সংঘর্ষ-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ
সত্য উদ্ঘাটনে তথ্য সংগ্রহ করছে বিএনপি
হার্ডলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত স্থায়ী কমিটির * যেসব তথ্য-উপাত্ত হাতে এসেছে তাতে মনে হচ্ছে ঘটনা পরিকল্পিত
তারিকুল ইসলাম
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষ-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনে কমিটি করেছে বিএনপি। তারা স্থিরচিত্র, ভিডিও, গণমাধ্যমের খবরসহ নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে। দলটির নেতারা মনে করছেন, এসব ঘটনার দায় সরকার বিএনপির ওপর চাপাতে পারে। কিন্তু ঘটনাগুলো যাদের বিশ্বাস করানো দরকার, তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না। কারা জড়িত তা দেশের জনগণ ও বিদেশিদেরও জানা দরকার। তাই দলের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু যুগান্তরকে বলেন, ‘শনিবার শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ ছিল। লাখ লাখ নেতাকর্মী এতে অংশ নেন। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত ছিলেন না। গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ এসব কারা করেছেন তা স্পষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরও বেরিয়েছে। দলের পক্ষ থেকে প্রকৃত সত্য উদঘাটনে কাজ চলছে।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের সাবেক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি তথ্য সংগ্রহের কাজ করছেন। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতা, আইনজীবীরাও আছেন। তারা বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্রসহ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করেছেন। কাজ শেষ করে বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তা উপস্থাপন করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য ও একাধিক ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহাসমাবেশ থেকে একটি কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল দলের। কিন্তু সমাবেশ পণ্ড করার ঘটনায় তারাও হতবাক। এমন ঘটনার জন্য দল প্রস্তুত ছিল না। অতীতের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন ও কোনো উসকানিতে পা না দেওয়া-এমন নির্দেশনা দিয়েই নেতাকর্মীদের ঢাকার কর্মসূচিতে অংশ নিতে বলা হয়েছিল।
এমনকি সরকারকে আরও নিশ্চিত করার জন্য সাংগঠনিক জেলায় চিঠি দিয়েও বলা হয়, নেতাকর্মীরা মহাসমাবেশ শেষ করার পর নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান নেবে। নেতারা মনে করেন, অনুমতির পরও উসকানি দিয়ে মহাসমাবেশ পণ্ড করে দেওয়ার ঘটনা সরকারের পরিকল্পিত। কারণ, শুরু থেকে সরকার একটি শঙ্কায় ভুগছিল যে, তাদের বিরুদ্ধে রাজপথে জনরোষ সৃষ্টি হয় কি না। তাই এ ধরনের মহাসমাবেশ বা জমায়েত জনস্রোতে পরিণত হতে পারে, সে আশঙ্কা ছিল সরকারের। সেটি থামাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে মহাসমাবেশ পণ্ড করতে পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মহাসমাবেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা ও গুলি চালিয়েছে। এ ঘটনায় সরকারের জনবিচ্ছিন্নতার যে দুর্বলতা, সেটি প্রকাশ পেয়েছে। জনগণকে তারা ভয় পায়। তাই রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে জনগণের দাবির বিরুদ্ধ অবস্থান নিয়েছে। এটা সাময়িক, এটা করে টিকে থাকা সম্ভব নয়।’
বিএনপির নেতারা বলছেন, তাদের ধারণায় ছিল জামায়াতের কর্মসূচিতে বাধা দিতে পারে, যার প্রভাব বিএনপি মহাসমাবেশেও পড়তে পারে। সেজন্য আগে থেকেই দু’দলই তাদের নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু প্রধান অতিথিসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বক্তব্যের আগেই পুলিশ পুরো মহাসমাবেশ এভাবে সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পণ্ড করে দেবে, এমনটি ভাবনায় ছিল না।
নেতারা মনে করেন, এতে সরকার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ বিএনপির আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে সহিংসতা এড়িয়ে সব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল করেছে। যা দেশের জনগণসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে। তবে তারা মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে সারা দেশের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছেন, যা মহাসমাবেশে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জমায়েতের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে। মহাসমাবেশ পণ্ড করার ঘটনায় সরকারের দমনপীড়ন আরও স্পষ্ট হয়েছে। সরকারি দল পুলিশ বাহিনীকে কীভাবে ব্যবহার করেছে, সেটিও প্রমাণিত হয়েছে।
অবশ্য পুলিশের এক সদস্য নিহত হওয়া, বাসে আগুন দেওয়া, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনা নিয়ে দুশ্চিন্তাও আছে দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তথ্য সংগ্রহের কমিটিতে থাকা এক নেতা জানান, এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য-উপাত্ত তারা সংগ্রহ করেছেন তাতে ঘটনা পরিকল্পিত বলে মনে হচ্ছে। আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। জনগণকে শতভাগ সত্য তথ্য জানাতে চাই।
চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় হার্ডলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির : এদিকে সরকারের ভূমিকা ও চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে হার্ডলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। রোববার বিকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সূত্র জানায়, শনিবারের সমাবেশ পণ্ড করার জন্য সরকারকে দায়ী করেছে স্থায়ী কমিটি।
দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, সমাবেশ পণ্ড করা থেকে শুরু করে প্রতিটি ঘটনা সরকারের ছক অনুযায়ী হচ্ছে। এখানে বিএনপি চাইলেও আর শান্তিপূর্ণ পথে কোনো কর্মসূচি করতে পারবে না। আন্দোলন কর্মসূচি এগিয়ে নিতে একটি গাইডলাইন সারা দেশে পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, চলমান আন্দোলনে ফলাফল আসবে। কিন্তু তার আগে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সবাই গ্রেফতার হতে পারেন। সেজন্য সম্ভাব্য সব ধরনের কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে। কে কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে তাও বলা আছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সর্বত্র বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন।