Logo
Logo
×

রাজনীতি

ছাড় দেবে না আ.লীগ, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মিছিল-সমাবেশ শুরু

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৩৫ পিএম

ছাড় দেবে না আ.লীগ, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মিছিল-সমাবেশ শুরু

ছবি: প্রতীকী

বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটেই মহাসমাবেশ করার বিষয়ে অনড় আওয়ামী লীগ। দুই লাখ লোক সমাগমের মাধ্যমে বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলটি নেতাকর্মীরা। ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি ঘিরে বিএনপিকে কোনো ধরনের ছাড় না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। আন্দোলনের নামে বিএনপি যদি কোনো ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করার পরিকল্পনাও আছে দলটির।

দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা পালটা আঘাতের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। এ বিষয়ে যথাযথ দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের। পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখ, অলিগলি ও মোড়ে মোড়ে সতর্ক অবস্থান শুরু করেছে বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও সমাবেশ করেছে তারা। এদিন সকাল থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অন্য যে কোনো দিনের চেয়ে বেশি নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সম্মেলনের স্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট, অনলি ওয়ান ভেন্যু আই ম্যানশন। যেটা বলেছি সেটাই। তিনি আরও বলেন, কথা একটাই বলছি-‘দ্য আনসার অব ভায়োলেন্স ইজ ভায়োলেন্স, নট সাইলেন্স। আর কিছু নয়। আমি নেগেটিভ কিছু বলতে চাই না। আমি যা বলেছি, ভালোটা বলেছি।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে অবস্থান নিয়েছেন। আমরা বিশৃঙ্খলা চাই না। কিন্তু কোনোভাবেই বিএনপি-জামায়াতের মতো অপশক্তিকে রাজপথ দখলের সুযোগ দেব না। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা হলে তা অবশ্যই প্রতিহত করা হবে।

একই বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির যুগান্তরকে বলেন, তারা যদি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করে আমরা কোনো বাধা দেব না। কিন্তু কর্মসূচির নামে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করলে ছাড় দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: আমি মির্জা ফখরুলকে অনেক ভালো জানতাম, কিন্তু...

২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকা পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। ওইদিন বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন কোনোভাবেই ঢাকা দখল করতে না পারে। সেজন্য ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি থাকবে। ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে আলাদা দৃষ্টি রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মূলত বিএনপি বড় ধরনের অঘটন ঘটাতে পারে এমন শঙ্কা থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। তবে অকারণে বিএনপির সঙ্গে বিশৃঙ্খলায় না জড়ানোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে দলের হাইকমান্ড থেকে। কর্মসূচি ঘিরে যদি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে-তাহলে পালটা জবাব দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। যদি অবস্থান কর্মসূচির মতো বসে পড়ে তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে শক্তি প্রয়োগ করবে দলের নেতাকর্মীরাও।

এদিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ২০ অক্টোবর পুলিশের কাছে চিঠি দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ। ওই চিঠির জবাবে বুধবার রাতে বিকল্প দুটি স্থানের নামসহ সাত তথ্য চায় পুলিশ। সেই চিঠিতে সমাবেশে আগত লোকের সংখ্যা, সময়, বিস্তৃতি, কোন কোন স্থানে মাইক লাগানো হবে, অন্য দলের কেউ উপস্থিত থাকবেন কিনাসহ সাতটি তথ্য জানতে চাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিকালে সেই চিঠির জবাবও দেয় আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের পক্ষে রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজের দেওয়া চিঠিতে সমাবেশের বিস্তৃতির বিষয়ে বলা হয়, সমাবেশটি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে পল্টন মোড়, জিপিও মোড়, শিক্ষা ভবন, গোলাপ শাহ মাজার, নগরভবন, নবাবপুর সড়ক, মহানগর নাট্যমঞ্চ সড়ক, দৈনিক বাংলা মোড় এবং মতিঝিল সড়ক ও স্টেডিয়াম সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। সমাবেশে বক্তব্য প্রচারের জন্য এসব স্থানে মাইক লাগানো হবে।

চিঠিতে বলা হয়, সমাবেশে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী, সমর্থক, নারী সংগঠন, তরুণ প্রজন্ম ও সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করবেন। সমাবেশে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে।

চিঠিতে বলা হয়, ২৮ অক্টোবর (শনিবার) শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি (মঞ্চনির্মাণ ও প্রচার-প্রচারণার কার্যক্রম) ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এমতাবস্থায় স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্য কোনো ভেন্যুতে নতুনভাবে সমাবেশের প্রস্তুতি গ্রহণ করা দুরূহ ব্যাপার। আওয়ামী লীগের এ সমাবেশ করছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। সমাবেশস্থল ও তার কাছাকাছি এলাকায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ে সহযোগিতা দিতে পুলিশের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে।

এদিকে ২৮ তারিখকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ডে মিছিল-সমাবেশ করেছে দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের মিছিল-সমাবেশে বক্তারা আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপি-জামায়াতের যে কোনো অশুভ অপতৎপরতা রুখে দেওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং সব নেতাকর্মীকে সশরীরে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেন।

কর্মসূচির বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ যুগান্তরকে জানান, এদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মিছিল হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার নেতৃত্বে ঢাকা-৪ আসনের শ্যামপুরে, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মন্নাফীর নেতৃত্বে ঢাকা-৫ আসনে, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে ঢাকা-৮ আসনে এবং ইমরান হোসেন জনের নেতৃত্বে বংশাল থানার অন্তর্গত ৩২নং ওয়ার্ডে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অন্যদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার বাপ্পি যুগান্তরকে জানান, পূর্বনির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ উত্তরা, মিরপুর, মিরপুর-১০, মিরপুর-১৩ শাহআলী থানা, দারুসসালাম থানা ও শেওড়াপাড়াসহ আরও বেশ কিছু স্থানে মিছিল সমাবেশ করেছে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের মিছিল : সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুর নেতৃত্বে মিরপুর বিআরটিএ অফিসের সামনে থেকে মিছিল বের করে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। মিছিলটি শেওড়াপাড়া হয়ে মিরপুর গোলচত্বরে এসে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি সুব্রত পুরকায়স্থ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ইসহাক মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান নাঈম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ প্রমুখ।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় মিরপুর শেওড়াপাড়া থেকে আওয়ামী লীগ নেতা এসএম জাহিদের নেতৃত্বে এক বিশাল মিছিল মিরপুরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। এতে যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক আতিক, যুব মহিলা লীগের ইসরাত জাহান নাসরিন আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুবুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আসাদুজ্জামান রাজু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম