বিএনপির নেতৃত্বকে একহাত নিলেন মেজর আখতারুজ্জামান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:০৭ পিএম
হাইকোর্টে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন নাকচ করার প্রতিবাদ না করায় দলটির নেতৃত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন বহিষ্কৃত নেতা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন। যিনি আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র এই প্রার্থী বলেন, আমি বিএনপির বর্তমান কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্রোহ করেছি। আমি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করেছি। উনি যেভাবে দলকে চালাচ্ছেন, সেভাবে দলের সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার, লাখ লাখ নেতাকর্মী আজ গৃহহারা, তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
আখতারুজ্জামান বলেন, শূন্য নেতৃত্ব দিয়ে আর কতদিন চলবে বিএনপি? ফাঁকা বুলিতে আর কতদিন চলবে? মহাসচিবকে হাইকোর্ট থেকে জামিন দেয় না, আর আঙ্গুল চোষে তারা!
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে মনোনয়ন বাতিলের আপিল শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুলের জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়া নিয়ে বিএনপির এই বহিষ্কৃত নেতা আরও বলেন, আমাদের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো ভদ্রলোককে উচ্চ আদালত জামিন দেয়নি। এর চেয়ে নির্মমতা আর কী হতে পারে। কেন আমরা এমন একটা কাজ করলাম যে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করবে। কেন আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই কর্মীদের ওপর? কী রাজনীতি করি আমরা? আজকে আমার মহাসচিব হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেন না। কেন হাইকোর্টের জামিন না দেওয়ার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার দিন আলাদা হরতাল দেওয়া হলো না? কিসের দল করেন আপনারা?
নিজের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ইসি থেকে আমাকে জানানো হয়েছে- আমি মামলা সম্পর্কে লিখিনি। এটা যদি লিখতে হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বড় বড় রাঘববোয়াল সব নেতারা বাদ পড়বে। এত হাজার হাজার কেস জীবনে খেয়েছি এবং আরও খাচ্ছি। কোথাও লেখার জায়গা নেই। লেখা আছে অতীত সব মামলা। অনেক মামলায় তো নেতারা খালাস পেয়েছেন। আমরা যেসব মামলায় খালাস পেয়েছি, সেসব কেন লিখতে হবে? উনারা লিখবে না, তাহলে আমরা লিখব কেন? এটা তারা মনে হয় সঠিক করেনি।
প্রার্থিতা ফেরত পাবেন কিনা- জানতে চাইলে আখতারুজ্জামান বলেন, প্রার্থিতা ফেরত পাব না কেন? পাব বলেই তো আপিল করেছি। অবশ্যই প্রত্যাশা করি পাব।
এক প্রশ্নের জবাবে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান বলেন, আমাকে দেড় বছর ধরে বহিষ্কার করে রেখেছে বিএনপি। তাহলে আমি বিএনপির সিলটা কেন ব্যবহার করতে যাব? ব্যবহার করা অন্যায় ছিল। আমাকে ন্যূনতম সদস্যও রাখা হয়নি। আমি স্বতন্ত্র হয়েছি, বিরোধিতায় তো যাইনি। এটা আবার কি অপরাধ হলো?
উল্লেখ্য, এবার পঞ্চমবারের মতো দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার অভিযোগে আখতারুজ্জামান রঞ্জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলের সব পর্যায়ের পদ থেকেও তাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এর আগেও এমন সব অভিযোগে দল থেকে চারবার বহিষ্কৃত হন।
তবে বিএনপি দলীয় প্রার্থী হিসেবে ১৯৯১ সালে পঞ্চম এবং ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া বিগত নির্বাচনসহ দুটি নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসন থেকে বিএনপি দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক আইজিপি ও রাষ্ট্রদূত নূর মোহাম্মদের কাছে হেরে যান তিনি।