হাতকড়া-ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালের মেঝেতে যুবদল নেতার চিকিৎসা!

যশোর ব্যুরো
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১০:২৯ পিএম

হাসপাতালের মেঝেতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে কাতরাচ্ছেন যুবদল নেতা। অসুস্থ অবস্থায় পা দুটি ভাঁজ করে শুয়ে আছেন। পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরা। দুই পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি থাকায় পা সোজাও করতে পারছেন না। এছাড়া এক হাতে ঝুলছে হাতকড়া। অন্যহাতে ইনজেকশনের ক্যানোলা। দুই পায়ের মাঝখানে পড়ে আছে ‘ক্যাথেটার’। রক্তমিশ্রিত প্রস্রাব সেখানে জমা হচ্ছে। ডাণ্ডাবেড়ি আর হাতকড়া পরিয়ে যুবদল নেতাকে চিকিৎসা দেওয়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছড়িয়ে পড়া ছবির ব্যক্তির নাম আমিনুর রহমান মধু। তিনি যশোর জেলা যুবদলের সহসভাপতি। তিনি সদর উপজেলার আমদাবাদ ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাহিত্য ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক। হাতকড়া পরা আমিনুরের ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। আমিনুরের পরিপূর্ণ চিকিৎসায়ও বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবারের।
এ বিষয়ে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার শরিফুল আলম বলেন, আমিনুর রহমান মধু অসুস্থ হওয়ায় তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে ঢাকার হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিল। মঙ্গলবার তাকে রিলিজ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। বিকালে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে এসেছে।
তিনি বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী সব বন্দিকে বাইরে নিলে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়। তার ক্ষেত্রেও সেটি করা হয়েছে। এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।
জানা যায়, গত ২৯ অক্টোবর রাতে যশোর-নড়াইল রোডে দুটি বাসে হামলার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ জেলার শীর্ষ ৮৭ নেতাকে আসামি করে মামলা দেয় পুলিশ। ওই মামলায় আসামি ছিলেন যুবদল নেতা আমিনুর রহমান মধু। এরপর হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির আরও দুটি নাশকতা মামলার আসামি ছিলেন তিনি। গ্রেফতার আতঙ্কে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।
গত ২ নভেম্বর সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের আমদাবাদ গ্রাম থেকে পুলিশ আমিনুরকে আটক করে। এরপর ১২ নভেম্বর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা অবস্থায় আমিনুর রহমান হৃদরোগে আক্রান্ত হন। কারাগার থেকে তার দুই পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি, হাতকড়া লাগিয়ে প্রথমে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ওই রাতেই তাকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন ১৩ নভেম্বর কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে স্বজনদের তার সান্নিধ্যে যেতে দেয়নি পুলিশ। এমনকি সময়মতো তাকে ওষুধ সেবন পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করছেন স্বজনরা।
মধুর স্ত্রী নাহিদা সুলতানা লাবনী বলেন, ‘পরিবারের অভিভাবক গুরুতর অসুস্থ হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আমি আমার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন। এমতাবস্থায় তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না। তার ওপর কত অমানবিকভাবে দুই পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি ও হাতে হাতকড়া পরিয়ে রেখেছে। তিনি জানান, আজ (বুধবার) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার এনজিওগ্রাম করার কথা বলেছিল। এজন্য তাকে মঙ্গলবার পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রাখতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই কারা কর্তৃপক্ষ তাকে জোর করে হাসপাতাল থেকে কারাগারে নিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ গফুর জানান, বিষয়টা খুবই অমানবিক। একজন হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে এভাবে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে রেখে চিকিৎসা দেওয়া মোটেও সমীচীন নয়।
চলতি বছরের শুরুতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্ট ডাণ্ডাবেড়ি ও হাতকড়ার অপব্যবহার রোধ করতে পুলিশের মহাপরিদর্শক ও কারা মহাপরিদর্শক বরাবর আইনি নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশে বলা হয়, যদি কোনো শক্তিশালী বন্দি সহিংস অপরাধে অভিযুক্ত হন বা কুখ্যাত হিসাবে পূর্বপরিচিত হন বা অসুবিধা সৃষ্টিতে উš§ুখ থাকেন বা রাস্তা দীর্ঘ হয় বা বন্দির সংখ্যা অনেক বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে হাতকড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। হাতকড়া না থাকলে দড়ি বা কাপড় ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। প্রবিধানের কোথাও ডাণ্ডাবেড়ি ব্যবহারের কথা নেই।