নির্বাচন নিয়ে সরকার গরুর হাট জমাতে চেষ্টা করছে: গয়েশ্বর
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৩৮ পিএম
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার চেষ্টা করছে গাবতলীর মতো একটি গরুর হাট জমাতে। দর কষাকষির অফার, আসনের নিশ্চয়তা, সঙ্গে কাড়ি কাড়ি টাকা। আমার মনে হয় তারা গুছিয়ে উঠতে পারছেন না।
বৃহস্পতিবার গণঅধিকার পরিষদের ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) সভাপতি রেজা কিবরিয়ার সভাপতিত্বে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে দলীয়ভাবে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ফিলিস্তিনি মজলুম জনগণের জন্য উৎসর্গ করা হয়।
অনুষ্ঠানে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নির্বাচন নিয়ে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমেরিকা সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী নাকি কিছু কিছু জিনিস কেনার জন্য অনেক টাকা নিয়ে গেছেন কিন্তু তিনি কিনতে পারেননি। কিছু কিনতে না পেরে মাথা গরম করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অশ্রাব্য বক্তব্য দিচ্ছেন। মানুষ কখনো মানুষকে নিয়ে এমন বক্তব্য দিতে পারে না।’
বিএনপির ২৮ তারিখের সমাবেশে পুলিশের অনুমতির প্রসঙ্গে গয়েশ্বর বলেন, ‘রাজনৈতিক ফয়সালা করবে রাজনৈতিক দল, সরকার, সরকারের রাজনৈতিক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। সেটা বাকযুদ্ধের মধ্য দিয়েই হোক আর যেভাবেই হোক, সেটা হবে কিন্তু সরকার সিদ্ধান্ত দিবে না, পুলিশ সিদ্ধান্ত দিবে। সুতরাং গণতন্ত্র না থাকায় পুলিশতন্ত্র একটু বেশিই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।’
‘দেশে হিন্দুদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি ৮০ শতাংশের উপরে আওয়ামী লীগের দখলে’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সংসদে যারা এমপি, মন্ত্রী আছেন, তাদের শতকরা ৮০ জনের বাড়ি হিন্দু বাড়ি। অর্থাৎ হিন্দু বাড়ি দখল করে তারা বাড়ি করেছেন। হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের জুড়ি নেই। এটা আমাদের জরিপ করা আছে। জরিপ থেকে বলছি।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘হিন্দুদের তাড়াতে পারলে সম্পদ পাওয়া যায়, আর দেশে থাকলে ভোট পাওয়া যায়। হিন্দুরা যদি আপনাদের (বিরোধী দল) কাছ থেকে নিরাপত্তা পায়, তাহলে আওয়ামী লীগে ভোট দেবে না।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, রাজনৈতিক সৌজন্যবোধ তখনই থাকে, যখন গণতন্ত্র থাকবে। গণতন্ত্র যেখানে থাকে না সেখানে মানুষ বেপরোয়া হয়ে যায়।
ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। ডাক্তাররা বলেছেন তাকে জরুরিভাবে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়া দরকার; কিন্তু এই সরকার সেটা হতে দিচ্ছে না। খালেদা জিয়া যেন বেঁচে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনার পতন দেখে যেতে পারে। সবাই ২৮ তারিখের জন্য অপেক্ষা করছে। সরকারি দলের লোকেরা ভীত এবং আতঙ্কিত। তারা চিন্তা করছেন দেশ থেকে কখন পালাতে হবে। সরকারি লোকেরা কোথায় এবং কোন পথ দিয়ে পালাবেন সেগুলো চিন্তা করে রেখেছেন। আমরা ২৮ তারিখ বিএনপিসহ অন্যান্য দলকে সহযোগিতা করব।
তিনি আরও বলেন, যেদিন শেখ হাসিনার সরকার পতন হবে, সেদিন ঢাকার কোনো মিষ্টির দোকানো মিষ্টি খুঁজে পাওয়া যাবে না। মানুষ তখন বলবে, আমরা এই জালিম সরকার থেকে রক্ষা পেয়েছি। পুলিশ থেকে এখন অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করতে হবে এটাকে আমি অগণতান্ত্রিক মনে করি। এই হাসিনা সরকার গণতান্ত্রিক কোনো চিন্তা-ধারার মধ্যে পড়ে না। তিনি ক্ষমতায় আছেন মূলত চুরি করার জন্য। শেখ হাসিনার বেশিদিন টিকে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমাদের অর্থনীতির রিজার্ভের খুব দুরবস্থা যাচ্ছে। দিন দিন রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারির দিকে দেশের অর্থনীতি অচল হয়ে যাবে। আমাদের এখন মাত্র ১৬ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে। প্রত্যেক মাসে ১ বিলিয়ন করে কমে যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারির দিকে রিজার্ভ ১২ বিলিয়নের দিকে চলে যাবে। চীনের কাছে ২.৪ বিলিয়ন ডলার আসল এবং সুদ সহকারে দিয়ে দিতে হবে। তখন আমরা পাকিস্তান এবং শ্রীলংকার মতো হয়ে যাব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সদস্য সচিব ফারুক হাসান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) যুগ্ম আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, যুগ্ম সদস্য সচিব তারেক রহমান প্রমুখ।