বিতর্কিত নেতাদের ফেরাল হেফাজত, নেই মামুনুল হক
আবু তালেব, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৩, ০৯:১৬ পিএম
ফাইল ছবি
আলোচিত-সমালোচিত এবং বির্তকিতদের পদায়ন করে অবশেষে কার্যকরী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদ ঘোষণা করেছে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন বলে দাবিদার হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমানের নেতৃত্বে সাব-কমিটির সদস্যরা সংগঠনটির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর কাছে নতুন করে কমিটির পদায়নসহ ২১১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি ও ৫৩ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদের তালিকা পেশ করেন। পরে তিনি এ কমিটির অনুমোদন দেন।
যদিও পদায়ন করা নেতাদের অনেককেই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ২০২১ সালের ৭ জুন গঠিত সংগঠটির কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পূর্বসূরিদের ‘সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের’ সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি এড়িয়ে আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত’ এমন সময় ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে তডিঘড়ি করে এ কমিটির ঘোষণা নিয়ে হেফাজত নেতাদের মধ্যে চলছে কানাঘুষা।
এর আগে গত ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির এক বৈঠকে বাদ পড়া এসব আলোচিত-সমালোচিত এবং বির্তকিত নেতাদের ফেরাতে বর্তমান কমিটির মহাসচিব সাজিদুর রহমানকে প্রধান করে ১২ সদস্য বিশিষ্ট একটি সাব-কমিটি গঠন করে হয়েছিল।
এ সাব-কমিটি পূর্বের কমিটি এবং বর্তমান কমিটির সমন্বয়ে একটি খসড়া কমিটির তালিকা প্রণয়ন করে। বৃহস্পতিবার হেফাজত আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ৫৩ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ এবং ২১১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির উভয় তালিকাকে অনুমোদন করেন।
এ সময় সাবকমিটির সদস্যদের মধ্যে থেকে উপস্থিত ছিলেন মুফতি জসীমুদ্দীন, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী, মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী, মাওলানা মীর ইদরীস, মাওলানা কেফায়াতুল্লাহ আজহারী প্রমুখ।
বৈঠকে হেফাজত আমির মাওলানা মামুনুল হকসহ কারাবন্দী আলেমদের দ্রুত মুক্তি, ২০১৩ সাল থেকে হেফাজত নেতাদের নামে হওয়া সব মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।
এছাড়া আমিরে হেফাজত জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত নেতাদের মামলার হাজিরাকেন্দ্রিক হয়রানির ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তা বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে আহবান জানান।
কমিটিতে স্থান পাওয়া আলোচিত-সমালোচিত এবং বির্তকিতরা হলেন- সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইযুবী, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির ও মুফতি হারুন ইজহার, সহকারী মহাসচিব মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুফতি বশিরুল্লাহ, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ মাস্টার এবং সহকারী ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক মাওলানা জুনায়েদ বিন ইয়াহইয়াসহ অনেকেই।
তবে হেফাজতের কমিটি সংশ্লিষ্ট প্রকাশিত তালিকায় ২০২ জনের নাম উল্লেখ থাকলেও বাদ পড়া আরও বিতর্কিতদের সংযুক্ত করার সুযোগ রেখে ২১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে সংঘাতের পর প্রয়াত আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি বিলুপ্ত করেছিলেন। এরপর নতুন আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল।
দেড় মাসের মাথায় আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির পদে রেখে ৩৩ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আলোচিত মাওলানা মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ যারা সহিংসতার মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন তাদের রাখা হয়নি।
ওই সময় সংগঠনটির মহাসচিব প্রয়াত নুরুল ইসলাম জিহাদি বলেন, হেফাজতের নতুন কমিটি ‘সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের’ সঙ্গে যুক্ত থাকবে।
কোনো চাপের কারণে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, চাপের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কেউ আমাদের চাপ দেয়নি। যদিও পরবর্তী সময়ে হেফাজতের কয়েকজন শীর্ষ নেতা কমিটি বিলুপ্তির পেছনে সরকারি চাপ ছিল বলে অভিযোগ করেন।
এদিকে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা অরাজনৈতিক সংগঠন দাবিদার হেফাজতে ইসলামের সদ্য ঘোষিত কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো ভাগিয়ে নেয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
তারা বলেছেন, হেফাজতকে বির্তকিত করার দায়ে বিগত সময়ে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়া এসব নেতারা ‘রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত’ এমন সময় ফায়দা লুঠতে অনেকটা কায়দা করে কমিটিতে ফের আসীন হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদ্য ঘোষিত কমিটির এক নেতা যুগান্তরকে বলেন, সামনে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো শীর্ষ নেতাদের চাপে বির্তকিতদের রেখে তড়িঘড়ি করে নতুন কমিটির ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। বর্তমান কমিটিতে আসীন হওয়া মুষ্টিমেয় কেন্দ্রীয় নেতা বাদে বাকিদের হেফাজত নেতাকর্মীরা কতটুকু গ্রহণ করবে তা বোধগম্য নয়।
তাছাড়া ১৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গঠিত তাওহিদী জনতার কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করা অরাজনৈতিক সংগঠন এসব বিতর্কিত নেতাদের কারণে নানা কর্মকাণ্ডে আগামীতে সাধারণ মানুষের সমর্থন হারাতে পারে বলেও আশঙ্কা করেছেন ওই কেন্দ্রীয় নেতা।