হেফাজতের নতুন কমিটিতে পদ পেতে মরিয়া রাজনৈতিক নেতারা
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৩, ১০:৩৭ পিএম
কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ফের যুক্ত হচ্ছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও সমালোচনার কারণে বাদ পড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। ইতোমধ্যে বিলুপ্ত কমিটির আলোচিত নেতাদের ফেরাতে তাদের পদ-পদবিও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে রদবদল আসতে পারে। ফলে দুঃসময়ে সংগঠনকে আগলে রাখা অনেক দায়িত্বশীলকে বর্তমান পদ ছেড়ে দিতে হবে।
জানা গেছে, আগামী সেপ্টেম্বরে এ তালিকা প্রকাশ করবে হেফাজত। তবে এ নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাকর্মীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, বিগত ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর গঠিত ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। চলতি বছরের ৫ আগস্ট বর্তমান আমিরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির এক বৈঠকে বিলুপ্ত কমিটির সব সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া বিলুপ্ত কমিটির সদস্যদের ফেরাতে সংগঠনের মহাসচিবকে আহ্বায়ক করে ১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি সাব-কমিটিও গঠন করা হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন ইসলামি রাজনৈতিক দলের পদধারী নেতারা জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক মাঠে মূল্যায়িত হওয়ার আশায় কেন্দ্রীয় কমিটির পদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
এর মধ্যে গত ১৬ আগস্ট রাজধানীর ফুলবাড়িয়া জামে মসজিদে মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমানের সভাপত্বিতে এ বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বিলুপ্ত কমিটির আলোচিত-সমালোচিত নেতাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ফেরাতে হেফাজতের দুঃসময়ের নেতৃত্বদানকারী নেতাদের বর্তমান পদ থেকে সরিয়ে পদ-পদবি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে আলোচিত-সমালোচিত বিলুপ্ত কমিটির নেতারা গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে বর্তমান কেন্দ্র্রীয় কমিটিকে অদৃশ্য চাপে রেখে পদ-পদবি চূড়ান্ত করেছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, আগামী মাসে বিলুপ্ত কমিটির সদ্যসরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে ফিরছেন। তবে কেন্দ্র্রীয় কমিটিকে অদৃশ্য চাপে রেখে পদ-পদবি চূড়ান্ত করার কারণে হেফাজতের দুঃসময়ের নেতৃত্বদানকারী ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন নেতারা হতাশ। এমনকি তাদের বর্তমান পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এতে আলোচিত-সমালোচিত নেতারা কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলে হেফাজত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিতে পারে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, হেফাজতের দু:সময়ে যারা নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও সংগঠনকে আগলে রেখেছিল এখন তাদের অনেককেই সরানোর আভাস দেওয়া হয়েছে। তাহলে তাদের ত্যাগের কি মূল্যায়ন করা হলো। তাছাড়া যাদের কারণে হেফাজত সমালোচিত হয়েছে তাদের সবাইকে এখন আগের অবস্থানে ফেরানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া দরকার।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে সংঘাতের পর অদৃশ্য চাপে প্রয়াত আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এরপর নতুন আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
নানা ঘটনার মুখে কমিটি বিলুপ্তির দেড় মাসের মধ্যে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করে হেফাজতে ইসলাম। ওই কমিটিতে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির পদে রেখে ৩৩ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
২০২১ সালের ৭ জুন ঢাকার এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী কমিটি ঘোষণা করেন।
এতে বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আলোচিত মাওলানা মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ যারা সহিংসতার মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন তাদের কমিটিতে রাখা হয়নি।
ওই সময় প্রয়াত নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, হেফাজতের নতুন কমিটি ‘সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের’ সঙ্গে যুক্ত থাকবে। পাশাপাশি বিতর্কিত ও সমালোচিতদের বাদ রেখে কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল কোনো চাপের কারণে আগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, চাপের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কেউ আমাদের চাপ দেয়নি। যদিও পরবর্তী সময়ে হেফাজতের কয়েকজন শীর্ষ নেতা ওই কমিটি বিলুপ্তির বিষয়টিকে সরকারি চাপ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
এ ব্যাপারে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমানকে বেশ কয়েকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
সাব-কমিটির সদস্য ও হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমির এবং হাটহাজারী মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক মুফতি জসীমুদ্দীন বলেন, সম্প্রতি ঢাকায় সাব-কমিটির বৈঠকে উপস্থিত কমিটির সদস্যরা বিলুপ্ত কমিটির অনেক নেতার নাম পদ-পদবির বিষয়ে প্রস্তাব করেছে। আমরা ওই প্রস্তাবিত নেতাদের নাম এবং পদবি যাচাই-বাছাই করে কেন্দ্রীয় কমিটিতে উপস্থাপন করব। এরপর কেন্দ্রীয় কমিটি যা সিদ্ধান্ত নিবে তা আপনাদের জানানো হবে।
এছাড়া আলোচিত-সমালোচিত ইসলামী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে ফিরলে হেফাজত নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।