Logo
Logo
×

রাজনীতি

আ.লীগ কি ‘বিদেশি চাপ’ উপেক্ষা করেই নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে?

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:০৭ পিএম

আ.লীগ কি ‘বিদেশি চাপ’ উপেক্ষা করেই নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে?

বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ‘বিদেশি চাপ’ উপেক্ষা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে দৃশ্যত মনে করা হচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় রাজনৈতিক সংঘাতের পর থেকে একদিকে বিরোধী দল বিএনপির নেতা-কর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড় করা হচ্ছে, অন্যদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি মাসের মাঝামাঝি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে।

পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের তাগাদা দেওয়া হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি সেটি নাকচ করে দিয়েছেন।

‘আপাত দৃষ্টিতে এখন মনে হচ্ছে তারা উপেক্ষা করতে চাইছে,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত বেশ শক্ত ভাষাতেই বলেছেন যে কোন ধরনের আলাপ-আলোচনার সুযোগ নেই। তবে অনেক মন্ত্রী আবার আলাপ-আলোচনার বিষয়টি একেবারে বাতিল করে দিচ্ছেন না।

বিএনপি বলছে, সরকারের পদত্যাগের পর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানলে তারা সংলাপে যাবে না। আর আওয়ামী লীগ বলছে, শর্তহীনভাবে সংবিধানের মধ্যে থেকে আলোচনায় রাজি থাকলে সংলাপে যেতে আপত্তি নেই তাদের।

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, যে কোন ধরনের আলোচনা কিংবা সংলাপের উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংলাপ সফর হওয়ার নজির দেখা যায় না।

বাংলাদেশের সাবেক কূটনীতিকরা মনে করছেন, আপাত দৃষ্টিতে তারা মনে করছেন আওয়ামী লীগ আসলে আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করেই নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে চাইছে।

সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলেন, এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে যে সরকার আসলে বৈদেশিক চাপ উপেক্ষা করারই চেষ্টা করছে। কারণ আন্তর্জাতিক চাপ যতই থাকুক না কেন, দুই দল সংলাপে বসতে না চাইলে তাদের সেই চাপ বা পরামর্শ কিছুই কাজে লাগবে না।

সংলাপের পাশাপাশি যে বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে সেটি হলো ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের’ উপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন প্রক্রিয়ার আহবান জানিয়েছেন। মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক গত ২ নভেম্বর নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এটি জানিয়েছেন।

এছাড়া গত ৩১ অক্টোবর ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে। সেখান ব্রিটিশ হাইকমিশনার অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির উপর জোর দিয়েছেন।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়টিকে বিভিন্ন মহল ভিন্ন ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছে। আওয়ামী লীগ মনে করে, নির্বাচনে ভোটারদের ‘অংশগ্রহণ’ থাকলে সেটিকে ‘অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন বলা হয়।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বড় দুটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন অংশগ্রহণ না করলে সেই নির্বাচনকে ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ বলা যাবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরিন মনে করেন, বিএনপি নির্বাচনে না আসলেও আওয়ামী লীগ চেষ্টা করবে অন্যান্য দলগুলোর অংশীদারিত্বের মধ্য দিয়ে একটা নির্বাচন করতে এবং বহির্বিশ্বের কাছে প্রচার করতে যে সে নির্বাচন ‘অংশগ্রহণমূলক’ হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরিন বলেন, কূটনৈতিক চাপকে মোকাবেলা করার জন্য আওয়ামী লীগ তাদের নিজস্ব কৌশল হাজির করেছে এবং বিএনপিকে নেতৃত্ব শূন্য করার মাধ্যমে এই কৌশলের দিকে তারা এগোচ্ছে।

গ্রেফতারের কারণে বিএনপির অনেক নেতা জেলে রয়েছে আর বাকিদের অনেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন।

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এমন অবস্থায় বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। বিএনপিও বরাবরই বলে আসছে যে তারা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না।

কোন দিকে যাবে রাজনীতি?

সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যদি থাকতে হয়, তাহলে তাদের মতামত বা চাপকে গুরুত্ব দিতে হবে। সেটা দেওয়া না হলে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সুসম্পর্ক বা সহযোগিতার জায়গাটা প্রত্যাশিত পর্যায়ে নাও থাকতে পারে।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন মনে করেন, আন্তর্জাতিক চাপ আসলে কতটা থাকবে এবং আওয়ামী লীগ সেটা কতটুকু সামাল দিতে পারবে সেটাই মূল প্রশ্ন।

তৌহিদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ যদি মনে করে যে চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে তারা ‘পারবে’ বলে মনে করে তাহলে তারা চাপ মানবে না এবং একটা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, এই নির্বাচনটা হবে মোর লাইক ২০১৪। এমন হতে পারে হয়তো এবার দেড়শ সিট তারা (আওয়ামী লীগ) বিনা প্রতিযোগিতায় করে নিবে না। কিন্তু প্রতিটি সিটেও যদি নির্বাচন হয় যেটা এর আগেও হয়েছিল ‘অদ্ভুত’ নির্বাচন, সেটা হলেও এটা অংশগ্রহণমূলক হবে না, কারণ বিএনপি অংশ নেবে না।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সংলাপে বসতে দুই পক্ষেরই অনমনীয় মনোভাবের শক্ত কারণ রয়েছে। যদিও সেগুলোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে কারণ হচ্ছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে তারা জানে যে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে কোন ফায়দা হবে না। ওই নির্বাচন মাত্র ছয়টি আসন পেয়েছিল দলটি। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস অনুযায়ী, কোন একটি দলকে ক্ষমতায় রেখে তার অধীনে নির্বাচন হলে সেটি সুষ্ঠু হওয়ার কোন দৃষ্টান্ত নেই।

‘বিদেশি চাপ’ উপেক্ষা করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভবিষ্যতে রাজনীতিতে কোন দিকে মোড় নেবে?

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো সরকারের উপর চাপ দিলেও রাশিয়া ও চীন বলেছে যে তারা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবে না। একই সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হচ্ছে ভারত। আর ভারতের জন্যও আওয়ামী লীগের সরকার গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তারা এখনো বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে কোন কিছু বলেনি। তাই ভবিষ্যতে এই দেশটির ভূমিকা কী হয়, সেটি গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করেন মি. হোসেন।

যা বলছে আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগ নেতা ও সরকারের মন্ত্রীরা এখনো পর্যন্ত যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, তাতে ‘নমনীয়তার’ কোন আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। দলটির নেতারা ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ক্রমাগত খোলামেলা সমালোচনা করে চলেছেন।

আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, বিদেশি কূটনীতিকরা ‘বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের’ পক্ষে কথা বলায় সেটি শোনার মতো কোন অবস্থা নেই।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ২৮ অক্টোবর সংঘাত, হরতাল ও অবরোধের সময় যেসব সহিংসতার জন্য বিএনপিকে দায়ী করেছেন।

হানিফ বলেন, আমাদের দল মনে করে, কোন ধরনের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোন আলোচনার প্রয়োজন নেই। সন্ত্রাস দমনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, তারাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বিদেশি চাপের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোন রাষ্ট্রের সঙ্গেই বৈরিতা চায় না, সবার সঙ্গেই বন্ধুত্ব চায়। তবে সম্প্রতি বিদেশিরা বিশেষ করে কয়েকটি দেশের কিছু কর্মকর্তারা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করেছে যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। তাদের কথাবার্তা এবং ভূমিকা একটি দলের পক্ষ হয়ে ‘মুখপাত্রের’ মতো হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

‘বিদেশি চাপ’ উপেক্ষা করা হলে দেশের উপর কোন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব আসতে পারে কী-না এমন প্রশ্নের উত্তরে মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, কী আসতে পারে, না পারে, তা জানি না।

তবে যদি বিদেশি কোন দেশ তাদের কোন ‘ব্যক্তিগত এজেন্ডা’ বাস্তবায়নের জন্য বা কোন দলের পক্ষ নিয়ে যদি চাপ প্রয়োগ করে তাহলে সেটি মোকাবেলা করা হবে বলে তিনি জানান।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম