বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পদোন্নতি দিয়েছেন খালেদা জিয়া: তথ্যমন্ত্রী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:১৫ পিএম
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পুনর্বাসন করেছেন খালেদা জিয়া। তাদের পদোন্নতি দিয়েছেন। তারপরও বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মহানুভবতা দেখাচ্ছেন, সেটি অনেক বেশি।
মঙ্গলবার দুপুরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সব কাজে খালেদা জিয়া প্রতিহিংসা দেখিয়েছেন। কিন্তু তার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহানুভবতা দেখিয়ে যাচ্ছেন, সেটি কি তারা কখনো করত? শুধু তাই নয়, বিএনপি এফবিআইয়ের এজেন্ড লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণের পরিকল্পনা করেছে। সেই চক্রান্ত ফাঁস হয়েছে এবং এফবিআইয়ের বিচার হচ্ছে। বেগম জিয়া টিউলিপের নাম দেখে চুক্তি পর্যন্ত বাতিল করেছে। কী রকম প্রতিহিংসা তার। সেই মানুষটির প্রতি প্রধানমন্ত্রী যে মহানুভবতা দেখাচ্ছেন সেটি অনেক বেশি বলে আমি মনে করি।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। সে কারণে তারা চান না নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপির অন্য কেউ নেতা হোক। অন্য কাউকে নেতা না বানানোর জন্যই খালেদা জিয়া বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে দিতে চান না।
বিএনপি জানিয়েছে তারা সরকার পতনের আন্দোলনে আছে এবং ঢাকা ঘেরাও করবে- এ বিষয়টি সরকার কীভাবে দেখছে?
জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেব না। দেশে আবার ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সাল তৈরি করবে? ঢাকা দুই কোটি মানুষের শহর, ফলে ঢাকা ঘেরাও করতে কোটি মানুষ প্রয়োজন হবে। আর ঢাকা শহরে আমরাও থাকি।
বিএনপি বলছে, সরকার আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যদি তারা মনে করে সরকার আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে, তাহলে তারা তো আদালতে যেতে পারে। আদালতের কাছে প্রশ্ন করতে পারে। আদালত সেটি পরিষ্কার করবে। খালেদা জিয়া একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। মামলাগুলো উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। সেক্ষেত্রে তারা তো আদালতে গিয়ে ব্যাখ্যা চাইতে পারে।
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতাকে সিএমএইচ রোগী দেখতে সেনানিবাসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হেঁটে যেতে হয়েছিল। খালেদা জিয়া সেই মানুষ যে নিজের জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে ১৫ আগস্ট করেছেন। তার জন্মদিন ৪-৫টি কোনোটায় ১৫ আগস্ট ছিল না। তার বিয়ের রেজিস্ট্রারে একটি, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একটি, পাসপোর্টে একটি, পরীক্ষার ফরম ফিলাপে একটি এবং সর্বশেষ করোনা হওয়ার পর আরও একটি জন্ম তারিখ দেখা গেছে। কোনোটাতেই ১৫ আগস্ট ছিল না।
খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিল তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা করেছিল। আমাদের সরকার তার বিরুদ্ধে তো একটি মামলাও করেনি। যেসব মামলা হয়েছে সেগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। সেই মামলায় তিনি সাজা খাটছেন এবং সেই মামলার বিচার হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। গত ১৫ বছরে তাদের কোনো মিটিংয়ে একটি পটকা ফুটেছে? তারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেছে। আজ তারা নানা ধরনের ব্যাখ্যা দিচ্ছে, কথা বলছে। অবশ্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিবের পদ রক্ষা করার জন্য কথা বলতে হয়। এভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করা সমীচীন নয়।
কেয়াবের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিদেশি চ্যানেলগুলোর ক্লিনফিড (বিজ্ঞাপনমুক্ত) চালু হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে যে ৫০০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন চলে যেতো সেটা বন্ধ হয়েছে। কিছু ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার নেটের মাধ্যমে বিদেশি চ্যানেলে বাংলাদেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন এখনো প্রচার করছে, সেটা বন্ধ করতে হবে। এ পদক্ষেপ দেশের অর্থনীতি ও মিডিয়া শিল্পের জন্য ভালো হয়েছে। ক্লিনফিডের উপকার শুধু টেলিভিশন শিল্প পাচ্ছে তা নয়, পুরো মিডিয়া শিল্প এটা পাচ্ছে। আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, কিছু আইএসপি প্রতিষ্ঠান যারা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, তারা কিন্তু ক্লিনফিড চালাচ্ছে না। তারা তাদের মতো ইনারনেটের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। সেটা নিয়ে কাজ চলছে।
সম্প্রতি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা দিয়েছে কোনো বিবাহিত ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেলে থাকতে পারবে না এবং বিআরটিসি বাসের নিচতলায় মেয়েরা এবং উপরে ছেলেরা বসবে- এ বিষয়টি কিভাবে দেখছেন? জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা কাগজে নিউজটা দেখেছি। আমি আশ্চর্য হয়েছি, এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় নিতে পারে। বিয়ে করলে ছাত্রীরা হলে থাকতে পারবে না এ রকম সিদ্ধান্ত আমার দৃষ্টিতে একেবারেই অযৌক্তিক। এ রকম সিদ্ধান্ত কিভাবে নেয়? এটা হতেই পারে না।
এ যুগে ছাত্রীরা একতলায় বসবে আর ছাত্ররা দোতলায় বসবে- এ বিষয়টি জানা ছিল না। এটিও অবাস্তব, এটা সৌদি আরব নয়, বাংলাদেশ। এখন সৌদি আরবের মেয়েরা গাড়ি চালাচ্ছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত কিভাবে হয়, কার মাথা থেকে আসে এবং কর্তৃপক্ষ কিভাবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়- এটি আমার বোধগম্য নয়। তবে আমি বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীর নজরে আনব।