ফয়সালা হবে রাজপথেই, ভালো চাইলে এখনি পদত্যাগ করুন: ফখরুল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৩, ১০:১৮ পিএম
ছবি-যুগান্তর
সরকারের পদত্যাগে একদফা দাবিতে এবার ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে টানা ৫ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। শনিবার বেলা ১১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হবে।
শুক্রবার নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভালো চাইলে এখনই পদত্যাগ করুন। একদফা মেনে নিন। না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে। দেশের মানুষ আজ জেগে উঠেছে।
সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি সমমনা ৩৬টি দল। তারা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করে এ ঘোষণা দেন। আর বিএনপি রাজধানীর চার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। স্থানগুলো হচ্ছে-রাজধানীর উত্তরা বিএনএস সেন্টারের উলটো দিকে, গাবতলী এসএ খালেক বাসস্টেশনের সামনে, নয়াবাজার বিএনপি অফিসের সামনে এবং যাত্রাবাড়ীর চট্টগ্রাম রোড দনিয়া কলেজসংলগ্ন।
সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীতে মহাসমাবেশে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা যোগ দেন। বৃহস্পতিবার এ কর্মসূচি হওয়ার কথা থাকলেও অনুমতি না পাওয়ায় একদিন পেছানো হয়। সমাবেশে আসার পথে অনেক নেতাকর্মীকে বাধা ও গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা সবাই এ দেশের মঙ্গল চান, আপনারা এই দেশের কল্যাণ চান। আপনারা শপথ নিয়েছেন যে, এ দেশের স্বার্থে সংবিধান অনুযায়ী কাজ করবেন। আমরাও আপনাদের কাছে সেটাই চাই। আপনারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই সমাবেশ থেকে গ্রেফতার বন্ধ করুন, বেআইনি গ্রেফতার বন্ধ করুন, হয়রানি বন্ধ করুন এবং যারা কারাগারে আছে তাদের ছেড়ে দিন।
তিনি বলেন, আমাদের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। প্রশাসন এ কর্মসূচি পালন করতে দিয়ে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে। সরকার সহযোগিতা করবে। গত দুদিনে কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এভাবে গণগ্রেফতার করে লাভ হবে না। গণতান্ত্রিক আন্দোলন থামানো যাবে না। পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সরকারের অন্যায় নির্দেশ মানবেন না।
সরকার নির্বাচনব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সম্প্রতি ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ৫ শতাংশ ভোটও পড়েনি। নেত্রকোনায় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই ছিল না। মানুষ এখন আর ভোট দিতে যায় না। তাই পুলিশ, প্রশাসনসহ রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যেনতেনভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় আসতে চায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে থাকা দলও ঘোষণা দিয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে যাবে না। বিদেশিরাও বলেছে, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। মার্কিন ১৩ কংগ্রেসম্যান সুষ্ঠু নির্বাচনে জাতিসংঘে চিঠি দিয়েছে। তাই এদের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে। দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ।
নতুন কর্মসূচি ঘোষণার আগে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের জন্য চমক আছে। এবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অডিওতে বক্তব্য রাখবেন। এ সময় নেতাকর্মীরা তালি দিয়ে স্বাগত জানান। পরে তারেক রহমান লন্ডন থেকে সরাসরি অডিওতে কয়েক মিনিট বক্তব্য দেন।
সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এরা লুটপাট করে দেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করে দিয়েছে। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। মানুষ স্বাভাবিক জীবন ধারণ করতে পারছে না। তার অভিযোগ, বিচারব্যবস্থাও দলীয়করণ করেছে। মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা হলেও ঢাকা ছাড়া দেশের কোথাও বিদ্যুৎ থাকে না। কুইক রেন্টালসহ মেগা প্রজেক্টের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার তথ্য তুলে ধরে বলেন, এ সরকারের আমলে দেশ থেকে ১০০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
দাবি আদায় করে ঘরে ফেরার ঘোষণা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে আন্দোলনে থাকা দলগুলো নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে। এরপর আমাদের ঘোষিত ৩১ দফার ভিত্তিতে পরিচালনা করা হবে দেশ। যুবকদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বেকারদের ভাতা এবং উচ্চ শিক্ষার্থে বৃত্তির ব্যবস্থা করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সঞ্চালনায় মহাসমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, হারুনুর রশীদ, আবদুস সালাম আজাদ, মাহবুবে রহমান শামীম, আসাদুল হাবিব দুলু, সাখাওয়াত হোসেন জীবন, মোস্তাক মিয়া, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিন, শামা ওবায়েদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ছাড়াও যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, তাঁতীদলের আবুল কালাম আজাদ, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মহানগর উত্তরের আমিনুল হক, দক্ষিণের তানভীর আহমেদ রবিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মহাসমাবেশে মির্জা আব্বাস বলেন, এ সরকার গতকাল রাত থেকে বিভিন্ন হোটেল থেকে, রাস্তা থেকে গ্রেফতার করেছে। একসাগর পানি থেকে এক মগ পানি গেলে সাগরের কিছু আসে যায় না। আমাদের নির্দিষ্ট স্থানে সমাবেশ করতে দিতে চায় না। তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে পারে আমরা করলে নাকি সমস্যা! আজ জনগণ রায় দিয়েছে বিএনপি আগামীতে যে স্থানে সমাবেশ করতে চায়, সে জায়গায়ই করবে। আর কোনো অনুমতি নয়, জনগণই অনুমতি দিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, এ সরকারের আর সময় নেই। নেতাকর্মীদের আটক করে রেখেছেন। জেলখানায় যারা আছেন তারা অনেক কষ্টে আছেন। আমি মানবাধিকার কর্মীদের অনুরোধ করব, একবার জেলখানায় দেখে আসুন তারা কী রকম কষ্ট করছে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, লম্পট লুটেরা, ভুমিদস্যুরা আজ বলছে আগামীতে দরকার শেখ হাসিনার সরকার। যারা গণতন্ত্রকামী, যাদের মাঝে দেশপ্রেম আছে তারা এ সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তিনি বলেন, এ দেশ ভারত চীন কিংবা রাশিয়ার নয়। এ দেশের মালিক ১৮ কোটি জনগণ।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজকের এই মহাসমাবেশের পর এই অবৈধ সরকারের আর বৈধতা নেই। এ সরকারের অবস্থান দেশেও নেই, বিদেশেও নেই। এদের ডানে-বামে কেউ নেই। আজ সারা পৃথিবী বাংলাদেশের একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু সরকার বেহায়ার মতো ক্ষমতা ধরে রেখেছে। এরা আবারও একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। কিন্তু এ দেশে তা আর হবে না, বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।
মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ সারা দেশের মানুষকে অনাস্থা দিয়েছে। এরা আমাদের সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতে অনেক বাধা দিয়েছে। পারেনি। ঢাকায় যাতে আমরা সমাবেশ করতে না পারি সেজন্য অনেক ষড়যন্ত্র করেছে; কিন্তু জনগণের শক্তির কাছে তারা মাথা নত করেছে।
রিজভী আহমেদ বলেন, একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে গোটা জাতি আজ এক হয়েছে। বিশ্ববিবেক আজ অবিচারের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে।