খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে: ব্যক্তিগত চিকিৎসক
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:১৬ পিএম
ফাইল ছবি
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেন।
শনিবার গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, বিএনপির নেত্রীর স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি হলেও তাকে এখনো চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখতে হচ্ছে। ফলে তার হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
জাহিদ হোসেন বলেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করার পর নানা জটিলতা দেখা দিয়েছিল। এখন জটিলতাগুলো কমে এসেছে এবং খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের জটিলতাগুলো কমে এলেও চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রাখতে হচ্ছে, বাসায় সার্বক্ষণিক এ ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। সে কারণে তাকে হাসপাতালেই থাকতে হচ্ছে। তার স্বাস্থ্যের আরও কিছুটা উন্নতি হলে তাকে বাসায় নেওয়া না–নেওয়ার প্রশ্নে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকেরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
গত ৯ আগস্ট থেকে চার মাসের বেশি সময় ধরে খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট, চোখের সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে তার পরিবার থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও অনুমতি পাওয়া যায়নি। তাকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিএনপি বেশ কিছুদিন রাজপথে আন্দোলনও করেছে।
এমন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে বিএনপি নেত্রীর রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয় গত ২৭ অক্টোবর। অস্ত্রোপচারের পরদিনই বিদেশি চিকিৎসকেরা ফেরত গেছেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা ঢাকায় খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে চিকিৎসা দিচ্ছেন। অস্ত্রোপচারের পর কমপক্ষে চার সপ্তাহ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা।
চিকিৎসকরা বলেছেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যে জটিলতা কিছুটা কমাতে রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রক্তনালিতে অস্ত্রোপচারের প্রভাবেও তার স্বাস্থ্যে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। এসব জটিলতা কখনো কমছে, আবার কখনো কিছুটা বাড়ছে।
খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন না করা পর্যন্ত তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। কারণ রক্তনালিতে অস্ত্রোপচারের বিষয়কে সাময়িক চিকিৎসা হিসেবে উল্লেখ করেন চিকিৎসকরা।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর ২০২০ সালের ২৫শে মার্চ তাকে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়।
২০২১ সালের এপ্রিলে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে কয়েকবার নানা অসুস্থতার কারণে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। গত বছরের জুনে বুকে ব্যথা অনুভব করলে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়।
চলতি বছরের ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে সময় হাসপাতালে পাঁচদিন চিকিৎসা শেষে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। সর্বশেষ গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে। এরপর থেকে হাসপাতালে রয়েছেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুই মামলায় তিনি কারা ভোগ করছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাকে সাত বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর নাইকো মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।