হালুয়া-রুটির লোভে গণভবন-বঙ্গভবনে ছুটছে কিছু লোক: রিজভী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:২৬ পিএম
হালুয়া-রুটির ভাগ পেতে কিছু লোক গণভবন-বঙ্গভবনে ছুটছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘দেশের জনগণ তফশিল প্রত্যাখ্যান করেছে। এ কারণে মঈন-ফখরুদ্দিনের মতো তথাকথিত কিংস পার্টি, ভুঁইফোঁড় পার্টি, ড্রিংকস পার্টি, ছিন্নমূল পার্টি তৈরি করে তাদের দিয়েই তামাশার নির্বাচন মঞ্চস্থ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এজেন্সিগুলোকে মাঠে নামিয়ে লোক ভাগিয়ে তথাকথিত কিংস পার্টি গঠন করছে। এখন বিভিন্ন দল থেকে নেতা কিনতে গরুর হাটের মতো দরদাম চলছে। বহু নেতাকে চাপ-প্রলোভন-ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। ছলেবলে কৌশলে, টোপ দিয়ে কাউকে কাউকে ভাগানো হচ্ছে।’
বুধবার বিকালে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘দেশের মানুষ যখন ভোট প্রয়োগের অধিকার হারিয়েছে, তখন আত্মা বিক্রি করা কিছু লোক সামান্য খুদ-কুঁড়োর লোভে বিবেক-বিবেচনাহীনভাবে তামাশার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এসব রদ্দি মার্কা বেইমান দলছুটরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। কিন্তু এসব রং বদলানো পরজীবী রাজনীতিবিদরা জনগণের সংকেত বার্তা টের পাচ্ছেন না। জনগণ খুব শিগগিরই সরকারের সিংহাসন ধুলোয় লুটিয়ে দেবে। জনগণের সেই পদচিহ্ন লক্ষ্য করতে পারছে না এ নব্য রাজাকাররা।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রকামী কোটি কোটি মানুষকে মাফিয়া চক্রের নিপীড়নের মুখে ঠেলে দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের তফশিল নাটক স্রেফ ভাগ-বাটোয়ারার নির্বাচনকে বৈধতার সিলমোহর দেওয়ারই কারসাজি মাত্র। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব আর নুরুল হুদার দেখানো ভাঁওতাবাজির নির্বাচনের পথেই হাঁটছে কাজী আউয়াল কমিশন।’
রিজভী বলেন, ‘গণবিচ্ছিন্ন এ সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের বদলে অতীতের মতো প্রহসন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে জুলুম-নির্যাতন, চক্রান্ত, নাশকতা ও মিথ্যাচারের পথ বেছে নিয়েছে। চলছে জুলুম, উৎপীড়নের বহুমাত্রিক তৎপরতা। মাফিয়া চক্র গণতন্ত্রকামী জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। গণতন্ত্রের শেষ চিহ্ন মুছে দিতে গেস্টাপো বাহিনীর কায়দায় গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। গ্রেফতার করছে। দেশের প্রতিটি জনপদ-গ্রাম-গঞ্জ-শহর-বন্দরে গ্রেফতার আতঙ্কের ভয়ার্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। একাত্তরের যুদ্ধকালীন সময়ের মতো। সরকার পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি হেলমেট বাহিনী নামিয়েছে। সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় নেতাকর্মীদের বেছে বেছে তাদের বাড়িতে হেলমেট বাহিনী হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালাচ্ছে। গুপ্ত হামলা, বোমা হামলা চালাচ্ছে। গণতন্ত্রপন্থিদের ধরে নির্যাতন করে পুলিশে দিচ্ছে। আবার আটক বাণিজ্য করছে।’
তিনি বলেন, ‘২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে ১৩ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আওয়ামী হানাদার বাহিনীর আক্রমণে সারা দেশে বিএনপির প্রায় দুই কোটি নেতাকর্মী ঘরছাড়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, আদালত, বিচারক সবাইকে প্রধানমন্ত্রীর তল্পিবাহকে পরিণত করা হয়েছে। এই তল্পিবাহকরা মনে করছেন শেখ হাসিনাই হলো আইন। র্যাবের মতো গোয়েন্দা পুলিশও এখন মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এদের নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগের দলীয় অনুগত উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা। গণভবন-বঙ্গভবনে খোলা হয়েছে কমান্ড সেন্টার।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘একতরফা নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। আমলা ও পুলিশের মতো দেশের বিচারকরাও দুর্বার গতিতে অন্ধ-অবিচারে কাজ করে যাচ্ছে। আমলা, পুলিশ ও বিচারকরা একত্রে দ্রুত ও দর্পিত পদক্ষেপে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের নির্দেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় সাজা দেওয়া হচ্ছে। বিচারের নামে ক্যামেরা ট্রায়াল ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আদালতে সাজানো সাক্ষীর মুখে শেখানো বুলি শিখিয়ে এবং দীর্ঘক্ষণ আটকিয়ে রেখে কক্ষে কক্ষে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের আদলে নির্দয় ব্যবহার করা হচ্ছে।’
রিজভী বলেন, গত ৪০ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় করা ২৬টি মিথ্যা মামলায় কথিত বিচার কার্যক্রমের নামে বিএনপির ৪১৫ নেতাকর্মীকে সাজা দিয়েছেন ঢাকার আদালত। এখন গায়েবি মামলার মতো গায়েবি সাজা দেওয়া হচ্ছে। আগে মৃত ব্যক্তি কবর থেকে উঠে ভোট দিত। আর এখন মৃত ব্যক্তিকে সাজা দেওয়া হচ্ছে। বিরোধী দল করলে মরেও শান্তি নাই।’
তিনি বলেন, মঙ্গলবার বিকাল থেকে বুধবার বিকাল পর্যন্ত সারা দেশে ৫১৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময়ে ২১ মামলায় ২ হাজার ৩১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ১২০ জন।