার ৮ নম্বর শুলকবহর ও ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডে গণসংযোগ ও সুধী সমাবেশ করেন।এ সব কর্মসূচিতে সুসম উন্নয়ন ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে ফুলকপি প্রতীকে ভোট চান তিনি। এ সময় মনজুর আলম বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা হবে আদর্শ ও মডেল এলাকা। এখানে কোনো ধরনের সংঘাত, হানাহানি ও বিদ্বেষকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। সব শ্রেণি-পেশার নাগরিকের সমন্বয়ে এলাকাবাসীর কল্যাণ করা হবে। নির্বাচনি এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকব। তিনি বলেন, আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী। আমার কাছে কোনো বৈষম্য নেই। ভোটারদের তিনি ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ফুলকপি প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।