দ্বন্দ্ব-বিভাজন মিটিয়ে দলকে আরও শক্তিশালী করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বিএনপি। এরই অংশ হিসাবে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কৃত দুই শতাধিক নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তারা ভুল স্বীকার করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছেন।
সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃতদের মধ্যে অধিকাংশই সিটি করপেরেশনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করে অংশ নিয়েছিলেন। দায়িত্বশীল নেতারা জানান, সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হয়েছে। আবার জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রও থেমে নেই।
এমন পরিস্থিতিতে বৃহত্তর স্বার্থে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের চিহ্নিত করে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য সিনিয়র নেতারা হাইকমান্ডকে পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ প্রত্যাহার করা না হলে এসব নেতা সক্রিয় হতে পারছেন না।
বহিষ্কৃত অনেক নেতা আছেন, যারা স্থানীয়ভাবে ব্যাপক জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী, তাদের দলে ফিরিয়ে আনা হলে আন্দোলন আরও গতিশীল হবে।
বিএনপির নেতারা জানান, চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপে টানা সমাবেশ ও রোডমার্চ কর্মসূচি চলবে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত। দাবি আদায়ে কর্মসূচি সফলে মহানগরকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জসহ গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে অংশ নেওয়া শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। এদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি নেতা স্থানীয় পর্যায়ে অনেক জনপ্রিয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিতে ছিলেন।
আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা ছিল তাদের। মামলায়ও জর্জরিত। এসব নেতাকে দলে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে স্থানীয় নেতারাও কেন্দ্রকে চাপ দিচ্ছেন। কারণ এবার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যেও কয়েকজনকে বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি, কুমিল্লার সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুসহ কয়েকজনকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। তারাও স্থানীয় রাজনীতিতে অনেক প্রভাবশালী নেতা।যাদের ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের মধ্যে নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও মনিরুল হক সাক্কুর নাম জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে।
দল থেকে অব্যাহতির পরও নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনায় সমাবেশসহ বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে অংশ নিচ্ছেন।
মঞ্জু যুগান্তরকে বলেন, দলে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য এ পর্যন্ত চারবার আবেদন করেছি। কেন্দ্র থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আমি শহিদ জিয়ার আদর্শে ও খালেদা জিয়ার স্নেহে বেড়ে ওঠা রাজনৈতিক কর্মী। রাজনীতির ৪৫ বছরের শত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একজন বিশ্বস্ত নেতা হিসাবে বিএনপি ছেড়ে অন্য কোনো দলে যোগদানের প্রশ্নই আসে না। বিএনপিই আমার ঠিকানা। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসা, তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামীতে জনগণের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন সফল করতে রাজপথের কর্মী হিসাবে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছি।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমরা মনে করি যারা পরীক্ষিত, আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো ভুল করেছে, তারা যদি এখন সংশোধিত হয়ে আসে এতে করে দলের শক্তি ভারসাম্যের সৃষ্টি হয়। এজন্য তাদের আগ্রহের ভিত্তিতে দলেরও অগ্রসর হওয়া উচিত।